স্থায়ী স্তন্যপান কক্ষ চালু করার দাবি পুরুলিয়ায়

ঘরের বাইরে কোলের শিশুকে খাওয়ানো নিয়ে কম বেশি সব মাকেই এই এক সমস্যায় পড়তে হয়। অস্ট্রেলিয়ার এক মহিলা সেনেটর লারিসা ওয়াটারস পার্লামেন্টে অধিবেশন চলাকালীন ১৪ সপ্তাহের শিশুকন্যাকে দুধ খাইয়েছিলেন। সেই ছবি ভাইরাল হয়। বিশ্বজুড়ে অনেকে তাঁর ওই ভূমিকার প্রশংসা করেন। 

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০১
Share:

যাত্রী প্রতীক্ষালয় এ ভাবেই সাজানো হয়েছিল। নিজস্ব চিত্র

মাস ছয়েকের একটি শিশু যুবতী মায়ের কোলে থেকে থেকে কেঁদে উঠছিল। পাশের এক মহিলা বলে উঠলেন— ‘‘ওর বোধহয় খিদে পেয়েছে।’’ বাচ্চার যে খিদে পেয়েছে, যুবতী মাও তা বুঝতে পেরেছেন। কিছুক্ষণ আগেই খিদে মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, বাসস্ট্যান্ড চত্বরে ভিড়ের জন্য তিনি সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না। ভিড় দেখে অসহায় মুখে এ বার তিনি বাচ্চাকে খাওয়াতে চলে গেলেন বাসস্ট্যান্ড থেকে কিছুটা দূরে এক গাছতলায়। আঁচল ফেলে সেখানেই তিনি শিশুকে দুধ খাওয়ালেন।

Advertisement

ঘরের বাইরে কোলের শিশুকে খাওয়ানো নিয়ে কম বেশি সব মাকেই এই এক সমস্যায় পড়তে হয়। অস্ট্রেলিয়ার এক মহিলা সেনেটর লারিসা ওয়াটারস পার্লামেন্টে অধিবেশন চলাকালীন ১৪ সপ্তাহের শিশুকন্যাকে দুধ খাইয়েছিলেন। সেই ছবি ভাইরাল হয়। বিশ্বজুড়ে অনেকে তাঁর ওই ভূমিকার প্রশংসা করেন।

শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানের গুরুত্ব বোঝাতে ১-৭ অগস্ট আন্তর্জাতিক ব্রেস্ট ফিডিং উইক পালন করা হয়। কী ভাবে, কত ক্ষণ সন্তানদের স্তন্যপান করাতে হয়, কোন ভঙ্গিতে শিশুকে কোলে রাখতে হয়— এ সব নিয়ে আলোচনা এবং প্রদর্শনী চলে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর, আইসিডিএস এবং ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে পুরুলিয়া জেলার সমস্ত ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মায়েদের উপস্থিতিতে ব্রেস্ট ফিডিং নিয়ে আলোচনা হয়। শেষ দিনে জেলার অধিকাংশ বাসস্ট্যান্ডে একটি করে অস্থায়ী ফিডিং কর্নার তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু, পরের দিন থেকে সেই ফিডিং কর্নার তুলে দেওয়া হয়।

Advertisement

তারপর থেকেই জেলার বিভিন্ন স্তরে মহিলাদের মধ্যে স্থায়ী ভাবে ফিডিং কর্নার তৈরি করার দাবি উঠেছে। মানবাজার ব্লকের কুদা গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতী মাহাতো, জরগড়িয়া গ্রামের উর্মিলা সিংহ দু’জনেই জানান, তাঁরা ৭ অগস্ট মানবাজার ব্লকের গোপালনগরে যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে ফিডিং কর্নার দেখেছিলেন। স্তন্যপান সম্পর্কিত আলোচনাও তাঁরা শুনেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘শত শত চোখের আড়ালে বাচ্চাকে খাওয়ানো যে কী কষ্টকর, তা মা মাত্রই জানেন। ঘটা করে একটা দিন বাসস্ট্যান্ডে বাচ্চাদের খাওয়ানোর ঘর তৈরি করে কী হবে? পাকাপাকি এমন একটা ঘর করে দিলে খুব উপকার হবে। কিন্তু, আমাদের কথা কে আর ভাবে?’’

মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী নিয়তি মাহাতোরও প্রশ্ন, ‘‘কোলের সন্তানকে স্তন্য পান করানোর জন্যে শুধু মাত্র একটা দিন ফিডিং কর্নারের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে কেন? জেলার প্রতিটি বড় যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলিতে একটা করে ফিডিং কর্নার থাকা উচিত।’’ এই বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের এই সদস্য।

ইউনিসেফের জেলা কনসালট্যান্ট বিকাশরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ড চত্বর এলাকায় কী ভাবে শিশুদের স্তন্যপান করানো যায় এবং আর কী কী সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন, মায়েদের তা বোঝাতেই আলাদা ফিডিং কর্নার তৈরি করা হয়েছিল। তবে এটা ঠিক, স্থায়ী ফিডিং কর্নার হলে শিশুদের স্তন্যপান করাতে মায়েদের আর অস্বস্তিতে পড়তে হবে না।’’ তাঁরও আশ্বাস, স্থায়ী ফিডিং কর্নার নির্মাণ করা সম্ভব কি না, এ ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন। আইসিডিএসের জেলা প্রকল্প আধিকারিক অমিতাভ পাত্র বলেন, ‘‘এটা খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে আমরা এই প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের কাছে রাখতে পারি।’’

তবে আশার আলো দেখিয়েছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়। তিনি বলেন, ‘‘স্থায়ী ফিডিং কর্নার নির্মাণ করা নিয়ে জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা নিয়েছে। জেলার বাসস্ট্যন্ড এলাকা বাছাই করে কোথাও পাকা, আবার কোথাও ছাউনি দিয়ে আলাদা ফিডিং কর্নার নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে মায়েরা আলাদা বসে শিশুদের খাওয়াতে পারবেন।’’ তবে সেই জায়গাটি যাতে পরিচ্ছন্ন ও মহিলাদের পক্ষে নিরাপদ হয়, তাও দেখা দরকার বলে অনেকের মত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement