এই পোস্টারই দেখা যাচ্ছে দেওয়ালে। নিজস্ব চিত্র
সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাব তো? দিনরাত এই প্রশ্ন নিয়ে নাকি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা তাঁদের কাছে ছুটে আসছেন। বাঁকুড়া পুরসভার বাম কাউন্সিলরদের দাবি, তাঁরা উত্তর দিতে পারছেন না।
কেন? ওই কাউন্সিলরদের অভিযোগ, ‘হাউজিং ফর অল’ প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার উপভোক্তা তালিকা পুরসভা তাঁদের জানাচ্ছে না। বাঁকুড়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা স্বরূপ সেন বলেন, “নিয়ম ভেঙে কাউন্সিলরদের অন্ধকারে রেখে হাউজিং ফর অল প্রকল্পের উপভোক্তা বাছাই করছেন পুরপ্রধান। এই ঘটনায় বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে।” এই নিয়ে এলাকায় এলাকায় কনভেনশন শুরু করেছেন বাম কাউন্সিলারেরা। সাঁটা হচ্ছে পোস্টার। তবে অভিযোগ উড়িয়ে পুরপ্রধান পাল্টা বলছেন, ‘‘বিরোধী কিছু কাউন্সিলর বাড়ি বানানোর ওই প্রকল্পে দুর্নীতি করছেন বলে অভিযোগ উঠছে। তাই পুরসভা দ্বায়িত্ব নিয়ে উপভোক্তা বাছাই করছে।’’
গোলমালটা কোথায়? স্বরূপ জানাচ্ছেন, সূত্রপাত আগের দফা থেকেই। তিনি জানান, ২০১১ সালের আর্থ সামাজিক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি ‘হাউজিং ফর অল’ প্রকল্পে উপভোক্তাদের একটি তালিকা বানায়। প্রকল্প শুরুর আগে বাঁকুড়ার পুরপ্রধান কাউন্সিলরদের সেই উপভোক্তা তালিকা দেখিয়ে যাচাই করতে বলেছিলেন। সেই মোতাবেক তাঁরা উপভোক্তাদের অবস্থা খতিয়ে দেখে পুরসভাকে রিপোর্ট করেন। তবে এর পরেও কিছু উপভোক্তা সঠিক তথ্য ও প্রমাণপত্র জমা করতে না পারার জন্য প্রকল্পের সুবিধা পাননি।
স্বরূপ বলেন, “যাঁরা যোগ্য হয়েও কিছু সমস্যার জন্য বাড়ি বানানোর টাকা পাননি তাঁদের দ্বিতীয় দফায় অগ্রাধিকার দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন পুরপ্রধান। তবে আদৌ দ্বিতীয় দফার তালিকায় তাঁদের রাখা হচ্ছে কি না তা নিয়ে আমরা অন্ধকারে।” তাঁর দাবি, এই ব্যাপারে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে সম্মেলন করা হবে। সাধারণ মানুষকে বলা হবে, যা হচ্ছে কাউন্সিলরদের অন্ধকারে রেখেই।
ইতিমধ্যেই বামফ্রন্টের দখলে থাকা বাঁকুড়া পুরসভার ১২ নম্বর ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ওই সম্মেলন হয়ে গিয়েছে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি প্রকল্পটির কাজে কাউন্সিলারদের এড়িয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে পোস্টার দেওয়া হয়েছে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “তৃণমূলের লোকজন এসে এলাকার মানুষের কাছ থেকে বাড়ি বানানোর প্রকল্পের জন্য কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছে। আমরা কিছু জানতেই পারছি না। যাঁরা বাড়ি পাননি, তাঁরা আদৌ পাবেন কি না সেই প্রশ্ন নিয়ে আমাদের কাছে ছুটে আসছেন।’’ ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলর প্রদীপ দাস বলেন, “প্রকল্পটি নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। গরীব মানুষকে বঞ্চিত করে কিছু টাকাওয়ালা লোককে সুবিধা পাইয়ে দিতেই পুরসভা বিরোধী কাউন্সিলরদের এড়িয়ে কাজ করছে।”
অবশ্য, বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত দাবি করছেন, এই সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘‘কয়েক জন বিরোধী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে উপভোক্তাদের থেকে টাকা তোলার অভিযোগ পেয়েছি। আগামী দিনে যাতে এমন না হয় ও যোগ্য মানুষই যাতে প্রকল্পের সুবিধা পান সেই লক্ষ্যেই আমি নিজে পুরসভার লোক পাঠাচ্ছি এলাকায়। তাঁরা গিয়ে সরেজমিনে উপভোক্তাদের অবস্থা খতিয়ে দেখছেন।” এই ব্যাপারে স্বরূপের প্রতিক্রিয়া, “কাউন্সিলরদের অন্ধকারে রাখার পিছনে হাস্যকর যুক্তি দেখাচ্ছেন পুরপ্রধান। ক্ষমতা থাকলে তদন্ত করে আমাদের কাউন্সিলরদের দোষ প্রমাণ করে দেখান।”
বাঁকুড়া পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, আর্থসামাজিক গণনায় পাকা বাড়ি নেই এমন ৫ হাজার ৪২৪টি পরিবারকে ‘হাউজিং ফর অল’ প্রকল্পে পাকা বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। পুরপ্রধান জানান, প্রকল্পের প্রথম দফার কাজ প্রায় শেষ। দ্বিতীয় দফায় এই প্রকল্পে শহরের ৫৫৬টি পরিবারকে বাড়ি বানানোর টাকা দেওয়া হবে। উপভোক্তা তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
এখন স্পষ্ট কথায়, প্রথম দফায় নানা কারনে বাদ পড়া উপভোক্তারা কি দ্বিতীয় দফায় বাড়ি পাবেন?
মহাপ্রসাদ বলেন, “ওই উপভোক্তাদের মে-র মধ্যে পুরসভায় সঠিক তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছিল। যাঁরা দিয়েছেন তাঁরা বাড়ি পাবেন।”