সিউড়ির ডি আর ডি সি হলে বক্তব্য রাখছেন মহ :সেলিম।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম জেলার মধ্যে রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় বাম-কংগ্রেস জোটের ফল তুলনামূলক ভাল হলেও জেলার অন্যত্র কার্যত কোনও প্রভাবই ফেলতে পারেনি জোট। একই জেলায় এমন ভিন্ন ফলের কারণ খুঁজতে শনিবার দলের বীরভূম জেলা কমিটি এবং গণ-সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
সূত্রের খবর, সিউড়ির ডিআরডিসি হলে হওয়া বৈঠকে এ দিন তথ্য তুলে ধরে সেলিম দেখান, রাজ্য তথা জেলা জুড়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের ‘তত্ত্ব’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হলেও তা সব জায়গায় সফল হয়নি। যেখানে সফল হয়েছে, সেখানে কেন হয়েছে এবং যেখানে সফল হয়নি, সেখানে কেন হয়নি, তা তিনি খুঁজে বার করার নির্দেশ দেন জেলা নেতৃত্বকে। একই সঙ্গে বাম ও কংগ্রেসের জোট আদৌ কতটা সফল, তা নিয়ে দলীয় মতানৈক্যের বিষয়টিও ওঠে এ দিনের বৈঠকে। জানা গিয়েছে, বৈঠকে সেলিম জানিয়েছেন, এই বিষয়ে যা আলোচনার, তা পার্টি কংগ্রেসে হবে। সেখানে যা সিদ্ধান্ত হবে, তাই সকলকে মেনে চলতে হবে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর প্রাক্তন সদস্য মতিউর রহমান এবং বর্তমান জেলা কমিটির সদস্য অরুণ মিত্রের স্মরণসভা এ দিন অনুষ্ঠিত হয় ডিআরডিসি মঞ্চে। সেখানেই যোগ দিতে সিউড়ি এসেছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক। অনুষ্ঠানের আগে লোকসভা নির্বাচনে জেলার সার্বিক ফলাফল নিয়ে আলোচনার জন্য জেলা সিপিএমের প্রায় ২০০ সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের রাজ্য সম্পাদক। সূত্রের খবর, ফল বিশ্লেষণে উঠে আসে, বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মুরারই, হাঁসন ও নলহাটি বিধানসভা এলাকায় বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মিল্টন রশিদ ২৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন। অথচ বাকি চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ১০ শতাংশেরও কম। আলোচনায় উঠে আসে, রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীরা অনেক বেশি সক্রিয়তার সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষের দৈনন্দিন সমস্যায় পাশে দাঁড়িয়েছেন, তার প্রতিফলন পড়ছে ভোটবাক্সে।
মহম্মদ সেলিম বলেন, “আমরা আমাদের হারানো ভোট ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছি। বিজেপি ও তৃণমূল যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের ছবি তুলে ধরছিল, তা প্রথম তিন দফার ভোটে অনেকটাই ভেঙে যায়। তবে, পরের দিকে সাম্প্রদায়িক গোলমাল ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আবার তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়েছে। আগামী দিনে মানুষের পাশে থাকতে পারলেই এই দ্বিমুখী লড়াইয়ের মিথ্যা গল্প ভেঙে যাবে।”
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিপিএমের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েই সাধারণ মানুষ পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিল। ওরা এখন যতই বন্ধ ঘরে আলোচনা করুক, মানুষ ওদের পাশে নেই। বিজেপি বিরোধী লড়াইয়েও যে ওদের কোনও অস্তিত্ব নেই, তা মানুষ বুঝে গিয়েছে।” বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি বাবন দাসের কটাক্ষ, “জেলায় তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপিকে হারানো ছাড়া, বাম-কংগ্রেস জোটের আর কোনও অবদান নেই। কেন্দ্রে তৃণমূলের সঙ্গে ইন্ডিয়া জোট নামক মহাকুম্ভে এক সঙ্গে বৈঠক করে ওরা রাজ্যে বিরোধিতার নাটক করে। মানুষ ওদের দূরে ছুড়ে ফেলে এর জবাব দিয়েছে, আগামীতেও দেবে।”