কাশীপুরের লহাট গ্রামে তানু হেমব্রম। নিজস্ব চিত্র
ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে তিনটি কিস্তিতে টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরি হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের এক আধিকারিক বাড়ি নির্মাণের কাজ সরেজমিন তদন্তও সেরে এসেছেন। দফতরের ওয়েবসাইটে এমন তথ্যের উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে সেই বাড়ি তৈরিই হয়নি বলে অভিযোগ উঠল পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত কালীদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত লোহাট গ্রামে। এমনকি যে দুই ব্যক্তির নামে বাড়ি তৈরির কথা উল্লেখ রয়েছে, সেই নামের কোনও ব্যক্তির অস্তিত্বও নেই এলাকায়।
সম্প্রতি কাশীপুরের বিডিও-র কাছে এমনই অভিযোগ তুলে তদন্ত দাবি করেছেন এলাকার বিজেপি নেতা হরেন্দ্রনাথ মাহাতো। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘সবে অভিযোগ শুনেছি। তদন্ত হবে।’’
প্রশাসনিক তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-’১৪ ও ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরে ওই গ্রামের জনৈক তরুণ হেমব্রমের নামে দু’টি বাড়ি বরাদ্দ হয়। নাম দু’টি একই হলেও দু’জনের জন্য আলাদা বিপিএল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। হরেন্দ্রনাথবাবুর দাবি, প্রধামন্ত্রী আবাস যোজনার ওয়েবসাইটে এক তরুণ হেমব্রমের নামে যে বিপিএল নম্বরের উল্লেখ রয়েছে, তা ওই এলাকার তাণু হেমব্রমের। আর একটি বাড়ি যে তরুণ হেমব্রমের নামে ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরে বরাদ্দ করা হয়েছে, সেখানে যে বিপিএল নম্বরের ব্যবহার করা হয়েছে তা ওই এলাকার মুর্মু পরিবারের। ওয়েবসাইটে এও জানানো হয়েছে, ২০১৩-’১৪ সালে তরুণ হেমব্রমের নামে প্রকল্পের তিনটি কিস্তিতে মোট ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দা হয়েছে। পরের বছরে তরুণ হেমব্রমের নামে দু’টি কিস্তিতে ৬৩,৭৫০ টাকা বরাদ্দ হয়।
যদিও লোহাট গ্রামের বাসিন্দা তথা কালীদহ পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য পাণ্ডব মুর্মুর দাবি, ‘‘তরুণ হেমব্রম নামে এই গ্রামে কেউই থাকেন না। সরকারি ওয়েবসাইটে এই গ্রামের দু’জন তরুণ হেমব্রম কোথা থেকে এলেন, বোঝা যাচ্ছে না।’’ একই মত ওই গ্রামের বাসিন্দা অর্জুন হাঁসদারও।
পেশায় দিনমজুর তাণু হেমব্রম দাবি করেছেন, ‘‘২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরে আমি কোনও বাড়ি পাইনি। তবে ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে একটা বাড়ি পেয়েছি।’’ অন্য বিপিএল নম্বর যে পরিবারের, সেই মণিলাল মুর্মু দাবি করেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে তরুণ হেমব্রম নামে কেউ থাকেন না। আমাদের জন্য কোনও বাড়িও বরাদ্দ হয়নি।’’ হরেন্দ্রনাথবাবুর প্রশ্ন, ‘‘দুই তরুণ হেমব্রমের নাম তা হলে কোথা থেকে এল? তাঁদের বাড়িই বা কোথায় গেল? অত টাকা তবে কার পকেটে গেল, তা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’
প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বাড়ি তৈরির তিনটি পর্যায়ের ছবি এবং কখন, কত পরিমাণ টাকা এবং চেক নম্বর পঞ্চায়েত থেকে ব্লক অফিসে পাঠানো হয়। পরে ব্লক অফিস থেকে সেই সহ তথ্য দফতরের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। এ ক্ষেত্রে কী ভাবে ওই তথ্য আপলোড হল, তা নিয়ে পঞ্চায়েত ও ব্লক অফিসের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে।
সরেজমিন তদন্তকারী হিসেবে ওয়েবসাইটে যে আধিকারিকের নাম রয়েছে, কালীদহ পঞ্চায়েতের সেই সচিব শঙ্কর বাউরি বলেন, ‘‘ওয়েবসাইটে কী করে ওই ভুল তথ্য উঠেছে জানি না। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।’’ বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধান লক্ষ্মী সোরেনের ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আগের বোর্ডের (২০১৩-২০১৮) পঞ্চায়েত প্রধান উত্তম মণ্ডল দাবি করেন, ‘‘আমি যতদূর জানি, দু’জনের কারও নামেই টাকা ছাড়া হয়নি। কী ভাবে ওই দু’জনের নাম ওয়েবসাইটে আপলোড হল জানি না।’’ ব্লক প্রশাসনের তরফেও ওয়েবসাইটে আপলোডের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। বিডিও (কাশীপুর) সুচেতনা দাস বলেন, ‘‘অভিযোগের তদন্তও শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তে জানা গিয়েছে, দু’জনের মধ্যে এক জনের টাকা ছাড়া হলেও অন্য জনের আটকে রয়েছে। কেউ টাকা তুলেছে কি না, তা দেখা হচ্ছে।’’