Erosion

Erosion: বাড়ির পাশে দ্বারকেশ্বর

ভাঙনের মুখে সদ্য তৈরি স্নানঘাট। সদ্য রোয়া আমনের বীজ ধানের জমির কাছে এগিয়ে এসেছে নদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২১ ০৬:০৪
Share:

বৃষ্টিতে ফুলে ওঠা নদী ভাঙছে পাড়। রেওড়া গ্রামে। নিজস্ব চিত্র ।

পাড়ের মাটি ধসে পড়ছে দ্বারকেশ্বর নদের জলে। আর বুক কেঁপে ওঠে পাড়ের বাসিন্দাদের। এ ভাবেই দ্বারকেশ্বর নদ বছরের পরে বছর একটু একটু করে পাড় খেতে খেতে এগিয়ে আসছে তাঁদের দুয়ারের দিকে। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ব্লকের দ্বারিকা-গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতের বনমালিপুর আর রেওড়া গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের বিঘার পরে বিঘা জমি হারিয়ে গিয়েছে দ্বারকেশ্বরের ভাঙনে।

Advertisement

সম্প্রতি রেওড়া ও বনমালিপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাটির বাঁধ ধসে গিয়েছে। ভাঙনের মুখে সদ্য তৈরি স্নানঘাট। সদ্য রোয়া আমনের বীজ ধানের জমির কাছে এগিয়ে এসেছে নদী। রেওড়া গ্রামের রবি বাউরি, বনমালিপুরের অপূর্ব কুণ্ডু বলেন, ‘‘শস্য বিমার আবেদনপত্র তুলে এনেছিলাম। জমি চলে গেল ভাঙনে। কী কাজে লাগবে বিমার কাগজ?’’

বাসিন্দারা জানান, জমি উর্বর হওয়ায় খেটেখুটে চাষ করে সারা বছর ফসলের উপরে নির্ভর করে কোনও ররকমে তাঁদের দিন গুজরান হয়। বিষ্ণুপুর ব্লক কৃষি দফতর থেকেও এলাকার চাষিরা নানা রকম সুবিধা নিয়মিত পান। কিন্তু ভাঙনের জেরে জমি নদের গর্ভে চলে যাচ্ছে। অবস্থাপন্ন কৃষকও দিনমজুর হতে বাধ্য হচ্ছেন। রেওড়া গ্রামের অর্চনা বাউরি, কল্পনা বাউরিরা বলেন, ‘‘দ্বারকেশ্বর এগিয়ে আসছে, আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকেছে। জমি যাচ্ছে। এ বার আমাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হতে হবে। জমি না থাকলে, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা নেব কী করে?’’

Advertisement

বাসিন্দাদের একাংশ ভাঙনের জন্য নদের অন্য পাড়ে যন্ত্রে বালি কাটার কারবারের দিকে আঙুল তুলেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা বৈদ্যনাথ পাল, রবি বাউরির অভিযোগ, ‘‘বছর দশেক আগেও নিশ্চিন্তে চাষ করতাম। কিন্তু নদের উল্টো পাড়ে ধরাপাট, পেঁচাকুড়া, অযোধ্যা গ্রামের দিকে অপরিকল্পিত ভাবে যন্ত্রে বালি তোলা শুরু হওয়ার পরে, দ্বারকেশ্বরের গতিপথ ঘুরে যায়। বর্ষাকালে ফুলে ওঠা দ্বারকেশ্বর এ পাড়ের রেওড়া, বনমালিপুরের বাসিন্দাদের সর্বনাশ করে চলেছে।’’ বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দেবনাথ বাউরিও অভিযোগ করেন, ‘‘প্রশাসন অভিযান চালালেও, তার আগেই নদী থেকে যন্ত্র সরিয়ে ফেলা হয়। এতে নদীর ক্ষতি হচ্ছে।’’ যদিও ওই এলাকার বালি খাদানের ইজারাদারদের দাবি, যন্ত্রে বালি কাটার অভিযোগ ঠিক নয়।

দ্বারিকা-গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সঞ্জয় নন্দী বলেন, ‘‘আমি নিজেই ওই এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছি। নদী পাড়ের ভাঙন রোধ করার দাবিতে একাধিক বার মহকুমা ও জেলা প্রশাসনের কাছে দরবার করেছি। লাভ হয়নি।’’ ওই এলাকা থেকে নির্বাচিত বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্যা উজ্জ্বলা কবিরাজের দাবি, ‘‘রেওড়া এবং বনমালিপুর গ্রামের পাশে দ্বারকেশ্বর নদের ৯০০ মিটার পাড় বোল্ডার দিয়ে বাঁধানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতিও বলেন, ‘‘ভাঙন রোধের জন্য ওই এলাকায় ভেটিভার ঘাস লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement