রেললাইন থেকে উদ্ধার হল যুগলের দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম সৌরেন ঘোষ (২০) ও লক্ষ্মীপ্রিয়া হোতা (১৭)। শনিবার বেলার দিকে আদ্রা ডিভিশনের আদ্রা-বাঁকুড়া শাখার সিরজাম স্টেশনের অদূরে রেললাইন থেকে তাঁদের দেহ উদ্ধার করেছে আদ্রার রেলপুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, আত্মহত্যা করেছে ওই তরুণ-তরুণী। মৃতদেহের কাছ থেকে উদ্ধার করা একটি ব্যাগে দু’জনের লেখা ‘সুইসাইড নোট’ মিলেছে।
সৌরেনের বাড়ি বাঁকুড়ার তালডাংরায়। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই থানারই পাঁচমুড়ার তামলিবাঁধে থাকতেন। আর লক্ষ্মীপ্রিয়া বাঁকুড়ারই সিমলাপালের হরিণাগুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। সে স্থানীয় একটি হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। এ দিন দুপুরের দিকে তরুণীর পরিবারের লোকজন আদ্রায় এসে দেহ শনাক্ত করেছেন। সৌরেনের বাড়ির লোকেরা সন্ধ্যায় আদ্রায় এসে দেহটি শনাক্ত করেন। আদ্রা রেলপুলিশের দাবি, শুক্রবার রাতে দু’জনে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
রেলপুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোরে সিরজাম স্টেশন থেকে আদ্রা রেল পুলিশের থানায় লাইনে দু’টি দেহ পড়ে থাকার খবর আসে। আদ্রা-বাঁকুড়া শাখার সিরজাম ও ঝাঁটিপাহাড়ি স্টেশনের মাঝে রয়েছে ডাংরা নদী। এই নদীই দুই জেলার সীমানা। রেলপুলিশ গিয়ে দেহ দু’টি উদ্ধার করে আদ্রায় নিয়ে আসে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একটি ব্যাগে ছিল দু’জনে লেখা সুইসাইড নোট। লেখার বয়ান দেখে রেলপুলিশের পর্যবেক্ষণ, দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কোনও কারণে তাঁদের পরিবারের তাতে আপত্তি ছিল। সেই কারণেই আত্মহত্যা করেছেন তাঁরা। এ ছাড়াও ব্যাগ থেকে তিনটে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, ছাতা, খাতা ইত্যাদি পেয়েছে পুলিশ।
এ দিকে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকেই নিখোঁজ ছিল ওই তরুণ-তরুণী। সন্ধ্যায় মেয়ে বাড়ি না ফেরায় সে দিন লক্ষ্মীপ্রিয়ার বাবা সুশান্তবাবু সিমলাপাল থানায় মেয়ের নামে নিখোঁজ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন। এ দিন দুপুরের দিকে এক আত্মীয়কে নিয়ে তিনি আদ্রা রেল পুলিশের থানায় এসে মেয়ের দেহ শনাক্ত করেন। তারপরেই দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পুরুলিয়ায় পাঠানো হলে তাঁরা সেখানে যান।
সুশান্তবাবু জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়ে টিউশন থেকে না ফেরায় তিনি খোঁজ নিতে শুরু করেছিলেন। পরে তালডাংরায় সৌরেনের বাড়িতে মেয়ের খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও খোঁজ মেলেনি।
সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘তালডাংরা থেকে ফিরে সিমলাপাল থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ ছবি-সহ অন্যান্য তথ্য চাওয়ায় বাড়ি ফিরে শনিবার সকালে ফের থানায় গিয়েছিলাম। সেখানেই মেয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারি।” বাঁকুড়ার পুলিশ জানিয়েছে, সৌরেন পাঁচমুড়ায় থাকতেন। সেখানেই লক্ষ্মীপ্রিয়ার এক আত্মীয়ের বাড়ি। সেই সূত্রেই দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ ঘটে ও সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
কিন্তু ঘটনা হল দুই তরুণ-তরুণী দক্ষিণ বাঁকুড়া থেকে এসে রাতের বেলায় পুরুলিয়ার সীমান্তে কেন চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে গেলেন বিষয়টি ভাবাচ্ছে পুলিশকে। রেলপুলিশের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘সুইসাইড নোটে লেখা দু’জনের বয়ান বা অন্যান তথ্য থেকে মোটামুটি পরিষ্কার দু’জনের সম্পর্ক কোনও কারণে তাঁদের পরিবার মেনে নিতে পারেননি বলেই তারুণ্যের আবেগে দু’জনে আত্মহত্যা করেছেন।’’