বিষ্ণুপুরে মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
হাইকোর্টের নির্দেশের পরে কোথাও দর্শকদের মণ্ডপে ঢোকা আটকাতে ব্যারিকেড দেওয়া শুরু হয়েছে, কোথাও আবার মণ্ডপের কাজ শেষ হয়নি বলে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়নি। কোথাও কোথাও পুলিশ পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে হাইকোর্টের নির্দেশ মতো কাজ করতে নির্দেশ দিচ্ছে। সোমবার করোনা পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজো নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশের ২৪ ঘণ্টা পরে মঙ্গলবার এমনই ছবি দেখা গিয়েছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায়।
মঙ্গলবার বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পুজো উদ্যোক্তাদের তোড়জোড় নজরে এসেছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে যাতে দর্শকদের প্রতিমা দর্শনে অসুবিধা না হয়, সে জন্য থিমের অঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও মণ্ডপের সামনের কিছুটা এ দিনই খুলে দিয়েছে বাঁকুড়ার মধ্যকেন্দুয়াডিহি সর্বজনীন পুজো কমিটি। পুজো কমিটির সভাপতি অচিন্ত্য কুণ্ডু বলেন, ‘‘আমরা এ বারও থিম পুজোর আয়োজন করেছিলাম। তাই মণ্ডপের সামনের অংশ খুলে ফেলা বেশ কঠিন ছিল। তবে আদালতের নির্দেশের পরেই রাতারাতি সিদ্ধান্ত নিয়ে এ দিন সামনের অংশ খুলে ফেলা হয়েছে।’’
কমরারমাঠ সর্বজনীন পুজো কমিটি এ বার প্রথম থেকেই মণ্ডপের বাইরে থেকে প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করেছিল। আদালতের রায়ের পর এ দিন ওই পুজো কমিটির তরফে মণ্ডপ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ব্যারিকেড তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দর্শনার্থীদের যাতে প্রতিমা দেখতে মণ্ডপে ঢুকতে না হয়, তার ব্যবস্থা করেছিল শহরের লালবাজার সর্বজনীন ও ইঁদারাগড়া হরেশ্বরমেলা সর্বজনীন পুজো কমিটিও। দু’টি পুজো কমিটির কর্তারাই জানাচ্ছেন, আদালতের নির্দেশ মতোই তাঁরা পুজোর আয়োজন করবেন। বেলিয়াতোড় সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির কোষাধ্যক্ষ অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আদালতের রায় শোনার পরেই মণ্ডপের সামনের অংশ খুলে দেওয়া হচ্ছে।’’ বিষ্ণুপুর, কোতুলপুরেও কিছু পুজো মণ্ডপের সামনে এ দিনই বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করতে দেখা যায়।
বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, হাইকোর্টের রায় জানার পরেই জেলা পুলিশের তরফে প্রতিটি থানাকে জানানো হয়েছে, পুজো কমিটিগুলির কর্তাদের যেন সতর্ক করা হয়। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কিছু থানা ইতিমধ্যে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছে।’’ রাস্তায় ভিড় নিয়ন্ত্রণেও পুলিশ কিছু ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। যেমন বড় পুজো মণ্ডপগুলি চিহ্নিত করে সেখানে যান ও ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশি পুলিশ ও সিভিক কর্মী মোতায়েন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
অন্য দিকে, পুরুলিয়া জেলার কিছু মণ্ডপের সামনে এ দিন ব্যারিকেড তৈরি করতে দেখা গেলেও, অনেক জায়গায় মণ্ডপের কাজ এখনও শেষ হয়নি। এ দিন পুরুলিয়া শহর, রঘুনাথপুর, আদ্রা, মানবাজার, ঝালদা ঘুরে দেখা গিয়েছে প্রায় সর্বত্রই মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে। একাধিক পুজো উদ্যোক্তারা বলছেন, ‘‘পুরুলিয়ায় মণ্ডপ সজ্জা শেষ হতে ষষ্ঠীর বিকেল গড়িয়ে যায়। মণ্ডপ সজ্জা শেষ হলেই আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট দূরত্বে বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করা হবে।’’আদ্রার বাঙ্গালী সমিতি সর্বজনীনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় জানাচ্ছেন, ষষ্ঠীর সকালেই মণ্ডপ সজ্জা শেষ হয়ে যাবে। তার পরেই ব্যারিকেড তৈরি করব।’’ একই কথা বলছেন রঘুনাথপুরের মিশন রোড সর্বজনীনে দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক মধুসূদন পাল, ঝালদা সর্বজনীনের সম্পাদক রাজেশ রায়দের।
অনেকে আবার জানান, ব্যারিকেড তৈরি, নো এন্ট্রি জ়োন তৈরির ক্ষেত্রে পুলিশের নির্দেশের অপেক্ষায় তাঁরা আছেন। পুরুলিয়া শহরের নিমটাঁড় ষোলোআনা সর্বজনীনের সম্পাদক বিভাসরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ অনুযায়ীই কাজ করব। পুলিশ আর কী-কী করতে বলে, তার অপেক্ষায় আছি।” মানবাজারের গ্রাম্য যোগাশ্রম সর্বজনীনের কর্মকর্তা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশের নির্দেশ এলেই সেই মতো কাজ করব।” যদিও পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন বলেন, ‘‘হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে সরকারের কোনও নির্দেশিকা হাতে আসেনি। যা নির্দেশিকা আসবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’