আয়োজন: মল্লিকপুরের ‘ঝলকরানি’। নিজস্ব চিত্র
নিশুতি রাতে গা ছমছমে বটগাছের নীচে হাজির এক দল ডাকাত। গ্রামের দিকে পা বাড়াতেই আচমকা পথ আটকে দাঁড়াল এক কিশোরী। এক মুঠো ধুলো ছুড়ে দিল ডাকাতদের দিকে। তাতে অন্ধ হয়ে যন্ত্রণাতে কাতরাতে থাকে তারা। নিশিভোরে সাধক কালীচরণ সিংহের নজরে পড়ে ডাকাতদের দুর্দশা। কালী ঠাকুরের ঘটের পবিত্র জল ছিটিয়ে দিতে দৃষ্টি ফিরে পায় ডাকাতেরা। কথা দেয়, আর কোনও দিন গ্রামের সীমানা পেরোবে না।
এমনই জনশ্রুতি মল্লিকপুরের কালীকে ঘিরে। চন্দ্রভাগা নদীর ধারে ছোট অথচ বর্ধিষ্ণু গ্রামের আরাধ্যা দেবী কালী লোকমুখে ‘ঝলকরানি’ নামেই পূজিতা হন। গ্রামবাসীর দাবি, প্রায় চারশো বছর আগে সাধক কালীচরণ বট গাছের নীচে পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনায় স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে কালী প্রতিষ্ঠা করেন। কালীর নাম কী ভাবে ঝলকরানী হল সে বিষয়ে অবশ্য কিছু জানা নেই তাঁদের। এলাকার মানুষ ওই নামেই মাকে ডাকেন বলে জানান গ্রামের সিংহ পরিবারের বয়স্ক সদস্য ব্রহ্মনিরঞ্জন সিংহ। অন্য এক সদস্য সিদ্ধার্থ সিংহের কথায়, পারিবারিক পুজো হলেও আশপাশের গ্রাম চন্দনপুর, গজালপুর, পলসারা, চাকদহ, জীবধরপুর, পানুড়িয়া এমনকী সিউড়ি থেকেও পুজো দেখতে ছুটে আসেন অনেকে। প্রতিমার চোখ জগন্নাথ দেবের চোখের আদলে। পুজোর আগের দিন প্রতিমায় রংয়ের প্রলেপ পড়ে। পুজোর দিন দুপুর বারোটায় শুদ্ধাচারে চক্ষুদান করেন শিল্পী নন্দদুলাল দাস। সন্ধ্যায় প্রতিমাকে নিয়ে আসা হয় মূল মন্দিরে। পানিফলের পালো, মালপোয়া, চিড়ে, মুড়কি-সহ নানা দ্রব্য দেওয়া হয় ভোগে। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা দেবীশরণ সিংহ বলেন,“বিজলি বাতি যখন আসেনি তখন হ্যাচাকের আলোতে পুজো হতো। আর মশাল জ্বালিয়ে চলত বলিদান পর্ব।” প্রতিমার দুই কানের পাশে থাকে রাম-লক্ষ্মণ মতান্তরে লবকুশ নামে দুটি পুতুল। ফি-বছর সিউড়ি থেকে গৃহবধূ সুবর্ণা সিংহ ছুটে আসেন ‘ঝলকরানি’র পুজোয়। তিনি জানান, পুজোর দিন দুপুরে ডোমপাড়ায় গ্রাম্যদেবতা বুড়ি মনসার পুজোতে পাঁচ কেজি চিড়ের ভোগ দেওয়ার প্রথা আজও চলে আসছে। পুজো ঘিরে বড় মেলা বসে মল্লিকপুরে। সেখানে থাকে যাত্রাপালা, আতসবাজির প্রদর্শন। ভাইফোঁটার সকালে নিরঞ্জনের সঙ্গে শেষ হয় উৎসব। আর পরের বছরের অপেক্ষা শুরু হয় মল্লিকপুরবাসীর।