হিংলো পঞ্চায়েতে জেলাশাসক। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।
সরকার ঘোষিত প্যাকেজ আরও নিবিড় ভাবে মহম্মদবাজারে প্রস্তাবিত কয়লা এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হল জেলা প্রশাসন। প্রস্তাবিত খনি এলাকার পঞ্চায়েতগুলির মাধ্যমে তার চেষ্টা হয় শুক্রবার। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকার ঘোষিত প্যাকেজের প্রতিলিপি বাংলা এবং বাংলা হরফে লেখা সাঁওতালি ভাষায় ছাপানো হয়েছে। কয়েক’শো লিফলেট হিংলো, ভাঁড়কাটা, সেকেড্ডা, ডেউচা ও পুরাতন গ্রাম পঞ্চায়েতে পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে মাইকে প্রচারও চলেছে।
কী ভাবে সেই কাজ হবে, প্যাকেজ নিয়ে প্রতিক্রিয়া কী, কত জন মানুষ প্যাকেজ সংগ্রহ করছেন বা ঠিক কী কী জিজ্ঞাসা উঠে আসছে জানতে শুক্রবার বিকেলে হিংলো গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়েছিলেন জেলাশাসক বিধান রায়। সঙ্গে ছিলেন প্রস্তাবিত খনির (জমি) জন্য বিশেষ ভাবে নিযুক্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ ও এলাকার বিডিও অর্ঘ্য গুহ। তাঁরা কথা বলেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। পঞ্চায়েত থেকে বেরিয়ে জেলাশাসক বলেন, ‘‘এলাকায় বসবাসকারী প্রত্যেকের জন্য উপযোগী প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত ওই প্যাকেজে যা বলা আছে, সেটা আরও নিবিড় ভাবে মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হল।’’ তিনি জানাচ্ছেন, উৎসাহী মানুষ জন বা যাঁরা প্রয়োজন মনে করছেন এই প্যাকেজের কপি রাখবেন তাঁদের জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে। যাতে তাঁরাও এই নিয়ে মত বিনিময় করতে পারেন। যদি আরও ব্যাখ্যা বা বিশদে আলোচনার প্রযোজন হয় তা হলে প্রশাসন রয়েছে বলেও আশ্বাস জেলাশাসকের।
গত মাসের ১৯ তারিখ মহম্মদবাজারের ডেউচা-পাঁচামি দেওয়ানগঞ্জ হরিণশিঙায় প্রস্তাবিত খনি এলাকার বসবাসকারী বিভিন্ন অংশের মানুষ, ক্লাব সদস্য, আদিবাসী সংগঠনের নেতা, আদিবাসী সমাজের মাথা, এলাকার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য, পাথর খাদান ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সহ মোট ১৬৫ জনকে ডেকে সিউড়িতে একটি বৈঠক করেছিল জেলা প্রশাসন। সেখানেই খনি গড়তে এলাকার বিভিন্ন অংশের মানুষের জন্য সরকার ঠিক কী ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এলাকাবাসীর হতে সরকারি নির্দেশের ইংরেজি কপির সঙ্গে একটি করে বাংলা ও সাঁওতালি ভাষার অলচিকি হরফে লেখা প্রতিলিপি তুলে দেওয়া হয়েছিল।
প্রশাসনের বার্তা ছিল, কী আছে প্যাকেজে তা তাঁরা ভাল করে বুঝুন। আলোচনা করুন। আলোচনার ভিত্তিতে সহমত তৈরি হোক। তার পরেই কাজ শুরু হবে। তবে যে এলাকায় থেকে খনি শুরু হওয়ার কথা সেখানকার উপপ্রধান শিবদাস দাস এ দিন জেলাশাসকের কাছে প্রস্তাবিত খনির একটি ম্যাপের আবেদন জানান। কারণ, তিনটি মৌজার কোন গ্রামগুলি কয়লাখনির মধ্যে রয়েছে সেটা নিয়ে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে এই আবেদন বলেও জানিয়েছেন উপপ্রধান।
জেলাশাসক আরও জানিয়েছেন, পুনার্বাসনের ক্ষেত্রে জমির দাম সহ যে বাড়ি দেওয়ার কথা হয়েছে সেটা একেবারেই ফ্ল্যাট সিস্টেম নয়। যেমন ভাবে তাঁরা বসবাস করছেন গ্রামাঞ্চলে, তেমন ব্যবস্থা থাকবে প্রস্তাবিত খনি এলাকার বাইরে সরকারি জমি বা প্রয়োজনে অন্য জায়গা দেখে। সেটা পাড়া বা টোল ভাগ করেও করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, এর আগে মাত্র ৬০০ স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাটে তাঁরা কী ভাবে থাকবেন সেই প্রশ্ন উঠেছিল। জেলাশাসকের কথায়, ‘‘যে পরিবেশ তাঁরা পছন্দ করেন বা বেড়ে উঠেছেন, সেই হিসেবেই আমরা জমি চিহ্নিত করছি। এটা নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। এটা পরিস্কার করে দিতে চাই।’’