চিকিৎসা চলছে জখম বৃদ্ধ বাবুরাম মান্ডির। নিজস্ব চিত্র।
বৃদ্ধ চাষি এবং বন কর্মীকে জখম করল হাতি। তছনছ করল প্রায় দু’হেক্টর জমির ফসল। শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত এই তাণ্ডব চলেছে বান্দোয়ানের যমুনা বনাঞ্চলে। রবিবার বিকেল পর্যন্ত পাওয়া খবরে হাতিগুলি রয়েছে নান্না গ্রামের অদূরে বাবুইসিনির জঙ্গলে। এলাকার অনেক খেতেই কাটা ধান আর শীতের আনাজ রয়েছে। চিন্তা বেড়েছে চাষিদের। মাইক নিয়ে মানুষজনকে সতর্ক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও বন দফতর।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় ১৩টি হাতি ঝাড়গ্রামের বাঁশপাহাড়ির দেশমুহুল গ্রাম হয়ে কংসাবতী দক্ষিণ বন বিভাগের যমুনা বনাঞ্চলের বান্দোয়ানের আমগোড়া গ্রামে ঢুকে পড়ে। দলে রয়েছে একটি দাঁতাল ও দু’টি শাবক। হাতিগুলিকে ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন গ্রামের কিছু বাসিন্দা। অনেকেই ফসল বাঁচানোর চেষ্টায় বেরিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন গ্রামের চাষি, বছর ষাটের বাবুরাম মান্ডি।
স্থানীয় ও বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ আচমকাই দাঁতালের মুখোমুখি পড়ে যান বাবুরাম। শুঁড়ে পেঁচিয়ে তাঁকে আছড়ে মারে হাতিটি। পরে হুলাপার্টি এলে সরে যায়। বৃদ্ধকে উদ্ধার করে বান্দোয়ান ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান বন দফতরের কর্মীরা। সেখান থেকে পাঠানো হয় পুরুলিয়া মেডিক্যালে। আপাতত সেখানেই চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর হাত ও কোমরে গুরুতর চোট রয়েছে।
আমগোড়ায় হামলা চালিয়ে হাতিগুলি যশপুর গ্রামের কাছে যায়। ভোরে দলটিকে জঙ্গলে দিকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে হঠাৎ করে দাঁতালটি বন কর্মী দুর্যোধন হেমব্রমকে তাড়া করে। পালাতে গিয়ে পড়ে চোট পান তিনিও। সেখান থেকে হাতিগুলি যশপুর মডেল স্কুলের কাছে, শবরপাড়ার বাসিন্দা সতীশ শবরের প্রায় পাঁচ বিঘা জমির কাটা ধান তছনছ করে। সতীশবাবু বলেন, “খুব কষ্ট করে ধান লাগিয়েছিলাম। এই বছর ভাল ফলন হয়েছিল। আর কয়েক দিন হলেই ধান বাড়িতে নিয়ে আসতে পারতাম। সব নষ্ট হয়ে গেল।’’ বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আমগোড়া, নান্না ও যশপুর মিলিয়ে প্রায় দু’হেক্টর জমির ফসল তছনছ করে হাতিগুলি।
রবিবার দিনভর নান্না, জশপুর ও হারাদা গ্রামের মাঝের বাবুইসিনির জঙ্গলে ছিল হাতিগুলি। ডিএফও (কংসাবতী দক্ষিণ) অর্ণব সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘জখম বৃদ্ধ ও বনকর্মীর চিকিৎসা চলছে। কিছু ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’