চন্দ্রযান-৩-এর অবতরণের দিন বেঙ্গালুরুতে দলের অন্য সদস্যদের মাঝে দেবজ্যোতি ধর। —নিজস্ব চিত্র।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণের পরে তিন দিন পেরিয়ে গেলেও দেশ জুড়ে উন্মাদনা অব্যাহত। এই অবতরণে সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইসরোর সদস্যদের নিয়েও খুশির জোয়ার বইছে। তবে কেউ কেউ ইচ্ছে করেই থেকে গিয়েছেন আড়ালে। তাদেরই অন্যতম সিউড়ির ডাঙালপাড়ার বাসিন্দা দেবজ্যোতি ধর। প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকা এই মানুষটি আমদাবাদে অবস্থিত ইসরোর ‘স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার’-এর ডেপুটি ডাইরেক্টর।
বিক্রমের সফল সফ্ট ল্যান্ডিংয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাঁদের কাঁধে ছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম দেবজ্যোতি ধর ও তাঁর দল। অবতরণের উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের জন্য যে সেন্সর প্রযুক্তি, যা কোনও গর্ত বা বড় পাথর আছে কি না খতিয়ে দেখে, যে ক্যামেরা বিক্রমের নীচের ছবি তুলছে তেমন একাধিক যন্ত্র ও প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে এই ‘স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার’-এ। আগামীতে বিক্রমের ক্যামেরা যে সমস্ত ছবি পাঠাবে, তার বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণের দায়িত্বেও থাকবে তাঁর দলের। সেই বিশ্লেষণের উপরেই নির্ভর করবে চন্দ্রপৃষ্ঠে রোভার প্রজ্ঞানের গতিপথ। অর্থাৎ কাজ এখনও শেষ হয়নি।
তবে, প্রাথমিক তথা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পার করার খুশি ধরা পড়েছে দেবজ্যোতির কথায়। তিনি এ দিন ফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, “দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম যখন সুন্দর ফল দেয়, তখন সব ক্লান্তি ধুয়ে মুছে যায়।’’ কেমন ছিল ল্যান্ডিংয়ের আগের ২০ মিনিট? দেবজ্যোতি বললেন, ‘‘এই সময়ে আমরা সকলেই প্রচণ্ড চিন্তায় ছিলাম। কারও যেন চোখের পলক পড়ছিল না। তবে, সব কিছু ঠিক যেমন ভাবা হয়েছিল, তেমন ভাবেই হওয়ায় কারও আনন্দের শেষ ছিল না। কারও চোখ জলে ভরে উঠেছিল, কেউ উচ্ছ্বাসে লাফয়ে উঠেছিল। করতালি তো থামছিলই না।’’
দেবজ্যোতি জানান, ওই দিনের অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো অসম্ভব। তাঁর মতে, ‘‘তবে এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। একটা ইতিহাসের সাক্ষী থাকতে পারা আনন্দের, আর ইতিহাসের অংশ হতে পারা আরও অনেক বেশি আনন্দের।”
বীরভূম জেলা স্কুল থেকে ১৯৮৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন দেবজ্যোতি। ওই বছরই জয়েন্ট দিয়ে তৎকালীন শিবপুরের বিই কলেজে ভর্তি। কম্পিউটার সায়েন্স ও টেকনোলজি নিয়ে বি-টেক করেন। ১৯৮৭ সালে ক্যাম্পাসিং থেকেই যোগ দেন ইসরোতে। মা ছায়া ধর ছিলেন সিউড়ি আরটি গার্লস হাই স্কুলের অর্থনীতির শিক্ষিকা। বাবা সত্যনারায়ণ ধর ছিলেন সিউড়ি শ্রীরামকৃষ্ণ শিল্প বিদ্যাপীঠ কলেজের অধ্যক্ষ।
ছেলের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মা। তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত ভাল ছিল দেবজ্যোতি। ওর বাবার ইচ্ছা ছিল, ছেলে বড় বৈজ্ঞানিক হয়ে দেশের জন্য কিছু করবে। চন্দ্রযান-৩ যখন সফল অবতরণ করল, তখন মনে হল সেই স্বপ্ন সফল হল৷ ওকে নিয়ে এখন গোটা দেশের গর্ব।”