মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে বিক্ষোভে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। বুধবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের ‘দুর্নীতি’ এবং তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজেপি বিধায়কদের ‘অনীহা’— পুরুলিয়ায় পঞ্চায়েত সমিতি অভিযানে সিপিএমের হাতিয়ার এই জোড়া ফলা। বুধবার সিপিএম জেলায় পঞ্চায়েত সমিতি অভিযান শুরু করেছে। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, শতরূপ ঘোষ থেকে শুরু করে অমিয় পাত্র, প্রদীপ রায়— সব সিপিএম নেতাই এই দুই হাতিয়ার প্রয়োগ করেছেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগ, গত ১১ বছরে রাজ্যে ‘দুর্নীতি’ সীমা ছাড়িয়েছে। বিজেপি সম্পর্কে সিপিএমের বক্তব্য, পুরুলিয়ায় ছ’জন বিধিয়ক থাকা সত্ত্বেও মানুষের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন গড়ায় ‘অনীহা’ রয়েছে তাঁদের।
সিপিএমের দাবি, পঞ্চায়েত সমিতি অভিযানে ভাল সাড়া মিলেছে। এ দিনের কর্মসূচিতে ভিড়ের বহর দেখে জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের বড় অংশ মনে করছেন, আস্তে-আস্তে পুরুলিয়ায় বিরোধী পরিসর দখল করছে বামেরা। যদিও তা মানতে নারাজ বিজেপি। আর তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া সিপিএমকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘ওদের ব্লক স্তরের কর্মসূচিতে যত লোক হচ্ছে, তার থেকে ঢের বেশি জমায়েত হয় পঞ্চায়েত স্তরে আমাদের কর্মসূচিতে।”
নভেম্বরে গ্রাম সংসদের সভা ডেকে পঞ্চায়েতকে হিসাব পেশ করতে হবে, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে যন্ত্রের ব্যবহার চলবে না, বেশি শ্রমদিবস সৃষ্টি করতে হবে— এমন নানা দাবিতে পুরুলিয়ার ২০টি পঞ্চায়েত সমিতিতে দু’দিনের ‘অভিযান কর্মসূচি’ নিয়েছে সিপিএম। এ দিন মানবাজার ২, বরাবাজার, বাঘমুণ্ডি, আড়শা, মানবাজার ১, কাশীপুর, রঘুনাথপুর ২, রঘুনাথপুর ১ এবং পাড়া পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় সেই কর্মসূচি হয়। হাজির ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাসুদেব আচারিয়া, অমিয়, রাজ্য কমিটির মীনাক্ষী, শতরুপ এবং দলের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়-সহ অনেকে।
মীনাক্ষীর বক্তব্য, ‘‘পুরুলিয়ায় বিধানসভায় একাধিক আসনে বিজেপি জিতেছে। জেলার বাসিন্দাদের সমস্যা নিয়ে লড়াই তো বিজেপির করা উচিত ছিল।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতে তৃণমূলের সীমাহীন ‘দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে মানুষকে একজোট করতেই লড়াইয়ে নেমেছি। রঘুনাথপুর বিধানসভা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর (সুভাষ সরকার) লোকসভা কেন্দ্রভুক্ত। এখানে শিল্পায়নে কেন্দ্রের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।’’
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর পাল্টা খোঁচা, ‘‘বিজেপির বিধায়কেরা কী কাজ করছেন, জেলার সমস্যা নিয়ে লড়াই করছেন কিনা, তা জেলাবাসী জানেন। এ সব দেখতে গেলে লোক লাগে। সিপিএমের লোকই নেই।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি বলছেন, ‘‘পুরুলিয়ার বাসিন্দারা ৩৪ বছরের বাম-সন্ত্রাস দেখেছেন। উন্নয়নের স্বার্থে তাই তৃণমূলকেই বেছে নিয়েছেন। তাঁরা আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।”