থার্মাল স্ত্রিনিং দুবরাজপুর থানা। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ আছেন সাত হাজারেরও বেশি মানুষ। তাঁদের কারও জ্বর-সর্দি-কাশি আছে কিনা, তা গ্রামাঞ্চলের আশাকর্মীরা প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছেন বলে দাবি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। আবার নেপাল, চিন, সৌদি আরব-সহ বিদেশ থেকে আসা ১৪০ জনেরও বেশি কিসান মান্ডি বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কোয়রান্টিনে আছেন। তাঁদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু থার্মাল স্ক্রিনিং করার প্রয়োজনীয় ‘থার্মাল গান’ কাছে না থাকায় তাঁদের কাজে অসুবিধা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, থার্মাল গান না থাকায় কোয়রান্টিনে থাকা অনেকের দেহের তাপমাত্রা নিতে হচ্ছে সাধারণ থার্মোমিটারে। সে ক্ষেত্রে একটি থার্মোমিটার দিয়ে একাধিক জনের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। ফলে, কেউ জ্বর জ্বর লাগছে বললে, জ্বর আছে ধরে নিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা চালু রাখতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের।
রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ছবিটা বিশেষ আলাদা নয়। করোনা-ভীতিতে এখানেও প্রতিদিন জ্বর-সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে রোগীরা বহির্বিভাগে দেখাতে আসছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, লকডাউনের আগে পর্যন্ত প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় ১২০০ রোগী আসতেন। বর্তমানে লকডাউনের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার ফলে রোগীর সংখ্যা কমেছে। এন বহির্বিভাগে ৪০০-র বেশি রোগী জ্বর সর্দি কাশির উপসর্গ নিয়ে আসছেন। এখানেও সমস্যা থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের। রামপুরহাট মেডিক্যালের সুপার কাম ভাইস প্রিন্সিপাল সুজয় মিস্ত্রি জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় এখনও পর্যন্ত জেলা থেকে একটা মাত্র থার্মাল গান পাওয়া গিয়েছে। সেই থার্মাল গানের মাধ্যমেও স্ক্রিনিংয়ের কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। পরীক্ষামূলক ভাবে তা দেখা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় রামপুরহাট মেডিক্যালে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য ৬ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এ ছাড়া জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জন্য পৃথক ভাবে মেডিসিন বিভাগে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ১২টি করে মোট ২৪ টি শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘এই হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালের সব ক’টি ওয়ার্ড মিলিয়ে সাত থেকে আটটি থার্মাল গান দরকার।’’ এ ছাড়াও আরো দু-তিনটি থার্মাল গান রিজার্ভে রেখে দেওয়া দরকার বলে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা জানাচ্ছেন। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে থার্মাল গানের মাধ্যমেই শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা দরকার। সেটাই সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত। অথচ একটি থার্মাল গান থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।’’
বীরভূম জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি জানান, জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসকের মাধ্যমে দু’টি থার্মাল গান পাওয়া গিয়েছে। দু’টিই সিউড়ি সদর হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে। তবে ব্লক স্তরে এখনও পর্যন্ত একটিও থার্মাল গান পাওয়া যায়নি বলে তিনি স্বীকার করেছেন। ‘‘বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে’’—বলছেন হিমাদ্রিবাবু। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পার্থ দে অবশ্য জানান রামপুরহাটের জন্য ৫০টি থার্মাল গানের অনুমোদন মিলেছে। খুব শীঘ্রই সেগুলি পাওয়া যাবে।