জমায়েত করে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। নিজস্ব চিত্র
ভুল ফলাফল প্রকাশ করার অভিযোগ তুলে জেলার বিভিন্ন কলেজের পড়ুয়ারা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখালেন বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে। যার জেরে মঙ্গলবার উত্তাল হল বিশ্ববিদ্যালয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাইক এনে কর্তৃপক্ষকে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। নির্ভুল ভাবে পুনরায় ফলাফল প্রকাশ করার আশ্বাস পেলে বিক্ষোভ তোলেন ছাত্রছাত্রীরা।
উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন না। পরে তিনি বলেন, “মর্ডান ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ পরীক্ষার প্রশ্ন পুরোটাই মাল্টিপল চয়েসের। উত্তরপত্র সফটওয়্যারের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। ওই সফটওয়্যার পরিচালন সংস্থারই ত্রুটির কারণে ফলাফলে গোলমাল হয়েছে।’’
তিনি জানান, চতুর্থ সেমেস্টারের উদ্ভিদবিদ্যার ফলাফলেও কিছু সমস্যা রয়েছে বলে তাঁদের নজরে এসেছে। এমআইএল-এর মতোই উদ্ভিদবিদ্যার উত্তরপত্রও সফটওয়্যারে যাচাই করা হয়। তাই চতুর্থ সেমেস্টারের উদ্ভিদবিদ্যার উত্তরপত্রও পুনরায় দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপাচার্য বলেন, ‘‘শনিবার বিকেল পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ওই দু’টি সেমেস্টারের ফলাফল জানতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা।’’
সদ্য বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজের দ্বিতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে ‘মর্ডান ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ’ (এমআইএল)- এর ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলার প্রায় সব ক’টি কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।
পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, মোট চল্লিশ নম্বরের প্রশ্নপত্রে কুড়িটি প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের মান দু’নম্বর করে। ফলে বিজোড় সংখ্যায় নম্বর পাওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। অথচ ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই এগারো, পনেরো বা পাঁচ নম্বর পেয়েছেন! এ ছাড়া বড় সংখ্যক পড়ুয়া এই পরীক্ষায় পাশই করতে পারেননি।
বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের পড়ুয়া ঋতিক সিংহ, ঋজু পাল, বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজের ছাত্র সৌরভ ঘোষের অভিযোগ, “অদ্ভূত ফলাফল প্রকাশিত করা হয়েছে। যেখানে প্রত্যেকটি প্রশ্নের মান দু’নম্বর, সেখানে বিজোড় সংখ্যায় ফল দেওয়া হয় কী করে? আমরা এত ভাল পরীক্ষা দিয়েছিলাম যে ফেল করব, স্বপ্নেও ভাবিনি।” একই অভিযোগ, জেলার অন্যান্য কলেজের পড়ুয়াদের মধ্যেও।
বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২৪টি কলেজ রয়েছে। এ দিন বেলা এগারোটা নাগাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েকশো পড়ুয়া বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আসেন। তারপরেই তাঁরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস মজুমদার, পরীক্ষা নিয়ামক সর্বজিৎ বিশ্বাস।
পড়ুয়ারা প্রশাসনিক ভবনের ভিতরে ঢুকেও বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ থামাতে মাইক এনে পড়ুয়াদের আশ্বাস দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকেরা। ফলাফলে যে ভুলত্রুটি রয়েছে, তা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেন নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকেরা। শীঘ্রই নতুন করে ‘ত্রুটিমুক্ত’ ফলাফল প্রকাশিত করার আশ্বাস আধিকারিকেরা ছাত্রছাত্রীদের দেওয়ার পরে বিক্ষোভ ওঠে।
গোটা ঘটনায় ফের একবার প্রশ্নের মুখে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমন ভুল হল কী করে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জেলার শিক্ষক মহলের বড় অংশই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানান, ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরপরই ভুলত্রুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ওই সংস্থাকে বিষয়টি জানিয়ে তা সংশোধন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলাফলে ভুলভ্রান্তি রয়েছে জেনেও কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নির্দেশিকা দিয়ে পড়ুয়াদের তা জানায়নি? প্রশ্ন তুলেছেন বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীরা।
এর সদুত্তর অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে মেলেনি। উপাচার্য বলেন, “ত্রুটিমুক্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’’