রামপুরহাট ও হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্র

কংগ্রেসের পাশে সিপিএম

কাগজে-কলমে দু’পক্ষেরই প্রার্থী রয়েছে। শুক্রবার ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। শেষপর্যন্ত রামপুরহাট ও হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রে বাম শরিক বা কংগ্রেস— কোনও পক্ষই নিজেদের প্রার্থীদের নাম প্রত্যাহার করল না। আর এ দিনই জেলা সিপিএম সিদ্ধান্ত নিল, ওই দুই আসনে তারা কংগ্রেস প্রার্থীদেরই সমর্থন করবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৪৫
Share:

কাগজে-কলমে দু’পক্ষেরই প্রার্থী রয়েছে। শুক্রবার ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। শেষপর্যন্ত রামপুরহাট ও হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রে বাম শরিক বা কংগ্রেস— কোনও পক্ষই নিজেদের প্রার্থীদের নাম প্রত্যাহার করল না। আর এ দিনই জেলা সিপিএম সিদ্ধান্ত নিল, ওই দুই আসনে তারা কংগ্রেস প্রার্থীদেরই সমর্থন করবেন।

Advertisement

এখনও পর্যন্ত সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন না মিললেও ওই সিদ্ধান্ত ক্ষোভ বাড়িয়েছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক ও আরসিপিআই-এর। যদিও সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদার বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলকে ওই দুই আসনে হারাতেই হবে। একমাত্র এই লক্ষ্যেই আমরা জেলা কমিটির বৈঠকে কংগ্রেসকে সমর্থন করার ব্যাপারে সহমত হয়েছি। আমাদের সিদ্ধান্তের কথা রাজ্যকে জানিয়েও দেওয়া হবে।’’

গোটা ঘটনায় তৃণমূলেরই লাভ দেখছেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। জোটের ‘দ্বন্দ্বে’র ফায়দা তুলতে সক্রিয় হয়েছেন শাসকদলের নেতারাও। এ দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রামপুরহাটে মহকুমা প্রশাসনিক কার্যালয়ে ঘটনাক্রমের দিকে নজর রাখা তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বাড়ি ফিরলেন মুখে চওড়া হাসি নিয়েই। বামেদের শীর্ষ নেতারা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন চলে গেলেও তৃণমূলের খুশি হওয়ার কিছু নেই। সিপিএমের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘আগেই ঠিক হয়েছিল, যে সব আসনে জয় থাকছে সেখানে দু’টি পথ খোলা থাকবে। এক মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া। আর তা-ও না হলে শেষ পর্যন্ত এক পক্ষ লড়াই থেকে সরে আসার কথা জানাবেন।’’ দ্বিতীয় সম্ভাবনার পথ এখনও খোলা রয়েছে বলেই দাবি জেলা বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের।

Advertisement

ঘটনা হল, তৃণমূলকে হারানোর বৃহত্তর লক্ষ্যে জেলার প্রায় সব ক’টি আসনেই মসৃণ সমঝোতার দিকে এগিয়েছে বাম ও কংগ্রেস। দ্বন্দ্ব ছিল কেবল রামপুরহাট ও হাঁসন কেন্দ্রে। প্রথমে বামফ্রন্ট রামপুরহাটে ফরওয়ার্ড ব্লকের মহম্মদ হান্নান এবং হাঁসনে আরসিপিআই-এর কামাল হাসানকে প্রার্থী করে। কিন্তু, ওই দুই আসন চেয়ে পরে কংগ্রেসও তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। রামপুরহাটে টিকিট দেওয়া হয় জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি এবং হাঁসনে জেলা আইএনটিউসি সভাপতি মিলটন রশিদকে। ফ্রন্ট শরিক ও কংগ্রেস— কোনও পক্ষই ওই আসন ছাড়তে নারাজ।

কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার করছেন কিনা, তা নিয়ে এ দিন সকাল থেকেই নানা জল্পনা ছিল। সকালে ফব-র রামপুরহাট শহর অফিসে গিয়ে দেখা গেল, দলীয় কর্মী এবং প্রার্থী মহম্মদ হান্নানকে নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় বসেছেন দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা জেলা সভাপতি রেবতী ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, হান্নান বামফ্রন্টের ঘোষিত প্রার্থী। প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার আগে পর্যন্ত যাবতীয় বিরোধ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে ফ্রন্টের নানা স্তরে আলোচনা হয়েছে। সেখানে হান্নানকে প্রার্থী করা নিয়ে শরিক সিপিএমের নেতারা কোনও আপত্তির কথা জানাননি বলেই তাঁর দাবি। হান্নানের নাম ঘোষণার পরে কংগ্রেসের প্রতি জেলা সিপিএমের সমর্থনকে দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্ত বলেই রেবতীবাবু মনে করছেন।

শুধু ‘দুর্ভাগ্যজনক’ই নয়, বড় শরিক সিপিএমের এই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়াকে ফ্রন্টের প্রতি একপ্রকার বিশ্বাসঘাতকতা বলেই মনে করছে আরসিপিআই। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিহির বায়েনের বক্তব্য, ‘‘বামফ্রন্টে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আরসিপিআই কংগ্রেসকে শান্তিপুর ছেড়ে দেবে। হাঁসনে দলীয় প্রার্থীর জন্য সমস্ত বাম শরিক দল সমর্থন করবে। এখন যদি সিপিএম বিরোধিতা করে, তা হলে তারা আগের সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করছে।’’ এ ব্যাপারে তাঁরা ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন। এ দিকে, আরসিপিআই-এর জেলা সম্পাদক তথা হাঁসনের বাম প্রার্থী কামাল হাসান কিছুটা ক্ষোভের সুরেই এ দিন বলেন, ‘‘আমি বামফ্রন্টের ঘোষিত প্রার্থী। সুতরাং বামফ্রন্ট প্রার্থী হয়েই নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যাব। আশা করছি বাম ঐক্যের কথা মনে করে বামফ্রন্টের সমস্ত শরিক দলই আমার পাশে থাকবেন।’’

এ দিন সকালেই ফ্রন্টের প্রার্থীকে সমর্থনের আবেদন নিয়ে রামপুরহাটে সিপিএম কার্যালয়ে গিয়েছিলেন ফব নেতারা। সিপিএমের জেলা কমিটির বৈঠকের পরে সন্ধেতেই পরিষ্কার হয়ে যায়, ওই ‘দৌত্য’ কাজে আসেনি। তার পরেও ফ্রন্টের রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে রেবতীবাবুরা বলছেন, ‘‘বাম ঐক্যকে চোখের মণির মতো রক্ষা করার আবেদন জানিয়েছিলেন জ্যোতি বসু, অশোক ঘোষেরা। দু’জনেই মারা গিয়েছেন। এখন আমরা বাম ঐক্যকে অটুট রাখার আবেদন জানাব।” ঘটনা হল, ভোটের ফলের নিরেখে ওই দুই আসনে কংগ্রেস যে খুব বেশি এগিয়ে তা-ও নয়। গত লোকসভা ভোটের ফল অনুযায়ী, রামপুরহাটে বামেরা পেয়েছিল ২৯.৩৩ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ৭.৭৮ শতাংশ ভোট। আবার হাঁসনের ফল ছিল বামেরা ৩০.৮০ ও কংগ্রেস ২১.০৭ শতাংশ ভোট। সে কথা স্মরণ করিয়েও বাম শরিকেরা প্রশ্ন তুলেছে সিপিএমের এ দিনের সিদ্ধান্ত নিয়ে।

এ দিকে, ওই দুই আসনে কংগ্রেসকে সমর্থন জানানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না বলেই দাবি করেছে জেলা সিপিএম। দলের নেতাদের মত, জোট গড়াই হয়েছে তৃণমূলকে হারানোর বৃহত্তর লক্ষ্যে। সেখানে কোনও একপক্ষকে জেদ ছাড়তেই হবে। তা না হলে তৃণমূল হাসতে হাসতে জিতবে। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস-সহ এলাকার একটা বড় অংশেরই সমর্থন বামফ্রন্ট ঘোষিত প্রার্থীদের প্রতি নেই বলেই সিপিএমের দাবি। এ ক্ষেত্রে লড়ে হেরে ‘হাস্যাস্পদ’ হওয়ার চেয়ে যে লক্ষ্যে এই জোট গড়া, তাকে জোরদার করাই এই সময়ের দাবি বলে ব্যাখ্যা সিপিএমের। একই কারণে বামফ্রন্ট ঘোষিত আলিপুরদুয়ারের আরএসপি প্রার্থীর বদলে কংগ্রেসকেই সমর্থন জানিয়েছে জেলা সিপিএম।

দুই আসন নিয়ে জেলায় বাম শরিকদের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়ে গেলেও মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন না বলে এ দিনও সাফ করে দিয়েছেন জিম্মি এবং মিলটন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে শাসকদলকে পরাস্ত করতে শহর ও গ্রামের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের সমর্থন করছেন। সেখানে কে থাকল আর না থাকল, তা এখন আর আলোচ্য বিষয় নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement