প্রতীকী ছবি।
শিল্পক্ষেত্রে দীর্ঘদিন বাঁকুড়ায় বড় কোনও বিনিয়োগ দেখা যায়নি। জেলায় যে ক’টি কলকারখানা রয়েছে, সেগুলিকে ঘিরে বারবার অশান্তিতে আখেরে জেলার শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা ধাক্কা খাচ্ছে না তো? গঙ্গাজলঘাটির চৌশালে বুধবার একটি কারখানার ম্যানেজারের কাছে তোলা না পেয়ে মারধরের অভিযোগকে ঘিরে সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে।
শিল্পক্ষেত্রে যাতে গোলমাল না হয়, সে জন্য বারবার দলীয় নেতা-কর্মীদের সংযত থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। তারপরেও জেলায় শিল্পের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় তৃণমূলের কিছু নেতা, পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের (শিল্প) যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর সরকার বলেন, “জেলার শিল্পের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। নানা বিরূপ ঘটনায় উদ্যোগপতিরা হতাশ। সমস্যা মেটাতে পুলিশ-প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দরকার।” জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে অবশ্য শিল্প নিয়ে কোনও সমস্যার অভিযোগ উঠলে দ্রুত সমাধান করা হয় বলেই দাবি তোলা হয়েছে। গুরুতর কোনও অভিযোগ উঠলে দ্রুত কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি।
যদিও উদ্যোগপতিদের অভিযোগ থেমে নেই। বেলিয়াতোড়ের আমেঠি এলাকায় একটি বীজপ্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ার কাজ করছে একটি সংস্থা। বৃহস্পতিবার ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস গিরি অভিযোগ করেন, “বীজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ার কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। এর মধ্যেই ওই কারখানায় স্থানীয় লোকজনকে নিয়োগের দাবিতে ঝামেলা শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি এমনই গত এক সপ্তাহ ধরে সংস্থার লোকজনকে নির্মীয়মাণ কেন্দ্রে যেতেই দেওয়া হচ্ছে না। গ্রামবাসীর সঙ্গে বৈঠক করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিছু লোকজন ঝামেলা মেটাতে রাজি নয়। তেমন হলে পুলিশকে জানাব।”
বেলিয়াতোড়েরই ওলতোড়া ও মধুপুর গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় একটি বীজপ্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র প্রায় ১২ বছর ধরে চলছে। সেখানে প্রতিবছরই নানান সমস্যার অভিযোগ ওঠে। ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজর্ষি কুণ্ডুর অভিযোগ, “সংস্থার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের উস্কানি দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু নেতা। শেষে ঝামেলা মেটানোর নাম করে মধ্যস্থতায় এসে আমাদের কাছে তাঁরা বাড়তি সুবিধা চাইছেন। পুলিশের সাহায্য চেয়েও অশান্তি বন্ধ করা যায়নি। এ ভাবে চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ করতে হবে আমাদের।”
কিছু দিন আগেই বড়জোড়ার হাটআশুড়িয়ার একটি ইস্পাত তৈরির কারখানা প্রায় তিন দিন ধরে অচল করে রেখে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শ্রমিকদের একাংশের বিরুদ্ধে। পুলিশ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশ্য সেখানে কাজ শুরু হয়েছে।
বুধবার গঙ্গাজলঘাটির ঘটনায় অভিযোগ পেয়েই পুলিশ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার তাঁদের বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়। ঘটনাচক্রে, ধৃতেরা যে তৃণমূল কর্মী, তা মেনেছেন খোদ ব্লক তৃণমূল সভাপতি ইন্দ্রজিৎ কর্মকার।
ওই ঘটনার পরে বিরোধীরা রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে শিল্পক্ষেত্রে অশান্তির অভিযোগে সরব হয়েছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতির অভিযোগ, “তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কারখানায় তোলাবাজি, ইচ্ছা মতো শ্রমিক নিয়োগ করতে চাপাচাপি, পুরনো শ্রমিকদের জোর করে কাজ থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পাঞ্চল আগেই প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যে ক’টি কারখানা চালু রয়েছে, এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে আর কত দিন মালিকেরা সেগুলি চালাতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।” বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘তৃণমূলের জন্যই এখানে শিল্পের ভাবমূর্তিধাক্কা খাচ্ছে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে জেলার শিল্পাঞ্চল বড়জোড়ার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “জেলায় শিল্পের পরিবেশ মোটেই খারাপ নয়। তৃণমূল কর্মীরা কোথাও শিল্পবিরোধী কাজ করেন না। কেউ করে থাকলে তা সমর্থন করে না দল। মালিক ও শ্রমিক উভয়ের স্বার্থই যাতে বজায় থাকে, সে দিকে আমরা নজর রাখি।”