বিশ্বাস খুইয়ে দেউলিয়া সিপিএম

ঘুরে দাঁড়ানোর ডাক কানে তোলেনি অধিকাংশ কর্মী-সমর্থক। গণ প্রতিরোধের সুফল তুলেছে বিজেপি। আর এতেই আসন খুইয়ে কার্যত দেউলিয়া হয়ে পড়েছে সিপিএম। জেলার পুর-নির্বাচনের ফল ঘোষণার এমনই বিশ্লেষণ শোনা যাচ্ছে খোদ দলীয় কর্মী-সর্মথকদের একাংশের মুখে। সমালোচিত হচ্ছে বিধানসভা নির্বাচনের পর গ্রহণ করা দলের অলিখিত নীতিও।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

বীরভূম শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৮
Share:

ঘুরে দাঁড়ানোর ডাক কানে তোলেনি অধিকাংশ কর্মী-সমর্থক। গণ প্রতিরোধের সুফল তুলেছে বিজেপি। আর এতেই আসন খুইয়ে কার্যত দেউলিয়া হয়ে পড়েছে সিপিএম। জেলার পুর-নির্বাচনের ফল ঘোষণার এমনই বিশ্লেষণ শোনা যাচ্ছে খোদ দলীয় কর্মী-সর্মথকদের একাংশের মুখে। সমালোচিত হচ্ছে বিধানসভা নির্বাচনের পর গ্রহণ করা দলের অলিখিত নীতিও।

Advertisement

পুর নির্বাচনের আগে সিপিএম তথা বাম নেতারা কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে ঘুরে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছিলেন। নির্বাচনী ফলাফলই বলে দিচ্ছে ওই দাওয়াই কার্যত কোনও কাজেই আসেনি। বিগত পুর নির্বাচনে জেলার ৪ টি পুর সভার ৭০ টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট ১০ টি দখল করেছিল। তার মধ্যে সিপিএম ৬, ফব ৩ এবং সিপিএম সমর্থিত নির্দল পেয়েছিল ১ টি আসন। এবার নির্বাচনে ৪ টি পুরসভায় ৭৩ টি আসনের মধ্যে সিপিএম মাত্র ২ টি দখল করতে পেরেছে। অথচ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন সভা সমাবেশে দলের নেতারা কর্মীদের ঘুরে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু বিগত দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে সেই ডাক কর্মীরা কানে তোলেননি, বলে দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে।

দলের ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার এক শাখা কমিটির সদস্য, লাভপুরের এক সক্রিয় কর্মী বলেন, ‘‘প্রতিরোধ কিংবা ঘুরে দাঁড়াতে গেলে শাসক দলের সঙ্গে সংঘর্ষে আইনি জটিলতায় জড়িয়ে যাওয়া অনিবার্য। দল যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দল ওই জটিলতা থেকে হয় উদ্ধার করেছে নয়তো মামলার খরচ যুগিয়েছে। এখন কিছু হলে কে দেখবে?’’ তাঁর দাবি, ‘‘ঘাড়ে চেপে থাকা পুরনো মামলায় নেতারা নিজের খরচ নিজেরা দেন। তৃণমূলের ছেলেদের কাছে চাঁদা নিয়েই আমাদের খরচ চালাতে হয়!’’

Advertisement

গণ প্রতিরোধের সুফলও নিজেদের ঝুলিতে ভরতে পারেনি সিপিএম। নির্বাচনের দিন তৃণমূলের মোকাবিলায় বিভিন্ন পুর এলাকায় পাশাপাশি অন্যান্য দলের সঙ্গে বুথ করে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে সিপিএম নেতাদেরও। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, তার সুফল বিজেপি কিছুটা পেলেও সিপিএমের কোনও লাভ হয়নি। বিগত নির্বাচনে বিজেপি ৪ টি পুরসভায় যেখানে মাত্র ৩ টি আসন পেয়েছিল সেখানে এবার তাদের আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯।

বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনের পর অন্যান্য দলের মতো সিপিএম ছেড়ে যখন কর্মীদের মধ্যে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রবনতা দেখা দেয় তখন প্রমাদ গোনেন নেতারা। তৃণমূলের আক্রোশ থেকে বাঁচতে তারা হতাশাগ্রস্থ কর্মীদের আপদকালীন ব্যবস্থা হিসাবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন বলে জানাচ্ছেন কর্মীদেরই একাংশ। তাঁদের মতে, দীর্ঘ ক্ষমতায় থাকার জন্য দল রাজনৈতিক শিক্ষার পরিবর্তে নানা সরকারি সুবিধা এবং ঠিকাদারি দিয়ে ‘পাইয়ে দেওয়া’ কর্মীবাহিনী তৈরি করেছিল। নেতাদের আশঙ্কা ছিল ওইসব কর্মীরা রাজ্যের শাসকদলে যোগ দিয়ে একই সুবিধাপুষ্ট হলে আর তাঁদের দলে ফেরানো যাবে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় থাকার সুবাদে বিজেপি কিছুটা রক্ষাকবজ হলেও রাজ্যে তেমন প্রভাব ফেলবে না। সময় মতো তাদের ফিরিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু নিকট ভবিষতে সিপিএমের কাছ থেকে তেমন কিছু পাওয়ার নেই জেনে ওইসব কর্মীদের বড় অংশই বিজেপিতেই রয়ে গিয়েছেন।

ময়ূরেশ্বরের দাসপলসা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সিপিএম প্রধান সামাইল সেখ সদলবলে লোকসভা নির্বাচনের পর, বিজেপি তে যোগদেন। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএমের কর্মীদের রক্ষা করার কোনও ক্ষমতা নেই। সংগঠনও ভেঙে পড়েছে। সেক্ষেত্রে বিজেপি তুলনামূলক ভরসা যোগ্য মনে হয়েছে। তাই এই দলবদল।’’ একই কথা বললেন, জেলার প্রাক্তন যুব নেতা শিবদাস লেট। এমন দল বদল ঘটেছে সাত্তোর, পাড়ুই, ময়ূরেশ্বর, লাভপুর, সাঁইথিয়া, সিউড়ি এলাকাতে।

ওইসব এলাকার কর্মীদের দাবি, ‘‘সময়ে সজাগ হলে এমনটা হত না। দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক খুঁটি কেটেছে দুর্নীতির ঘুণপোকা। নেতারা সময়মতো ওইসব খুঁটি বদলানোর পরিবর্তে শুদ্ধিকরণের প্রলেপ লাগিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তৃণমূলের দমকা হাওয়ায় ঘর তো ভাঙবেই।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অবশ্য জানিয়েছেন, ‘‘আমি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘কর্মীদের প্রতি আমরা সব বিষয়ে সব সময় দায়বদ্ধ। তা স্বত্ত্বেও কোথাও কোথাও কেউ সমস্যায় পড়তে পারেন। খোঁজ নিয়ে দেখব। হারের পিছনে নানা বিষয় কাজ করছে। পর্যালোচনা করে দেখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement