PLGA

পোস্টারের পরে সতর্কতা

রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের আগে জঙ্গলমহলে ‘বাংলা-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা সীমানা আঞ্চলিক কমিটি’ বা ‘বিজেওবিআরসি’ সক্রিয় ছিল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:২৮
Share:

এই বাড়িতে সন্তান নিয়ে থাকেন শ্রীহরি লোহার। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী

‘গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ বা ‘পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি’-র ২০তম বর্ষপূর্তি সপ্তাহ (২-৮ ডিসেম্বর) পালনের ডাক দিয়ে সোমবার বান্দোয়ান ও বরাবাজারে পোস্টার, ব্যানারের সঙ্গে হিন্দিতে মুদ্রিত প্রচারপত্র মিলেছে। মাওবাদীদের ‘দক্ষিণী জ়োনাল কমিটি’র তরফে প্রচারিত এই প্রচারপত্র চিন্তা বাড়িয়েছে গোয়েন্দাদের। এ দিকে, বর্ষপূর্তি সপ্তাহ ঘিরে পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকায় বেড়েছে পুলিশি তৎপরতা। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের চারটি ব্লকেও।

Advertisement

রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের আগে জঙ্গলমহলে ‘বাংলা-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা সীমানা আঞ্চলিক কমিটি’ বা ‘বিজেওবিআরসি’ সক্রিয় ছিল। কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন বিক্রম ওরফে অর্ণব দাম। ২০১২-এর অগস্টে গ্রেফতার হন তিনি। গোয়েন্দাদের সূত্রে দাবি, তার পরে থেকে রাজ্যে মাওবাদীদের কোনও কমিটি বা ‘স্কোয়াড’-এর সক্রিয় থাকার খবর ছিল না। মাওবাদী কার্যকলাপের যা খবর মিলত, সবই ঝাড়খণ্ডের দলমা রেঞ্জ এলাকায়। প্রথম সারির স্কোয়াড-সদস্যেরা গ্রেফতার বা অনেকে আত্মসমর্পণের পরে, এ রাজ্যে সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়ে। সংগঠনের রাজ্য কমিটির সম্পাদক আকাশ ওরফে অসীম মণ্ডলও এ রাজ্যে আছেন কি না, তা নিয়েও নিশ্চিত খবর নেই গোয়েন্দাদের কাছে। তবে তাঁদের অনুমান, আকাশ ঝাড়খণ্ডে আত্মগোপন করে থাকতে পারেন।

এই পরিস্থিতিতে বাংলা-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা সীমানা লাগোয়া জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘দক্ষিণী জ়োনাল কমিটি’র আত্মপ্রকাশে গোয়েন্দাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। সংগঠনে আমূল বদল ঘটিয়ে এ রাজ্যে জন-ভিত্তি গড়ে তোলার কাজ কি শুরু করছে মাওবাদীরা, ভাবাচ্ছে সে প্রশ্ন।

Advertisement

প্রচারপত্রে ‘দক্ষিণী জ়োনাল কমিটি’র নেতৃত্বে গণমুক্তি গেরিলা ফৌজের দ্বারা ২০১৯-এর মে থেকে চলতি বছরে পুলিশের উপরে হামলার একাধিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। ঘটনাগুলি সব ঝাড়খণ্ডের হলেও বেশিরভাগ পুরুলিয়ার সীমানা লাগোয়া থানা এলাকার ঘটনা। এর মধ্যে অন্যতম, ২০১৯-এর ১৪ জুন সরাইকেলা-খরসঁওয়া জেলার ইচাগড় থানার কুকরু সাপ্তাহিক হাটে পাঁচ পুলিশকর্মীকে হত্যা করে তিনটি ‘ইনস্যাস রাইফেল’ ও দু’টি পিস্তল লুটের ঘটনার দায়ও স্বীকার করেছে ‘দক্ষিণী জ়োনাল কমিটি’। পাশাপাশি, হামলার নানা পন্থারও উল্লেখ রয়েছে প্রচারপত্রে।

গোয়েন্দাদের ধারণা, নিজেদের এলাকা বাড়াতেই এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে বর্ষপূর্তি সপ্তাহ পালনের ডাক দিয়ে পোস্টার, ব্যানার ও প্রচারপত্র ছড়ানো হয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পরে, এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম। সূত্রের খবর, ‘লিঙ্কম্যান’ ছাড়া এ ভাবে দু’জায়গায় একই সঙ্গে পোস্টার সেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। ‘লিঙ্কম্যান’ হিসেবে যে বা যারা কাজ করছে, তারা এ রাজ্যেরই না ঝাড়খণ্ড থেকে আসা, ‘দক্ষিণী জ়োনাল কমিটি’র নেতৃত্বেই কি ফের এ রাজ্যে সংগঠন গড়ার পথে মাওবাদীরা, আপাতত এ সব প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন গোয়েন্দারা।

এ দিকে, বর্ষপূর্তি সপ্তাহ শুরুর দিন, বুধবার থেকে বান্দোয়ান-বরাবাজারের ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। যানবাহন থামিয়ে চলছে তল্লাশি। মোটরবাইকে নজরদারি চলছে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া গ্রামগুলিতেও। এ দিন জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন দিনভর বান্দোয়ান-বরাবাজার এলাকায় টহল দেন। বিভিন্ন জায়গায় নাকা চেকিং, ‘রুট মার্চ’ ও ‘এরিয়া ডমিনেশন’ চলে। কোনও সমস্যা নেই বলে জানান সুপার। জেলার জঙ্গলমহলে মাওবাদী সক্রিয়তার নমুনা মেলেনি বলে দাবি করে এ দিন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও-ও বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল এলাকায় পুলিশি সক্রিয়তা রয়েছে। নিয়মমাফিক এলাকা টহল দেওয়া ও সূত্র মারফত খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement