সুস্থ হোক অতিথি, চায় পিলখানা

শম্ভু, কাবেরী, শিলাবতীর পরিবারে এখন নতুন অতিথিকে নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। তিন কুনকি হাতির সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুরের বাসুদেবপুর বিট অফিসে যোগ দিয়েছে দক্ষিণ বাঁকুড়ার বড়দি পাহাড়ের জঙ্গলে দলছুট হয়ে যাওয়া অসুস্থ খুদে হস্তিশাবক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৪৭
Share:

বাসুদেবপুরের পিলখানায় হস্তিশাবকের পরিচর্যা।—শুভ্র মিত্র

শম্ভু, কাবেরী, শিলাবতীর পরিবারে এখন নতুন অতিথিকে নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। তিন কুনকি হাতির সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুরের বাসুদেবপুর বিট অফিসে যোগ দিয়েছে দক্ষিণ বাঁকুড়ার বড়দি পাহাড়ের জঙ্গলে দলছুট হয়ে যাওয়া অসুস্থ খুদে হস্তিশাবক। শুঁড় বাড়িয়ে কুনকিরা তাকে সে দিনই কাছে টেনে নেয়। সদ্য মায়ের কাছ থেকে দূরে চলে আসা খুদেও তাতে সাড়া দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড দেখতে বনকর্মীরা তো বটেই, স্থানীয় বাসিন্দারাও পিলখানায় ভিড় জমালেন।

Advertisement

কুনকিদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মাহুত দীনবন্ধু বর্মন বলেন, ‘‘ওদের তিনজনের মধ্যে শিলাবতীর মধ্যেই স্নেহ-মমতা একটু বেশি। বুধবার শিলাবতীই ট্রাক থেকে খুদেটাকে নামিয়ে আনে। খুদেটাও দেখলাম ওকে মা ভেবে পিছনে টুক টুক করে পিলখানায় ঢুকে পড়ল।’’ কুনকিদের রাখার জন্য খড় ও শালখুঁটি দিয়ে দু’টি ছাউনি করা হয়েছে। তারই নাম পিলখানা। রাতে একটি ছাউনির নীচে শিশু হাতিটিকে রাখা হয়। কিছুটা দূরে অন্য ছাউনির নীচে তিনটি কুনকি ছিল। মাহুতেরা জানাচ্ছেন, রাতে ঠান্ডায় মাঝে মধ্যেই মাস পাঁচেকের হস্তিশাবকটি কাঁপছিল। তাঁরাই তখন খড় জ্বেলে তার শরীর গরম করানোর ব্যবস্থা করেন। কখনও ফিডিং বোতলে, কখনও বা মুখে পাইপ ঢুকিয়ে ফানেলে দুধ ঢেলে তাকে খাওয়াচ্ছেন।

সকালে সূর্য উঠতেই শিলাবতী খুদের কাছে যাওয়ার জন্য পায়ের শিকলে ঘনঘন টান দিয়েছে। যদিও মাহুতেরা জানাচ্ছেন, বাচ্চা হাতিটি খুবই অসুস্থ। তাই ওর কাছে কুনকিদের ভিড়তে দেওয়া হচ্ছে না। এ দিন বিষ্ণুপুর ব্লক প্রাণী সম্পদ আধিকারিক প্রসেনজিৎ পাল হস্তি শাবকটিকে দেখতে এসেছিলেন। পরীক্ষার পরে তিনি বলেন, ‘‘ওর সামনের ডান পায়ে গুরুতর চোট লেগেছে। মনে করা হচ্ছে, চোটটা দিন পনেরো আগেকার। হাড় ভেঙেছে বলে মনে হচ্ছে। সুস্থ করে তোলা খুব কঠিন।’’ তিনি জানান, ওর পরবর্তী চিকিৎসা-পর্ব নিয়ে আজ শুক্রবার বনদফতরের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। বিষ্ণুপুরের রেঞ্জ আধিকারিক শ্যামসুন্দর কর শর্মা বলেন, ‘‘বাচ্চাটাকে সুস্থ করে তোলাই এখন আমাদের প্রধান কাজ। সবাই মিলে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। দেখা যাক কী হয়।’’

Advertisement

দিনভর খুদের সেবায় লেগেছিলেন অপু রায় , রবিউল হক। তাঁরা বাঁধাকপির ভিতরের নরম পাতা, শশা, কচি লাউ— এ সব ওর মুখে ধরছে। খবর পেয়ে বিষ্ণুপুরের হোটেল থেকে গাড়ি ভাড়া করে বাসুদেবপুরে চলে এসেছিলেন কলকাতার গোলপার্কের চয়ন মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘কাগজে খবরটা দেখেই খুদে হাতিটাকে দেখতে চলে এলাম। তবে ও খুঁড়িয়ে হাঁটছে দেখে মন খারাপ হয়ে গেল|’’ স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ বাউরি, মিলন মহাদণ্ডরা খুদের জন্য কেউ কচি কলাগাছের থোড়, কেউ বা ঘরের গরুর দুধ এনেছিলেন। তাঁরা সবার একটাই ইচ্ছে— পিলখানার নতুন অতিথি দ্রুত সেরে উঠুক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement