Coronavirus in West Bengal

জামিনে দেরির সঙ্গী করোনা, চিন্তায় জেল

সিউড়ি আদালতের আইনজীবীদের একাংশও জানাচ্ছেন, কোভিড পরিস্থিতিতে ভিডিয়ো কনফারেন্সেরর মাধ্যমে জেলা আদালতে দিনে মাত্র চারটি করে জামিনের শুনানি হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ০১:৫০
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক দিকে ভিড়ে ঠাসা সংশোধনাগারে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে। মৃত্যুও হয়েছে এক সাজাপ্রাপ্ত বন্দির। অন্য দিকে কোভিড পরিস্থিতিতে আদালতে জামিন পাওয়ার প্রক্রিয়া মন্থর হয়েছে। এই দুইয়ের জেরে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে বীরভূম জেলা সংশোধনাগারে। সংশোধনাগারের তরফে বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এমনটা চলতে থাকলে আগামী দিনে সঙ্কট বাড়বে বলেই আড়ালে মানছেন জেল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সিউড়ি আদালতের আইনজীবীদের একাংশও জানাচ্ছেন, কোভিড পরিস্থিতিতে ভিডিয়ো কনফারেন্সেরর মাধ্যমে জেলা আদালতে দিনে মাত্র চারটি করে জামিনের শুনানি হচ্ছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতে দিনে কমবেশি ১৫টি শুনানি হয়। ফলে, জামিন পেতে পারেন এমন অনেক অভিযুক্তকে অতিরিক্ত ১৫-২০ দিন জেলে কাটাতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে জেলে সংক্রমণের যা অবস্থা, তাতে উদ্বেগ স্বাভাবিক। জেলা আদালতের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘জেলে এমন অন্তত ৪০ শতাংশ বন্দি রয়েছেন, আদালতে স্বাভাবিক কাজ হলে যাঁদের জামিন মঞ্জুর হতে অসুবিধা ছিল না।’’

জেলা সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন মিলিয়ে শ’পাঁচেক বন্দি রয়েছেন। গত সোমবার জেলের আধিকারিক, কর্মী ও বন্দি মিলিয়ে ১৯৯ জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষার পরে ৩৬ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণের অস্তিত্ব মেলে। পরে বাকিদেরও করোনা টেস্ট হয়েছে। কিন্তু, সংক্রমিতের সংখ্যা কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে প্রশাসন বা জেল কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে চাননি। জেল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে, আক্রান্তেরা প্রায় সকলেই উপসর্গহীন। কিন্তু তার পরেও সংশোধনাগারের মধ্যে আক্রান্তদের কী ভাবে রাখা হয়েছে, সংক্রমণ রুখতে কী ব্যবস্থা হয়েছে, রোগীদের চিকিৎসা ও খাওয়াদাওয়ার মান কেমন— সে সব নিয়ে উদ্বেগে বন্দিদের পরিবারের সদস্যেরা।

Advertisement

জেলায় করোনা

মোট আক্রান্ত - ৯৩০

• অ্যাক্টিভ রোগী: ৩৬২

• ছাড়া পেয়েছেন: ৫৬১ • মৃত: ৭

নতুন করে আক্রান্ত: ৭৫ • ছাড়া পেয়েছেন: ৩৯

এ সবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে ঘুমের মধ্যে মারা যান খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক বন্দি। কাঁকরতলা থানা এলাকার ওই বাসিন্দাও কোভিড পজিটিভ ছিলেন। মৃতের দেহের ময়নাতদন্ত করে সিউড়িতেই দাহ করা হয়। সেই সময় তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে-জামাই সহ যে তিন জন উপস্থিত ছিলেন, তাঁদেরকে সরকারি নিভৃতবাসে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।

এ সবের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে জামিন প্রক্রিয়ার মন্থর গতি। ‘আনলক’ প্রক্রিয়া শুরু হতে গত মাসের ৮তারিখ থেকে আদালত স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হতে না হতেই ১৬ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত আদালতে কর্মবিরতি ঘোষণা করে বার অ্যাসোসিয়েশন। বারের দাবি ছিল বিচারপ্রার্থী, গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্ত এবং তাঁদের আত্মীয়পরিজনে আদালত চত্বর গিজগিজ করছে। দূরত্ব-বিধি মেনে চলার উপায় নেই। এই অবস্থায় আদালতে কাজ চালানো অসম্ভব। চলতি মাসের প্রথম থেকে আদালতে কাজ শুরু হলেও গোটা জেলায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে ফের স্বাভাবিক কাজক্রর্মে প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। সংশোধনাগারে সংক্রমণ ছড়াতেই ফের ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে জামিনের শুনানি হচ্ছে।

আইনজীবীরা বলছেন, প্রতিদিন জেলার নানা প্রান্তে নানা অপরাধমূলক ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে সংশোধনাগারে পাঠানোয় বিরাম নেই। অথচ ছোটখাটো অপরাধে অভিযুক্তই হোক বা গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত, (যাঁদের জামিন ম্যজিস্ট্রেট আদালতে হয় না) জেলা আদালতে তাঁদের জামিনের শুনানি হচ্ছে দিনে মাত্র চারটি করে। ফলে বন্দির সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে সংশোধনাগারে। বিষয়টিতে যে সত্যতা রয়েছে সেটা মানছেন জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটার মলয় মুখোপাধ্যায়ও।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement