বক্তা: রাস ময়দানে সিপিএমের জনসভায় মহম্মদ সেলিম। নিজস্ব চিত্র
কথাবার্তায় ‘আত্মবিশ্বাসী’ দেখালেও সমাবেশে ভিড় কেমন হবে, তা নিয়ে সিপিএম জেলা নেতৃত্বের মধ্যে চাপা আশঙ্কা ছিল। রবিবার সমাবেশে পুরুলিয়ার রাস ময়দান উপচে না পরলেও সভার ভিড় দেখে ‘তৃপ্ত’ সিপিএম। ‘তৃপ্তি’ এতটাই যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র বলেই ফেলেন, ‘‘২০১১ সালের পর পুরুলিয়ার কোনও সমাবেশে এত ভিড় দেখিনি।’’ আর সভার মূল বক্তা দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই ভিড় বলে দিচ্ছে, রাস্তায় রয়েছে বামপন্থীরাই।’’
গত লোকসভা ভোটে পুরুলিয়াতেও নজিরবিহীন বিপর্যয় ঘটেছে বামেদের। পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে বামেদের ভোট। এই অবস্থায় সিপিএমের এ দিনের সমাবেশে ভিড় কেমন হয়, তা নিয়ে কৌতুহল ছিল। ভিড় দেখে জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে পেরেছে সিপিএম।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষ পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল সিপিএম। বান্দোয়ান থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার হেঁটে এ দিন সমাবেশে যোগ দেন প্রায় আড়াইশো মহিলা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অনেক ছাত্রীও। দলের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের দাবি, ‘‘১২-১৩ হাজার লোক এসেছিলেন সভায়।’’ যদিও পুলিশের মতে, মেরেকেটে হাজার চারেক লোক ছিল মাঠে।
বিজেপি এবং তৃণমূলের ‘গাঁটছড়া’কেই আক্রমণের মূল বিষয় করেন তাঁরা। জলঙ্গীতে এনআরসি-বিরোধী কর্মসূচিতে গুলিচালনার ঘটনায় তৃণমূলকে কটাক্ষ করে সেলিম বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী গুলি করার কথা বলছেন। জলঙ্গিতে গুলি চালাচ্ছে তৃণমূল। কে কার কর্মসূচি পালন করছে বোঝা যাচ্ছে না।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রীকে একই বন্ধনীতে টেনে তাঁর তির্যক মন্তব্য, ‘‘মোদী-দিদির মধ্যে ছায়াযুদ্ধ চলছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে সেলিম বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যখন পার্লামেন্টে আলোচনা হচ্ছে, তখন আপনার সাংসদেরা সেখানে ছিলেন না। কলকাতায় রাজভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেরিয়ে দিদি বললেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে এই আইনের সংশোধন করতে বলেছেন। আইনের সংশোধন রাজভবনে হয়? নাকি পার্লামেন্টে হয়?’’ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুকেও খোঁচা দিতে ছাড়েননি সেলিম। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এক জন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, দিলীপ ঘোষ কী করে বলেছেন যে, দু’কোটি মানুষকে এখান থেকে তাড়াবেন। আমি বললাম, যে ভাবে উনি গরুর দুধে সোনা আবিষ্কার করেছিলেন, সে ভাবেই করবেন।’’ এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেন প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া। বলেন, ‘‘দেশের কোটি কোটি মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, দেশকে তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষ রাখবেন। আজ তা বিপন্ন।’’ এনপিআর নিয়ে সিপিএমের অবস্থান, ‘জবাব আমরা দেব না।’ সেই কথা মনে করিয়ে দলের কর্মীদের উদ্দেশে অমিয়বাবুর পরামর্শ, ‘‘আপনারা প্রতিটি বাড়িতে যান। মানুষকে বোঝান। এনপিআর নিয়ে কোনও জবাব আমরা দেব না।’’
সিপিএমের সভাকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল এবং বিজেপি। তৃণমূল জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওঁরা কী বলেছেন, জানা নেই। গোটা দেশ দেখেছে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রথম পথে নেমেছেন আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ আর বিজেপি জেলা সভাপতির বক্তব্য, ‘‘ঘোলাজলে মাছ ধরতে চাইছে সিপিএম।’’ তৃণমূল-বিজেপি ‘ছায়াযুদ্ধ’ নিয়ে সেলিমের বক্তব্য প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগরবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাদের ছেলেদের বিরুদ্ধেই তো মামলা হচ্ছে। সিপিএমের কর্মীদের বিরুদ্ধে তো হচ্ছে না।’’