তৃণমূলকে পাল্টা দিতে তৈরি, দাবি বাম শিবিরের

সন্ত্রাস চালালে পাল্টা হামলা হবে। বস্তুত ভোট প্রচারের শেষ দিনে সোনামুখীতে পরস্পরকে চাপে রাখতে এমনই কথা চাউর হল যুযুধান তৃণমূল ও বামফ্রন্ট কর্মীদের মুখে মুখে। যেমন এ দিন সোনামুখীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী ঝিলিক দত্ত নিজের এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের কিছু ছেলে এসে আমাকে এলাকায় ঘোরাঘুরি না করে সটান বাড়ি চলে যেতে বলে। আমিও পাল্টা কথা শুনিয়ে দিয়েছি!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৯
Share:

সন্ত্রাস চালালে পাল্টা হামলা হবে। বস্তুত ভোট প্রচারের শেষ দিনে সোনামুখীতে পরস্পরকে চাপে রাখতে এমনই কথা চাউর হল যুযুধান তৃণমূল ও বামফ্রন্ট কর্মীদের মুখে মুখে।

Advertisement

যেমন এ দিন সোনামুখীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী ঝিলিক দত্ত নিজের এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের কিছু ছেলে এসে আমাকে এলাকায় ঘোরাঘুরি না করে সটান বাড়ি চলে যেতে বলে। আমিও পাল্টা কথা শুনিয়ে দিয়েছি!’’ তিনি থানায় এ নিয়ে অভিযোগও দায়ের করেছেন। আবার কয়েকটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের কিছু ছেলেকে সিপিএমের ছেলেরা পাল্টা হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ। ভোট প্রচার যত এগিয়েছে, ততই বামেরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে বহিরাগত আনার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে। বহিরাগত নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছেন সোনামুখীর বাম প্রার্থীরা। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারের কাছেও জেলা সিপিএমের তরফে এ নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে।

সোনামুখীতে পুরসভা দখলের মূল লড়াই সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের। তার সঙ্গে জুড়েছে শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও শাসানির অভিযোগ। সন্ত্রাসের মোকাবিলা গায়ের জোরেই করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাম-শিবির। “ওরা ইঁট ছুড়লে, আমরা পাটকেল ছুড়তে তৈরি”- বলে দিচ্ছেন সোনামুখীর এক বাম নেতা। লিখিত ভাবে কোথাও অভিযোগ না হলেও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, কয়েকটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের কিছু বহিরাগতকে এ দিন পাল্টা হুমকি দিয়েছেন বাম কর্মীরাও। ভোটের দিন শাসকদলের কেউ যদি বুথে ঝামেলা পাকায়, শহর ছেড়ে বেরনোর আগেই তাকে হাতেনাতে ধরার ফন্দি কষছে বামেরা। ভয় দেখিয়ে তাদের কর্মীদের ভোটের দিন ঘরে বসিয়ে রাখাই তৃণমূলের ‘কৌশল’ বলেও দাবি বামেদের।

Advertisement

বৃহস্পতিবার, ভোট প্রচারের শেষ দিন সকাল থেকে বৈশাখী রোদে জেলার আবহাওয়া ছিল গরম। তার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল ভোটের উত্তাপ। বিকেলে ঝড়-বৃষ্টির দাপটে জেলার মাটি কিছুটা ঠান্ডা হয়ে হলেও ভোটের তাপ কমেনি তিন পুরসভাতেই। বাঁকুড়ায় সিপিএম, বিজেপির সঙ্গে শাসক দলের লড়াই বিক্ষুব্ধ নির্দলদের সঙ্গেও। বিষ্ণুপুরেও কিছু ওয়ার্ডের পরিস্থিতি এক। বাইক-মিছিল নিষিদ্ধ বলে আগেই ঘোষণা করেছে কমিশন। অথচ নিষেধাজ্ঞাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে প্রচারের শেষ দিন বাঁকুড়া শহরের কাটজুড়িডাঙা এলাকায় তৃণমূল ছাত্র-যুব’র কর্মীরা বাইক-মিছিল করে বলে অভিযোগ বামেদের। জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উৎসাহী হয়ে কেউ করেছে কি না জানা নেই। তবে বড় কিছু একটা হয়নি। ভোটের দিন আমাদের প্রত্যেকটি দলীয় ক্যাম্পে শ’য়ে শ’য়ে ছাত্র-যুব কর্মীরা উপস্থিত থাকবে।’’

এ দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত পথসভার অনুমতি নিয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অতনু ঘোষ। কিন্তু, পথসভা করতে এসে দেখেন ওয়ার্ডের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ২৫টি মাইক লাগিয়ে আগেই সভা শুরু করে দিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী উদয় ভকত। এই ঘটনায় তাঁদের প্রচার কাজে বিঘ্ন ঘটার অভিযোগ তুলেছেন অতনুবাবু। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে থানায় এবং বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসকের কাছে চিঠিও লিখেছেন তিনি।

অতনুবাবু বলেন, “ অতগুলো মাইকের আওয়াজে বাধ্য হয়ে আমাদের পথসভা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বক্তাদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এটা একটা চক্রান্ত ছাড়া কিছু নয়। এতে নির্বাচনবিধিও লঙ্ঘিত হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে উপযুক্ত তদন্ত দাবি করেছি।’’ সিপিএমের বিষ্ণুপুর লোকাল কমিটির সদস্য সুকান্ত চৌধুরীর অভিযোগ, “আমাদের সমর্থিত প্রার্থীর পথসভা ভন্ডুল করার উদ্দেশ্যে এটা করা হয়েছে। প্রার্থীর অভিযোগের যথাযথ তদন্ত দাবি করেছি আমরা।’’ এ দিন সকালে ওই ওয়ার্ডের গোপালগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে বক্তৃতা দিচ্ছেন ছাতনার তৃণমূল বিধায়ক শুভাশিস বটব্যাল। সঙ্গে রয়েছেন প্রার্থী উদয় ভকত ও তাঁর অনুগামীরা। সভা শেষে শুভাশিসবাবু বলেন, “ওদের পথসভা আছে, এ কথা আমার জানা ছিল না।’’

উদয়বাবুর স্বীকারোক্তি, “আমরা মাইকের অনুমতি নিয়েই সভা করেছি। তা ছাড়া অত মাইকের ব্যবহারও হয়নি। ওদের (নির্দল প্রার্থী) যে সভা আছে, প্রশাসন সে ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানাইনি।’’ মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “দু’পক্ষেরই মাইকের অনুমতি ছিল। ওই পথসভায় বেশি মাইকের ব্যবহার হয়েছে কিনা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলি এ বার কতটা নিরাপদ থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। কেন্দ্রীয় বাহিনী জেলায় থাকবে না। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, যে বুথে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র এক থেকে তিনটি, সেখানে দু’জন বন্দুকধারী কনস্টেবল এবং যে বুথে চারটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থাকবে সেখানে এক জন এএসআই-এর সঙ্গে চার জন বন্দুকধারী কনস্টেবল থাকবেন। এ ছাড়া প্রতিটি বুথে একজন করে লাঠিধারী কনস্টেবল থাকবেন।

এই পরিকাঠামো নিয়ে প্রশাসন কি সুষ্ঠ ভাবে ভোট করতে পারবে, প্রশ্ন বিরোধীদের। সিপিএমের বাঁকুড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রতীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শাসকদল একাধিকবার নিয়ম নীতি ভেঙেছে। আমরা অভিযোগ করলেও কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখিনি নির্বাচন কমিশনকে। রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে হবে বলে আমাদের মনে হচ্ছে না।’’ বিজেপি-র রাজ্য সহ সভাপতি সুভাষ সরকার বলেন, “রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। কলকাতা পুরভোটেও ওরা ব্যর্থ। গোটা রাজ্যের পরিস্থিতি দেখে বাঁকুড়ায় শান্তিপূর্ণ ভোট কতটা হবে, তা শনিবারের পরেই বলা যাবে।’’ জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার অবশ্য ভোট শান্তিপূর্ণ করাতে পুলিশ সব রকম পদক্ষেপ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরূপ খাঁ দাবি করেছেন, “মানুষ বাম আমলে স্বাধীন ভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন না। এ বার পারবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement