মৃত রাহুল লোহার। নিজস্ব চিত্র।
অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের পরাজয় মেনে নিতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। বন্ধুরা বুঝিয়ে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়েছিলেন। রাতে বাড়ির ভিতরে সেই যুবকেরই গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। রবিবার রাতে বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড়ের এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত রাহুল লোহার (২৬) বেলিয়াতোড়ের সিনেমাহল পাড়ার বাসিন্দা। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে ভারতের পরাজয় মেনে নিতে না পেরে অবসাদে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক।
রাহুলের পরিবার ও বন্ধুদের সূত্রে খবর, নিজে ক্রিকেট না খেললেও খেলা নিয়ে তাঁর বরাবর উন্মাদনা ছিল। বিশ্বকাপের ফাইনাল এক সঙ্গে দেখার জন্য জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা করেছিলেন রাহুল ও তাঁর বন্ধুরা। ভারতের ক্রিকেট তারকাদের কাটআউট তৈরি করেন। রবিবার সকালে বন্ধুদের সঙ্গে প্রায় ৭০ ফুটের জাতীয় পতাকা নিয়ে ভারতের সমর্থনে এলাকায় মিছিল করেন রাহুল। দুপুর থেকে সবাই মিলে খেলা দেখতে শুরু করেন। রাহুলের বন্ধু শুভম দে বলেন, “খেলা শেষে দেখি রাহুল কাঁদছে। খেলায় হার-জিৎ রয়েছে বলে আমরা ওঁকে সান্ত্বনা দিই। শেষে ওর ভাইকে ডেকে রাহুলকে বাড়িতে পাঠাই। রাতেই খবর পাই, সে আত্মঘাতী হয়েছে!’’ বেঙ্গালুরুতে কাজে যাওয়া রাহুলের বড় দাদা পরিযায়ী শ্রমিক প্রেমকুমার লোহার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান মাস দশেক আগে। রাহুলের বাবা পরিবারের সঙ্গে থাকেন না। মা সরস্বতী লোহার পরিচারিকার কাজ করেন। রাহুল স্থানীয় একটি শাড়ির দোকানে কাজ করতেন। তাঁর ছোট ভাই সচিন সিকিমের একটি হোটেল কাজ করেন। কালীপুজোয় ছুটিতে বাড়ি ফেরেন।
এ দিন কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না সচিন। তিনি শুধু বলেন, ‘‘রাতে বাড়ি ফিরে আমি ও দাদা খাওয়াদাওয়া করি। রাতে একই ঘরে শোওয়ার কথা ছিল। দাদা ঘরে ছিল, আমি বাইরে শৌচকর্মে গিয়েছিলাম। ফিরে দেখি, দাদার গলায় ফাঁস।’’ মনোবিদ জয়রঞ্জন রামের পরামর্শ, “খেলায় হার-জিৎ দু’টোকেই সমান ভাবে মেনে নিতে হয়। নিজের প্রিয় দল হারলে সাময়িক খারাপ লাগতেই পারে। তা কাটিয়ে নিজের স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফেরার চেষ্টা করতেই হবে। খেলায় সুযোগ তো আরও আসবে।”