স্বরূপ সেনের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলের পতাকা। নিজস্ব চিত্র
বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের দল বদল করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার হিড়িক থামছে না জেলায়। সেই তালিকায় নবতম সংযোজন বাঁকুড়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা স্বরূপ সেন।
বাঁকুড়া শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫ বছর ধরে সিপিএমের কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করেছেন স্বরূপ। গত পুরভোটেও তৃণমূল প্রার্থীকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছেন। পুরসভায় বিরোধী দলনেতা হিসেবে নানা বিষয়ে তাঁকে সরব হতে দেখা গিয়েছে। সেই স্বরূপ রবিবার দুপুরে বাঁকুড়ার জেলা তৃণমূল অফিসে যান। তাঁর হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খান।
এ দিনই আবার স্বরূপের নিজের ওয়ার্ডে তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছে। কারা ওই পোস্টার দিয়েছে, সেটা উল্লেখ করা নেই। পোস্টারে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ৫০ লক্ষ টাকা চুরির দায়ে ফেঁসে নিজেকে বাঁচাতে তৃণমূলে যোগ দিতে চাইছেন স্বরূপ। বিষয়টিকে তিনি অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ। স্বরূপ বলেন, ‘‘কারা পোস্টার দিয়েছে জানি না। এটা অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়।’’
তবে সিপিএমও স্বরূপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে এ দিন। দলের জেলা সম্পাদক অজিত পতির বক্তব্য, “যতদুর জানি দালালচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন স্বরূপ। ঘটনাটি দল জানতে পারলে তাঁকে বহিস্কার করা হতে পারে ভেবে ভয় পেয়েছিলেন। তাই আগেভাগেই তৃণমূলে চলে গিয়েছেন।” এই অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন স্বরূপ। দলবদল কেন? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘উন্নয়নের স্বার্থেই তৃণমূলে এলাম। এলাকার মানুষকে আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া আমার লক্ষ্য।’’
গত পুর নির্বাচনে বাঁকুড়া শহরের ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতে জয়ী হয় তৃণমূল। পাঁচটি ওয়ার্ড বামেদের, চারটি নির্দল ও দু’টি বিজেপির দখলে ছিল। তিন নির্দল ও এক বাম কাউন্সিলর আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। স্বরূপও তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বাঁকুড়া পুরসভায় বাম কাউন্সিলর রইলেন তিন জন। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “২২ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার তৃণমূলের সংগঠন আরও মজবুত হবে। উন্নয়নের কাজেও গতি আসবে।”
এ দিন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সহ-সভাপতি তথা অগ্রগামী কিসানসভার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মানিক মুখোপাধ্যায় এবং রাইপুর, ওন্দার মতো কয়েকটি ব্লকে পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী বিরোধী দলের কিছু সদস্য ও কর্মী। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খান বলেন, “এ দিন অন্য দল থেকে দেড় হাজার মানুষ আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন।”
মানিক বলেন, “দীর্ঘ বাম আমলে এই রাজ্যের কৃষকদের উন্নয়নের জন্য কিছুই করা হয়নি। তৃণমূল সরকার এই ক’বছরেই অনেক কাজ করেছে। উন্নয়নের স্বার্থেই তৃণমূলে এলাম।” ফরওয়ার্ড ব্লকের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অনাথ মল্ল অবশ্য বলছেন, “মানিকবাবু আগেও একাধিক বার দল ছেড়ে গিয়েছিলেন। ওঁর বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।”
রাইপুর ব্লকের শ্যামসুন্দপুর গ্রামপঞ্চায়েতে গত ভোটে নির্দল প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান। এ দিন ওই পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থীদেরও তৃণমূলে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে। রাইপুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি রাজকুমার সিংহের দাবি, “নির্দলরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় শ্যামসুন্দরপুর পঞ্চায়েতটি আমাদের দখলে এল।”
এ দিন দলবদলের সময়ে জেলা তৃণমূলের অফিসে সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয়েছিল। স্বরূপের সঙ্গে দলবদল করতে সেখানে ঢুকছিলেন ওয়ার্ডের কিছু সিপিএম কর্মীও। উপস্থিত তৃণমূল কর্মীদের একাংশের সঙ্গে তাঁদের গোলমাল বেধে যায়। অরূপ খানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।