—প্রতীকী ছবি।
আবাস যোজনায় পাওয়া ঘরের কোনও অস্তিত্বই নেই। অথচ, চার ধাপে তোলা হয়ে গিয়েছে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা! আরও অভিযোগ, যাঁর নামে আবাস যোজনার ঘর বরাদ্দ হয়েছে এবং টাকা তোলা হয়েছে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ২০১৫ সালে। শুধু তাই নয়, মৃতার জব কার্ডের আইডি নম্বর ব্যবহার করে গত দু’বছর ধরে নিয়মিত অন্যের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে বলেও অভিযোগ।
নলহাটি ১ ব্লকের কলিঠা পঞ্চায়েতের শেরপুর এলাকার খুশিপুর গ্রামের এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। মৃতা তোজেবা বিবির বৌমা সহ এলাকাবাসীর একাংশ তথ্য-প্রমাণ সহ সম্প্রতি বিডিও (নলহাটি ১) এবং রামপুরহাট মহকুমাশাসকের কাছে জানিয়ে অভিযুক্তদের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। এমনিতে আবাস যোজনায় ধাপে ধাপে টাকা বরাদ্দ করা হয়। তার পরে বাড়ি তৈরির অগ্রগতির নিরিখে দেওয়া হয় টাকা।
তার পরেও এমনটা হয়েছে জেনে বিস্মিত মহকুমা প্রশাসনও।
প্রশাসনের একটি সূত্রের কথায়, এই দুর্নীতি কোনও এক জনের পক্ষে করা সম্ভবই নয়। যাঁরা এই অভিযোগ প্রকাশ্যে এনেছেন, তাঁদেরও একই দাবি। নিয়ম হল, ব্লক থেকে যে ব্যক্তির নামে ঘর তৈরির টাকা এসেছে, সেই তালিকা পঞ্চায়েতে পাঠানো হয়। পঞ্চায়েত নিযুক্ত কর্মী উপভোক্তার পুরনো বাড়ির ছবি তুলে পাঠান। পরে উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়। তখন বাড়ির তৈরির কাজ শুরু করেন উপভোক্তা। বাড়ি কিছুটা তৈরির পরে আবার ছবি তোলা হয়। পরে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয়।
তৃতীয় বারও ফের একই উপায়ে টাকা দেওয়া হয়। বাড়ি তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে যাঁর নামে বাড়ি হয়েছে, তাঁকে ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে ৯০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া হয়।
গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, শেরপুর গ্রামের পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ শাখা ব্রাঞ্চ ও প্রাক্তন মেম্বার মিলিত ভাবে দুর্নীতি করছে।
প্রশাসন জানিয়েছে, সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি এই চক্রে আর কেউ যুক্ত আছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। বিডিও (নলহাটি ১) জগদীশচন্দ্র বাড়ুই বলেন, ‘‘মহকুমাশাসকের অফিস থেকে আমার ব্লকে শেরপুর পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ শাখা ব্যাঙ্কের দুর্নীতি নিয়ে একটি চিঠি এসেছে। আমি কলিঠা পঞ্চায়েতের প্রধানের কাছে ঠিক কী হয়েছে, তা জানতে বলেছি। মৃত মহিলার নাম করে বাড়ি তৈরির টাকা আত্মসাৎ করা কিংবা জব কার্ডের আইডি নম্বর ব্যবহার করে টাকা তোলার ঘটনা প্রমাণিত হলে রেয়াত করা হবে না।’’
তোজেবা বিবির বৌমা ডলি বিবি জানান, তাঁর শাশুড়ি ২০১৫ সালে রামপুরহাট হাসপাতালে মারা যান। ডলির কথায়, ‘‘শাশুড়ি নামে আবাস যোজনার টাকা বরাদ্দ হয়েছে শুনে এলাকার প্রাক্তন সদস্য মনসুর শেখের বাড়ি যাই। কিন্তু, উনি আমার কথায় কোনও গুরুত্ব দেননি। শুধু জানিয়ে দেন, ঘর তৈরির কোনও অর্থ আসেনি। পরে বিভিন্ন অফিস ঘুরে জানতে পারি আমার শাশুড়ির নামে ঘর তৈরির টাকা অন্য কেউ তুলে নিয়েছে। এটা কী করে হল?’’ তাঁর আর্জি, ‘‘ঠিক কী হয়েছে জেনে প্রশাসন সঠিক তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিক।” এ দিকে, বহু চেষ্টা করেও মনসুর শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
কলিঠা পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, গ্রামবাসীর মাধ্যমে শাখা ব্যাঙ্কে আর্থিক তছরুপের বিষয়টি তাঁরা জানতে পারেন। পরে ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসে শেরপুর শাখার সমস্ত নথি বাজেয়াপ্ত করে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাখাটি বন্ধও রাখা হয়েছে।”