সকাল থেকে কালো হয়েছিল বাঁকুড়ার আকাশ। কেশিয়াকোলের ছবি। (বাঁ দিকে উপরে) ঝড় আসার আশঙ্কায় তড়িঘড়ি মাঠ থেকে ফসল তোলা, বিষ্ণুপুরের গুমুট গ্রামে। (বাঁ দিকে নীচে) ঘরের ছাউনি মেরামতি বান্দোয়ানের কুয়েরডি গ্রামে। মঙ্গলবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ, শুভ্র মিত্র ও রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
বাঁকুড়ার আকাশ মেঘে ঢাকল মঙ্গলবারেই। তা দেখে ঘূর্ণিঝড় আমপানের আশঙ্কায় তটস্থ জেলাবাসী। হাট-বাজার থেকে বাড়ির বৈঠকখানা— সবর্ত্রই এ দিন সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে চলে আলোচনা। বিপর্যয়ের মোকাবিলায় প্রশাসনিক তৎপরতাও তুঙ্গে।
ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপটা উপকূল এলাকায় বেশি পড়ার সম্ভাবনা থাকলেও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির সঙ্গে বাঁকুড়াতেও তার কিছু প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে কাঁচা বাড়ি, চাষের খেত থেকে বিদ্যুৎ-সহ নানা পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না প্রশাসন।
‘কন্ট্রোল রুম’ খুলে বিপর্যয় মোকাবিলার পরিকল্পনাও অনেকটা সেরে ফেলেছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অসীমকুমার বিশ্বাস জানান, ঝড়ে কোথাও কোনও সমস্যা হলে, জেলার কন্ট্রোল রুম ০৩২৪২-২৫৪৩৭৫ নম্বরে ফোন করতে পারেন বাসিন্দারা। প্রতিটি ব্লকেও খোলা হচ্ছে কন্ট্রোল রুম। জেলার সিভিল ডিফেন্স বিভাগে প্রায় ১৫০ জন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের জেলার তিনটি মহকুমা বাঁকুড়া সদর, বিষ্ণুপুর ও খাতড়ায় পাঠানো হচ্ছে। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, খাতড়া ও তালড্যাংরায় দমকল বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নামার জন্য। তিনি বলেন, “জেলার ২২টি ব্লকেই পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রিপল, খাদ্য দ্রব্য মজুত রয়েছে। তা ছাড়া, ঘরবাড়ি নষ্ট হলে, মানুষজনকে আশপাশের স্কুল, কলেজ বা সরকারি ভবনে তুলে নিয়ে যাওয়া ও দ্রুত ত্রাণ শিবির চালু করার প্রস্তুতি সেরে রেখেছি আমরা।”
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনও প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ দিন দুপুরে বিডিওদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে জেলাশাসক রাহুল মজুমদার আমপান নিয়ে সর্তক করেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘বিডিওদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। জেলায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও প্রস্তুত।’’
আমপানের প্রভাব কৃষিক্ষেত্রেও পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাঁকুড়া জেলা কৃষি ভবন সূত্রে খবর, এ বছর জেলা জুড়ে প্রায় ৫৮,৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। যার ৪৫ শতাংশই এখনও মাঠে। তিল চাষ হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষি-কর্তারা জানাচ্ছেন, জেলার কোনও অংশ থেকেই এখনও তিল ঘরে তোলা হয়নি সে ভাবে। আমপানের সতর্কতায় সরকারি ভাবে দ্রুত ফসল মাঠ থেকে তোলার জন্য বলা হয়েছিল। চাষিরা জানাচ্ছেন, ফসল এখনও তোলার মত পরিস্থিতিই হয়নি। যাঁরা ধান কাটতে নেমেছেন, তাঁরাও বেশি ধান তুলতে পারেননি।
ছাতনার ঘোষেরগ্রাম পঞ্চায়েতের দুমদুমি গ্রামের চাষি ফটিক কুণ্ডু ও শিউলিপাহাড়ি গ্রামের ধান চাষি অভয় মণ্ডল বলেন, “ধান এখনও পাকেনি। কী করে ঘরে তুলব?’’ তাঁদের আক্ষেপ, “জলের অভাবে গত বছরে আমন ধান চাষ করতেই পারিনি। এ বার বোরো ধান চাষ করতে নেমে মোটা টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে মাঠে জল জমলে, এ বারও ফসল মাঠেই মারা যাবে।”
ফটিকবাবু, অভয়বাবুরাই কেবল নন, একই আশঙ্কা জেলার বহু চাষির মধ্যেই। স্বস্তিতে নেই জেলা কৃষি দফতরও। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, “তিল একশো শতাংশ ও বোরো ধান এখনও প্রায় অর্ধেক জমিতেই পড়ে রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। যাতে কোনও ভাবেই জমিতে জল না দাঁড়ায়, সে দিকে চাষিদের নজর রাখতে বলা হয়েছে। দুর্যোগ কাটার পরে, পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’