পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ

নলহাটিতে শক্তি বাড়াল তৃণমূল

তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকেই মানেন, রামপুরহাট মহকুমায় সবচেয়ে বেশি সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে এই ব্লকে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা মাথাব্যথা বাড়িয়েছিল জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। এই রদবদলে খুশি তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নলহাটি শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০১:১৬
Share:

নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএমের রেজাউল হক-সহ সমিতির আরও কয়েক জন সদস্য তৃণমূলে যোগ দিলেন। এই দলবদলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নলহাটি ২ ব্লকে তাদের শক্তি অনেকটাই বাড়ল বলে তৃণমূল নেতৃত্বের মত। শুক্রবার নবাগতদের হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন দলের রামপুরহাট মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্য, নলহাটি ২ ব্লক সভাপতি বিভাষ অধিকারীরা। ত্রিদিববাবুর কথায়, ‘‘জেলার ১৯টি ব্লকের সব ক’টিই পঞ্চায়েত সমিতিই এ বার আমাদের দখলে এল।’’

Advertisement

তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকেই মানেন, রামপুরহাট মহকুমায় সবচেয়ে বেশি সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে এই ব্লকে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা মাথাব্যথা বাড়িয়েছিল জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। এই রদবদলে খুশি তাঁরা। ২০১৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৭ সদস্যের নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে দলগত অবস্থান ছিল সিপিএম ১৪, ফরওয়ার্ড ব্লক ২, কংগ্রেস এক। তৃণমূলের কোনও সদস্য নির্বাচিত হননি। একই ভাবে নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন বারা ১, বারা ২, ভদ্রপুর ১, ভদ্রপুর ২, নওয়াপাড়া, শীতলগ্রাম— এই ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচনে তৃণমূল তেমন সাফল্য পায়নি। ছ’টি পঞ্চায়েতের মোট ৮৭টি আসনের মধ্যে সিপিএম একক ভাবে পেয়েছিল ৫৭টি আসন, দ্বিতীয় স্থানে থাকা কংগ্রেসের দখলে ছিল ২১টি আসন, বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক তিনটি এবং সোশ্যালিস্ট পার্টি একটি আসন দখল করে। বিজেপি একটি আসন দখল করে।
তৃণমূলের ঝুলিতে ছিল চারটি আসন। ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের একটিতেও তৃণমূলের প্রধান নির্বাচিত হননি। আবার জেলা পরিষদের দুটি আসনেও সিপিএম জয়ী হয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় বামফ্রন্ট প্রার্থী কামরে ইলাহির চেয়ে কম ভোট পেয়েছিলেন। এর পরে বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী কংগ্রেসের মিল্টন রসিদও তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন।

এ দিকে, গত লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে কংগ্রেস, সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে নির্বাচিত সদস্যদের ভাঙিয়ে নিজেদের দলে আনতে শুরু করে শাসকদল। বিরোধীদের দখলে থাকা শীতলগ্রাম, নওয়াপাড়া, ভদ্রপুর ২ এই তিনটি পঞ্চায়েতে অনাস্থা এনে তৃণমূল নিজেদের দখলে আনে। এর ফলে বর্তমানে নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতির ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৮৭ জন পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে দলগত অবস্থান সিপিএম ৩৮, কংগ্রেস ১০, ফরওয়ার্ড ব্লক ৩। আর তৃণমূলের পক্ষে চার এর জায়গায় বর্তমানে ৩৪ জন সদস্য।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই রামপুরহাট মহকুমার নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা সিপিএমের লোহাপুর এরিয়া কমিটির সদস্য রেজাউল হককে দলে টানতে সক্ষম হল তৃণমূল। তাঁর সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নওয়াপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সঞ্জয় মার্জিত তৃণমূলে যোগদান করেন। এর আগে শীতলগ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য সিপিএমের চুমকি মাল এবং ভদ্রপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কংগ্রেসের বরুণ ভট্টাচার্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এর ফলে বর্তমানে ১৭ সদস্যের নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের চার জন সদস্য হল। দলগত অবস্থান হল সিপিএম ১১, ফরওয়ার্ড ব্লক দুই, তৃণমূল চার।

দলবদলের প্রশ্নে রেজাউল জানান, উন্নয়নের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। তাঁর কথায়, ‘‘যতটুকু দেখেছি রাজ্যের শাসকদলের মাধ্যমেই এলাকায় উন্নয়ন সম্ভব। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গী হতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।’’ দলত্যাগ প্রসঙ্গে সিপিএমের লোহাপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক দুলাল সরকার জানান, রেজাউল দলের কোনও বৈঠকে ইদানীং আসতেন না। গুরুত্বপূর্ণ কাজেও ভূমিকা নিতেন না। দুলালবাবুর কথায়, ‘‘সেই কারণে দলবিরোধী কার্যকলাপে ১ মার্চ রেজাউল হককে সাসপেন্ড করেছেন নেতৃত্ব।’’ এলাকায় সংগঠন ধরে রাখার ব্যাপারেও তিনি আশাবাদী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement