প্রতীকী ছবি
ছেলে হুগলির কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মিশনের বাংলার শিক্ষক। এক দিনের ছুটি নিয়ে মঙ্গলবার বাড়িতে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার ফিরে স্কুল করবেন। ঝালদা স্টেশন থেকে ট্রেন ধরার কথা ছিল। ভোর ৪টে নাগাদ বাবা-ছেলে বেরিয়েছিলেন মোটরবাইক নিয়ে। বাড়ি থেকে অল্প কিছুটা এগোতেই পথ আটকাল দাঁতাল। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার ঝালদার ভাকুয়াডি গ্রামের কাছে, ছেলের সামনেই শুঁড়ে পেঁচিয়ে বৃদ্ধ বাবা মথুর লোহারকে (৬০) থেঁতলে মারল হাতিটি।
ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি এবং ঝালদার বিভিন্ন এলাকায় হাতির উপদ্রব লেগে রয়েছে। বছরের এই সময়টায় ধান পাকে। দলমার হাতির দল আসে পুরুলিয়ার বিভিন্ন জঙ্গল এলাকায়। এ বছর সেই উপদ্রব অন্য বারের থেকে কিছুটা বেশি বলে মনে করছেন বন দফতরের কর্মীদের একাংশ।
গত আর্থিক বছরে পুরুলিয়ায় হাতির হানায় কোনও মৃত্যু হয়নি বলে বন দফতর সূত্রের দাবি। এ বছর এ পর্যন্ত হাতির হানায় প্রাণ গিয়েছে দু’জনের। গত ১১ ডিসেম্বর বলরামপুরের পাড়দ্দা গ্রামের কাছে দাঁতাল পিষে মেরেছে এক জনকে। বন দফতর সূত্রের দাবি, এ বছর ঝাড়খণ্ডে ফেরানোর পরে, সেখানে তাড়া খেয়ে পুরুলিয়ায় ফিরে আসছে হাতিরা।
ঝালদায় এখন ঝাড়খণ্ড থেকে এসে ঘাঁটি গাড়া মোট হাতির সংখ্যা ২২টি। গত সপ্তাহ দু’য়েকে তিনটি দলে হাতিগুলি ঝালদা আর ঝাড়খণ্ডের মধ্যে আসা-যাওয়া করছে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে। নদীর পাড়েই পুস্তি পঞ্চায়েতের ভাকুয়াডি গ্রাম। সেখানে থাকতেন মথুর লোহার। পেশায় আনাজ চাষি মথুরবাবুর ছেলে সুভাষ লোহার কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মিশনে বাংলার শিক্ষক।
গ্রাম থেকে ঝালদা স্টেশন প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে। এ দিন ভোরে বেরিয়েছিলেন মথুরবাবুরা। সুভাষবাবু মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন। গ্রাম থেকে পাকা রাস্তা গিয়ে পড়েছে ঝালদা-বাঘমুণ্ডি বড় রাস্তায়। তাতে ওঠার আগে, বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার যেতে না যেতেই একটি পুকুরের পাড়ে তাঁদের রাস্তা আটকায় দাঁতালটি।
চেষ্টা করেও তাড়াহুড়োয় মোটরবাইক ঘোরাতে পারেননি সুভাষবাবু। বাবা ও ছেলে ছুটতে থাকেন। ওই রাস্তার ধারে বেশ দূরে দূরে জনবসতি। যে পুকুরের সামনে দাঁতালটি ছিল তার চার দিকে চাষজমি। মাঠা-বড়টাঁড় এলাকার এক ব্যক্তি চাষের কাজের জন্যই কয়েক বছর হল পুকুরের থেকে একটু দূরে বাড়ি করে উঠেছেন। সেই বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন সুভাষবাবুরা।
কিন্তু ছেলের হাত থেকে মথুরবাবুকে ছাড়িয়ে শুঁড়ে জড়িয়ে পিষে মারে হাতিটি। ওই বাড়ির মালিক সনাতন মাহাতো বলেন, ‘‘আমাদের টিনের দরজা। হুড়মুড় করে আগল ভেঙে ঢুকে পড়েছিলেন ভদ্রলোক। আমাদেরও ঘুম ভেঙে যায়। এর আগেও হাতির থেকে বাঁচতে কেউ কেউ আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু এ দিন চোখের সামনে বৃদ্ধ মানুষটাকে পিষে মারতে দেখলাম হাতিকে।’’
সুভাষবাবু বাড়ির ভিতরে ঢোকার মুখে তাঁর হাত থেকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে মথুরবাবুকে তুলে নেয় হাতিটি। সনাতনবাবুরা সবাই মিলে ছাদে চলে যান। বৃদ্ধকে থেঁতলে মারার পরে, বেশ কিছুক্ষণ নীচের টিনের দরজায় ধাক্কা দিয়ে ফিরে যায় দাঁতালটি।
খবর পেয়ে সাত সকালে এলাকায় হাজির হন বনকর্মীরা। যান পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, বিডিও, বন দফতরের ঝালদা রেঞ্জ আধিকারিক। যায় ঝালদা থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধার করতে করতে প্রায় দুপুর ১টা বেজে যায়। ডিএফও (পুরুলিয়া) রামপ্রসাদ বাদনা বলেন, ‘‘হাতিগুলিকে ঝাড়খণ্ডে ফেরানোর চেষ্টা সব সময় করে চলেছেন বন কর্মীরা। ওই পরিবারটি সরকারি নিয়ম মতো ক্ষতিপূরণ যাতে পায়, সেটা আমরা দেখছি।’’