অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। ফাইল চিত্র।
অনুব্রত-হীন বীরভূমের সাংগঠনিক রাশ কি নিজের হাতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়?
বৃহস্পতিবার বিকেলে দুবরাজপুরের তৃণমূল কার্যালয়ে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের অফিস থেকে আসা চার প্রতিনিধির সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরে বীরভূম জেলা তৃণমূলের অন্দরে সেই চর্চাই শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, দুবরাজপুর ব্লক দিয়েই জেলায় শুরু হল এমন বৈঠক। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কোন পথে এগোতে হবে, কী কী ধরনের কর্মসূচি পালন করতে হবে এবং সাংগঠনিক ফাঁকফোকর ঢেকে কী ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে সে বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা ও দিক নির্দেশ করা হয়েছে। সূত্রের খবর, পঞ্চায়েতের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়নি।
তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে ১১ জনের একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছিল আগেই। সেই তলিকায় আছেন দলের দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত ঘোষ, জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়, দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র, প্রাক্তন বিধায়ক নরেশচন্দ্র বাউড়ি, যুব সভাপতি দেবব্রত সাহা, অরুণ চক্রবর্তী প্রমুখ। সিউড়ি ২ ব্লকে বৃহস্পতিবার বিকেলে সভা ছিল। সেখানে না-গিয়ে দুবরাজপুরের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তাঁরা প্রত্যেকই উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন ব্লকের ১০টি অঞ্চলের সভাপতিরাও। দু-একটি স্থির চিত্র মোবাইলে ফ্রেমবন্দি করতে পারলেও ভিডিয়ো করার নিষেধাজ্ঞা ছিল রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে।
দলের এক নেতা বলছেন, ‘‘গরু পাচার মামলায় জেলা সভাপতি গ্রেফতার হওয়ার পরেই দলের সাংগঠনিক অবস্থা কেমন, এলাকায় নেতাদের ভাবমূর্তি এবং গ্রহণযোগ্যতা কেমন, ফাঁক ফোকর আছে কিনা, সে বিষয়ে আগেই সমীক্ষা করেছেন অভিষেকের অফিসের প্রতিনিধিরা। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ধরে আলোচনা করেছেন টিম অভিষেক ও আইপ্যাকের প্রতিনিধিরা।’’
ঘটনা হল অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিম ও আইপ্যাকের প্রতিনিধিদের সমীক্ষা রিপোর্টকেই যে প্রাধান্য দেওয়া হবে, সেই বার্তা নভেম্বরে জেলার সমস্ত বিধায়কদের কলকাতায় ডেকে দেওয়া হয়েছিল। এ বার সরাসরি সংগঠন কী ভাবে চালাতে হবে, কী ধরনের কর্মসূচি নিতে হবে, জেলায় এসে সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছেন অভিষেক ও আইপ্যাকের প্রতিনিধিরা।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এমন সভা হবে। সেটা প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মেনে হওয়া ‘দিদিকে বলো’ শীর্ষক জনসংযোগ কর্মসূচির অন্যতম অঙ্গ বিধায়কদের গ্রাম সফরের আদলে । প্রথমত কোন অঞ্চলের কোথায় সভা হবে, সেই জায়গা নির্বাচন। সেখানে ডাকতে হবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের। থাকবেন এলাকার মানুষ এবং স্থানীয় পাঁচ জন নিরপেক্ষ ব্যক্তি (যাঁরা এলাকায় সম্মানীয়)। তাঁদের মতামত নেওয়া হবে। আয়োজন করতে হবে একটি বনভোজনের।
সূত্রের খবর, প্রতিটি সভায় উপস্থিত থাকবেন জেলা, ব্লক, এমনকি রাজ্য নেতৃত্বের কেউ। দলীয় কর্মীদের মানুষের দরজায় দরজায় যেতে বলা হয়েছে। যে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কর্মসূচি, সেখানে রাত্রিবাস করে পরদিন সকালে দলীয় পতাকা উত্তোলন করে ফিরতে হবে উপস্থিত নেতাদের—এমন নির্দেশও শীর্ষ মহল থেকে দেওয়া হয়েছে।