বাড়িতে গিয়ে পূরণ করা হচ্ছে ফর্ম। নিজস্ব চিত্র।
মিত্রপুর পঞ্চায়েতের দাতুড়া গ্রামে শনিবার ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে বসেছিল। শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে সেখানে যাচ্ছিলেন দাতুড়া গ্রামের আজমিরা বিবি। মাঝপথেই ব্লক প্রশাসনের কর্মীরা তাঁকে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন।
কিন্তু কেন?
আজমিরার কথায়, ‘‘প্রশাসনের আধিকারিক বললেন, বাড়ি যান। এর পরে আমার ঠিকানা নিয়ে বাড়িতে অপেক্ষা করতে বলেন। কয়েক ঘণ্টা পরে দেখি বাড়িতেই হাজির প্রশাসনের কর্মীরা। তাঁরা ফর্ম পূরণ করে নিয়ে যান। এবং করোনার সময় বাড়ির বাইরে ঘরের শিশুদের না নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।’’
ঠিক এই কাজটাই করছে মুরারই ২ ব্লক প্রশাসন। করোনা সংক্রমণের গ্রাফ আবারও ঊর্ধ্বমুখী। সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরা আক্রান্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা। সেই কথা ভেবে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে গর্ভবতী ও শিশুদের না নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে ব্লক প্রশাসনের তরফে। এ বিষয়ে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছেন বিডিও (মুরারই ২) মহম্মদ নাজির হোসেন এবং পাইকর থানার ওসি শেখ ইসরাইল। তাঁরা চাইছেন গর্ভবতী, সদ্য প্রসূতি ও ছোট সন্তানের মায়েদের কাছেই প্রশাসনকে নিয়ে যেতে।
সেই লক্ষ্যে যে-সব পঞ্চায়েতে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির আয়োজন করা হচ্ছে, সেই এলাকায় গর্ভবতী ও শিশু সন্তানের মায়েদের তথ্য সংগ্ৰহ করছেন আশাকর্মী এবং স্বনির্ভর দলের মহিলারা। তথ্য সংগ্ৰহ করছে পাইকর থানার পুলিশও। এলাকার সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও এই কাজে লাগানো হয়েছে। এর ফলে শিবিরে ভিড়ের মধ্যে গর্ভবতী ও শিশুদের মায়েদের যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
এ দিন মিত্রপুর পঞ্চায়েতে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির ছিল। সেই মতো দাতুড়া গ্রামে পৌঁছে যান ব্লকের আধিকারিক ও কর্মীরা। গর্ভবতীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করানোর পাশাপাশি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ফর্ম পূরণ করে সঙ্গে সঙ্গে জমা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষজনের বাড়ি গিয়ে ‘মানবিক’ প্রকল্পের নথি সংগ্ৰহ করা হয়েছে। প্রশাসন এ ভাবে বাড়ির দুয়ারে আসায় খুশি মহিলারা। মাঠকরমজা গ্রামের বাসিন্দা, অন্তঃসত্ত্বা রিনা বিবি বলেন, ‘‘শিবিরে ভিড়ের ভয় ছিল ঠিকই। কিন্তু, অভাবের সংসারে মাসে পাঁচশো টাকা আমাদের কাছে অনেক। কষ্ট হলেও তাই লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন করব মনস্থির করেছিলাম। কিন্তু এ দিন বিডিও নিজে বাড়িতে এসে ফর্ম পূরণ করে নিয়ে যাওয়ায় খুব ভাল লাগছে।’’
বিডিও বলেন, ‘‘এক দিন আগে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ দিন পঞ্চাশেরও বেশি উপভোক্তার বাড়ি পৌঁছতে পেরেছি। ব্লক ও পঞ্চায়েত কর্মীদের নিয়ে একটি আলাদা দল করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রকল্পের সুবিধে দেওয়া হবে। কেননা করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরা আক্রান্ত হতে পারে। তাই আগে থেকে সাবধান হওয়াই ভাল।’’
মুরারই ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিক পাত্র বলেন, ‘‘ধীরে হলেও করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শিশুরাও আক্রন্ত হতে পারে এমন অনুমান করা হচ্ছে। আগাম সতর্কতায় প্রশাসনের এটা ভাল উদ্যোগ।’’