তেলের দাম বাড়ায় সমস্যায় ছোট দোকানও। নিজস্ব চিত্র।
তেলের ছ্যাঁকা বোধহয় একেই বলে। তবে আঁচের নয়, দামের গরমেই তার মালুম পাচ্ছেন নিম্ন, মধ্যবিত্ত। প্রায় সমস্ত রান্নাতেই যেখানে তেলের অনিবার্য উপস্থিতি, সেখানে জেলার বাজারে কেজি প্রতি সরিষার তেলের দাম প্রায় দুশো ছুঁইছুঁই। বোলপুরের বিভিন্ন দোকানে পৃথক পৃথক ব্র্যান্ডের সরিষার তেলের দাম ১৭৫-১৯০ টাকা। শুধু সরিষার তেল নয়, সূর্যমুখী তেল, সোয়াবিন তেল, বাদাম তেল, রাইস ব্রান তেলের বাজারদর ঊর্ধ্বমুখী।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, কেজি প্রতি ১৪০-২২০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে এদের দাম। কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন জুড়ে নামী কোম্পানির ভাল মানের তেল বিকোচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকাতেও। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে স্থানীয় ও বৃহৎ অনলাইন পণ্য সরবরাহকারী সংস্থাগুলির চাহিদা অনেকটাই বেশি। তাদের ক্ষেত্রে তেলের দাম কেজি প্রতি আরও ৫-১০ টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই মাথায় হাত পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির। পাশাপাশি ছোট ছোট খাবারের দোকানগুলির ক্ষেত্রেও এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে কোপ পড়েছে লাভের অঙ্কে।
দামের প্রভাব যে দৈনন্দিন জীবনে পড়ছে, তা মানছেন বোলপুরের গৃহবধূ স্মিতা দাস। শুক্রবার বোলপুর হাটতলার একটি মুদিখানায় মাসের জিনিসপত্র কিনতে এসেছিলেন তিনি। সেখানেই জানালেন, মাস তিনেক আগেও মাসের শুরুতে ৩ কেজি সরিষার তেল ও ১ কেজি সূর্যমুখী তেল কিনতেন। এখন সেই পরিমাণ যথাক্রমে ২ কেজি ও ৫০০ গ্রামে নামিয়ে এনেছেন। তিনি বলেন, “যে হারে দাম বাড়ছে, তাতে আগামী মাস থেকে তেল ব্যবহারের পরিমাণ আরও কমানোর কথা ভাবতে হবে।’’ কারও মতে, সরকার দ্রুত ভোজ্যতেলের নির্দিষ্ট মূল্য বেঁধে না দিলে তা সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাবে।
বিপাকে পড়েছে ছোট খাবারের দোকানগুলিও। রাস্তার ধারের কিছু দোকানের উপরে আবার স্বাস্থ্যবিধি না মেনে খাবার পরিবেশনের অভিযোগ রয়েছে। তবুও বহু জনের কাছে কদর আছে এই খাবারের। ক্রমবর্ধমান বাজারদরের সঙ্গে, বিশেষত ভোজ্যতেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরাও। তাতে কমছে খরিদ্দার। বোলপুরের ভুবনডাঙার এমনই এক দোকানের মালিক শরৎ মণ্ডল বলেন, “দাম বাড়ালেই আমাদের খদ্দের কমে যায়। আর তেলের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম বাড়ানো ছাড়া কোনও উপায়ও নাই। তাই বাধ্য হয়েই দাম এক রেখে যতটা কম পরিমাণ তেল ব্যবহার করে রান্না করা যায়, সেই চেষ্টা করছি।”
সিউড়ি মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কিষাণ পালের মতে, এক বছরে ভোজ্যতেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতিমাসেই নতুন স্টকে দাম বেড়ে যাচ্ছে সমস্ত ভোজ্যতেলেরই। তিনি বলেন, “গত এক বছরে সব জিনিসেরই দাম ওঠা-নামা করেছে। তবে ভোজ্যতেলের দাম ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। যার কারণ আমাদের কাছে অজানা। আসলে বাজারদরের দিকে সরকারের নজরদারির অভাবের সুযোগ নিয়ে কোম্পানিগুলি সীমাহীন মুনাফালাভের খেলায় নেমেছে।” বোলপুরের ব্যবসায়ী সনাতন ভকতের মতে, এখন বেশির ভাগ মানুষের হাতে টাকা নেই। সেখানে দাম কমার বদলে লাগাতার বেড়েই চলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই বিক্রিবাটা অনেকটাই কমে গিয়েছে।”