সিপিএম প্রার্থীর গাড়িতে ইট

ভোটের মুখে সিপিএম তৃণমূল বিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বরাবাজার। বুধবার দুপুরে বরাবাজারের ফতেপুর গ্রামে একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আনে সিপিএম ও তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বরাবাজার শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০২:৩৬
Share:

ভোটের মুখে সিপিএম তৃণমূল বিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বরাবাজার। বুধবার দুপুরে বরাবাজারের ফতেপুর গ্রামে একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আনে সিপিএম ও তৃণমূল। বান্দোয়ান কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক তথা জোট প্রার্থী সিপিএমের সুশান্ত বেসরার প্রচার গাড়ির কাঁচ ভাঙার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, ফতেপুর গ্রামে তাঁদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে সিপিএম। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

Advertisement

সুশান্তবাবুর অভিযোগ, নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী প্রচারের কাজে বরাবাজারের সিন্দরি থেকে শিমুলডাঙা গ্রামে যাওয়ার সময় ফতেপুর গ্রামে দশ-বারো জন তৃণমূল কর্মী তাঁদের গাড়ি আটক করে। তাঁদের মাইক বন্ধ করতে বলে হুমকি দেওয়া হয়। দুই দলের কর্মীদের মধ্যে শুরু হয় বচসা। সুশান্তবাবুর দাবি, তিনি কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সেই সময় হঠাৎ এক তৃণমূল কর্মীর ছোঁড়া ইট এসে পড়ে তাঁদের প্রচারের গাড়িতে। গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায়। তিনি বলেন, ‘‘অশান্তি এড়াতে কর্মীদের নিয়ে সিন্দরি বাজারে চলে যাই। খবর পেয়ে সেখানে দলের আরও কর্মীরা চলে আসেন।’’

দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে সিন্দরি বাজেরের কাছে বরাবাজার-মানবাজার রাস্তা অবরোধ করেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। পরে পুলিশ এসে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।

Advertisement

সিন্দরি পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের বিশ্বজিৎ মাহাতো অবশ্য সুশান্তবাবুর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, বুধবার দুপুরে সিপিএমের প্রচার যখন ফতেপুর গ্রামে উপর দিয়ে যাচ্ছিল তখন গ্রামের দলীয় কার্যালয়ে একটি সভা হচ্ছিল। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাইকের আওয়াজ বাড়িয়ে দেন সিপিএম কর্মীরা।

তাঁর অভিযোগ, ‘‘দু’জন তৃণমূল কর্মী গিয়ে সভার বিষয়টি জানিয়ে মাইকের আওয়াজ কমানোর অনুরোধ করলে তাতে কান দেননি সিপিএম কর্মীরা। উল্টে গাড়ি থেকে নেমে এসে তাঁরা তৃণমূল কর্মীদের এক জনকে ধাক্কা মারেন।’’

বিশ্বজিৎবাবুর অভিযোগ, তারপর দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে সাইনবোর্ড এবং দলীয় পতাকা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেন সিপিএম কর্মীরা। খবর পেয়ে এলাকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা ছুটে আসেন। ততক্ষণে সিপিএমের প্রচারের দলটি সিন্দরি বাজারে দিকে চলে যায়। তাঁর দাবি, পুলিশ না এসে পড়লে এ দিন বড়সড় গোলমাল বাঁধার আশঙ্কা ছিল।

এ দিন দুপুরে ফতেপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইটের টুকরো। মাটিতে পড়ে রয়েছে তৃণমূলের পতাকা এবং সাইনবোর্ড। যদিও সুশান্ত বেসরার দাবি, ‘‘সিন্দরি বাজারে অবরোধ চলাকালীন পুলিশের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে নাটক করেছে তৃণমূল। পুলিশ এলাকায় গিয়ে তদন্ত করলেই আসল বিষয়টি জানতে পারবে।’’

বরাবাজারের ভাগাবাঁধ গ্রামেও সুশান্ত বেসরার একটি সভার সময় মাইক বাজিয়ে সমস্যা তৈরি করার অভিযোগ তুলেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা কংগ্রেসের জেলা নেতা রামজীবন মাহাতো। তাঁর দাবি, বুধবার বিকেলে জোট প্রার্থীর সমর্থনে গ্রামে একটি সভার আয়োজন করছিলেন তাঁরা। সেই সময় প্রায় একশো মিটার দূরে তৃণমূল মিছিল এবং পথসভা শুরু করে। জোট প্রার্থীর সভার দিকে মাইকের মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

পাশাপাশি, ঢিল ছোঁড়ার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপের গাড়িতেও। মঙ্গলবার রাতের ঘটনা। মণীন্দ্রবাবু জানান, বরাবাজারের শুকুরহুটু অঞ্চলে প্রচার সেরে রাত ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তাঁর আগে ছিল কংগ্রেসের জেলা নেতা রামজীবন মাহাতোর গাড়ি। রাজডি গ্রাম পার হওয়ার সময় তাঁদের চোখে পড়ে ঝাণ্ডা নিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছেন কয়েক জন তৃণমূল কর্মী। হঠাৎ গাড়ি লক্ষ্য করে দু’টি ঢিল উড়ে আসে বলে অভিযোগ।

মণীন্দ্রবাবুর দাবি, একটি ঢিল রাস্তার পাশের বিদ্যুতের খুঁটিতে এসে লাগে। অন্যটি এসে পড়ে তাঁর গাড়ির সামনে। তাঁর দাবি, সেই সময় গাড়ির গতি কম ছিল। চালক দ্রুত গাড়ি বার করে নিয়ে আসেন। বরাবাজার থানায় ফোন করে বিষয়টি জানান মণীন্দ্রবাবু।

রাতেই ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করে যায় পুলিশ। রামজীবনবাবুর অভিযোগ, ঢিল এসে লেগেছে তাঁর গাড়িতেও। তাঁর অভিযোগ, এই ঘটনায় শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জড়িত। তবে ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement