পিকনিকে যাওয়ার পথে ডিজে বাজিয়ে ঝুঁকির যাতায়াত। মহম্মদবাজারের সিউড়ি সাঁইথিয়া যাওয়ার রাস্তায় শালদহা মোড়ে। ছবি: পাপাই বাগদি।
জেলায় ফের স্বমহিমায় ফিরল শীত। সোমবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সেই ঠান্ডার আমেজেই বছরের প্রথম দিনে পিকনিকের হিড়িক দেখা গেল জেলায়। পুলিশের নজরদারি সত্ত্বেও বাজল ডিজে বক্সও।
জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ায় বছরের প্রথম দিন উপভোগ্য হয়েছে জেলাবাসীর কাছে। হিমেল হাওয়ার পরশ মেখে এ দিন মানুষের ঢল নামে পিকনিক স্পটগুলিতে। সকাল থেকে দল বেঁধে বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাস, ম্যাটাডর ভাড়া করে অথবা নিজেদের গাড়ি নিয়ে অনেকেই হাজির ছিলেন জেলার পিকনিক স্পটগুলিতে।
বীরভূম জেলায় যে যে স্পটগুলিতে পিকনিকের আসর বসে সেগুলির মধ্যে রয়েছে সিউড়ির তিলপাড়া, তসরকাটা শালের জঙ্গল, গোবরা খটঙ্গার কূশকর্ণিকা নদীর ধার, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বক্রেশ্বর জলাধার নীল নির্জন, দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বর ও মামা-ভাগ্নে এবং অবশ্যই দুবরাজপুরের বক্রেশ্বরে। এখানে বাড়তে পাওনা গরম জলে স্নান করে বক্রেশ্বর নদী ঘেঁষে পিকনিকের আনন্দে মেতে উঠা যায়।
পিকনিকের আসর বসেছিল, মহম্মদবাজারের পলাশবাসিনী, দ্বারবাসিনীতেও। পিকনিক জমে ওঠে নলহাটি থানার আকালীপুরে গুহ্যকালী মন্দির ঘেঁষা ব্রাহ্মণী নদীর ধারে এবং শালবনে। লাভপুরের ফুল্লরাতলা, মুণ্ডমালিনীতলা, কীর্ণাহারের ভগ্রকালীতলা এবং রামপুরহাট, তারাপীঠ, মাড়গ্রামের বিভিন্ন স্পটে ভিড় ছিল। নিষিদ্ধ ডিজে বক্স বাজিয়ে পিকনিক করলে সেখানে পদক্ষেপ করেছে পুলিশ। কোথাও আবার কোনও রকম সাউন্ড বক্স ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা ছিল।
সিউড়ির তসরকাটায় ম্যাটাডর ভাড়া করে ডিজে বক্স নিয়ে পিকনিক করতে গিয়ে পুলিশের কোপে পড়তে হয়েছে একটি দলকে। ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিঅ্যান্ডটি) আখতার আলি নিজে গিয়ে সেটা বন্ধ করিয়ে দেন। প্রায় একই ঘটনা ঘটেছে মাড়গ্রামে। পুলিশ আগেই এলাকার ডিজে বক্স কারবারীদের সতর্ক করেছিল, যাতে সেগুলি ভাড়া দেওয়া না হয়। কিন্তু তার পরেও এলাকার বিভিন্ন পিকনিক স্পটে ডিজে বাজছে খবর পেয়ে অভিযান চালায় স্থানীয় থানা। ১০টি যন্ত্র আটক করে।
নীলনির্জন জলাধারে এ দিন উপচে পড়া ভিড় ছিল। অন্তত শ’দেড়েক পিকনিক পার্টি উপস্থিত ছিল। কিন্তু পুলিশ ও ব নদফতরের নজরদারিতে কোথাও সাউন্ড বক্স এবং ডিজে বক্স বাজতে দেখা যায়নি। কারণ এই জলাধারে প্রচুর সংখ্যায় পরিযায়ী পাখি আসে তাদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেই জন্যই নজরদারি।
প্রকাশ্যে মদ্যপানেও তীক্ষ্ণ নজর ছিল পুলিশের। এ দিন সিউড়ি ২ ব্লক থেকে এখানে পিকনিক করতে স্বরূপ মণ্ডল, মিলি মণ্ডল বলছেন, ‘‘বেশ ভাল পরিবেশ। তবে মহিলাদের জন্য শৌচাগার থাকা খুব প্রয়োজন ছিল।’’ আমোদপুর থেকে এ দিন বাসে করে অন্তত ১২-১৪টি পরিবার দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বরে এসেছিলেন।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘যে সব পিকনিক স্পটের কদর বেশি সেখানে প্রতি বারই ছোটখাটো গোলমাল লেগে থাকে। খুচখাচ মারপিটের ঘটনাও ঘটেছে অতীতে। সে দিকে তাকিয়ে এ বার সতর্ক ছিল পুলিশ-প্রশাসন।’’
তবে এর পরেও বেশ কিছু স্পটে চুটিয়ে বক্স বা ডিজে বেজেছে বলে অভিযোগ। পাড়ুইয়ের ধনিকতলায় ডিজের দাপট দেখা গিয়েছে। শালপাতা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, প্লাস্টিক এবং থার্মোকলের থালা ব্যবহার নিষিদ্ধ করার মতো কঠোর পদক্ষেপ জেলা প্রশাসনের তরফে নেওয়া দরকার ছিল বলেও মনে করছেন জেলার পরিবেশপ্রেমীরা।