প্রতীকী ছবি
পড়শি ঝাড়খণ্ডের গ্রামে এক যুবক করোনা-পজ়িটিভ। তা-ও ১৪ দিন নিভৃতবাসে থাকার পরে! তাতেই আতঙ্কে ঘুম উড়েছে খয়রাশোল ব্লকের বাবুইজোড়ের বাসিন্দাদের। ভয়, তাঁদের এলাকা সংক্রামিত হবে না তো!
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকরতলা থানা এলাকার বাবুইজোড় পঞ্চায়েত লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের বাগডহরি থানার বিক্রমপুর গ্রামের এক যুবকের লালারসের নমুনায় করোনা-পজ়িটিভ মেলায় তাঁকে সোমবার নিয়ে গিয়ে সেখানকার হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে জামতাড়া প্রশাসন। এই খবর চাউর হতেই ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন লাগায়ো বীরভূমের গ্রামগুলির বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, জামতাড়ার যে গ্রামগুলি বীরভূম সীমানা লাগোয়া, সেগুলির মূল বাজার বাবুইজোড়ই। বছরভর প্রতিদিন মানুষজনের এ-পার ও-পার আসাযাওয়া চলতে থাকে। লকডাউনের সময় কাঁকরতলা থানা এলাকার আন্তঃরাজ্য সীমানা সিল। তা সত্ত্বেও মাঠ, জঙ্গলের ভিতর দিয়ে
বেশ কিছু চোরাপথে জিনিসপত্র কেনার জন্য রাতের অন্ধকারে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে এসেছেন জামতাড়ার ওই সব গ্রামের অনেক বাসিন্দাই।
আবার পুলিশকে না জানিয়ে বাবুইজোড়ের দু-এক জন ব্যবসাদারও সীমানার ওপারের লোকজনকে জিনিস বেচেছেন। এখন বাবুইজোড়ের ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, সেই তালিকায় ছিলেন করোনা আক্রান্ত ওই যুবকের সংস্পর্শে থাকা লোকজনও।
সোমবার সকালে ওই যুবক করোনা-আক্রান্ত শোনার পরেই ঝাড়খণ্ডের ওই গ্রাম থেকে আসার চোরাপথগুলিতে বেড়া দিয়েছেন বাবুইজোড়ের মানুষ। অনেকেই নিজেদের গৃহবন্দি করেছেন। আর যে ব্যবসায়ীরা সাময়িক ‘লোভে পড়ে’ রাতের অন্ধকারে বিক্রমপুর-সহ জামতাড়ার গ্রামের লোকজনকে বেশি দামে জিনিস বেচেছেন, তাঁদেরও এলাকার মানুষের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে। সমস্ত জেনে তৎপর হয়েছে দু’টি এলাকার পুলিশও। ঝাড়খণ্ডের সীমানায় একাধিক চেক পোস্ট তৈরি হয়েছে, আগে যেটা ছিল না।
বীরভূম পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ওই যুবক পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ায় গাড়ি চালকের কাজ করেন। বীরভূম-ঝাড়খণ্ড সীমানায় চন্দ্রবাদ এলাকা এবং অজয়ের চারটি ঘাটে পুলিশি পাহারা রয়েছে। লকডাউনের জেরে সেখানে আটকে পড়েন। তবে, গত ৯ এপ্রিল পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে কোনও ভাবে অজয় পেরিয়ে ওই যুবক বিক্রমপুরে পৌঁছন। কিন্তু, গ্রামের লোকজন তাঁকে ঢুকতে না দেওয়ায় বাগডহরি থানার পুলিশ তাঁকে নিভৃতবাসে নিয়ে যায়। ১৪ দিন কাটিয়ে দিন দুয়েক আগেই বাড়ি ফিরেছিলেন ওই যুবক। তার পরে করোনার উপসর্গ হওয়ায় তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করায় জামতাড়া প্রশাসন। রিপোর্ট পজ়িটিভ হয়।
বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘সত্যিই চিন্তাজনক ব্যাপার। ওই যুবকের সংস্পর্শে আসা লোকজন হয়তো এ-পারে এসেছেন। আপাতত বাবুইজোড়ের উপরে নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনে সেখানকার মানুষের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।’’ তবে, শুধুই খয়রাশোল নয়, চিন্তা
বাড়ল জামুড়িয়াতেও।