নির্দেশ: পুরুলিয়া শহরের একটি ওষুধের দোকানে হঠাৎ হাজির ডিএম। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
‘লকডাউন’-এর বিধিনিষেধ শহরবাসী কতটা মানছেন, সে বিষয়ে নজরদারি চালাতে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার আকাশে ‘ড্রোন’ উড়িয়েছিল পুলিশ। এ বার সরকারি নির্দেশিকা জারি হওয়ার পরে কত জন ‘মাস্ক’ পরছেন, তা দেখতে শুক্রবার পুরুলিয়া শহরের পথে নামলেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার।
‘লকডাউন’-এর বিধি উপেক্ষা করে শহরের বিভিন্ন মোড়ে জটলা করার অভিযোগে গত সপ্তাহে পুলিশ দফায় দফায় শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ৩৮ জনকে মহামারি আইনে গ্রেফতার করে। ধরপাকড়ের পরে, শহরের রাস্তায় ভিড়ে কিছুটা লাগাম দেওয়া গেলেও ‘মাস্ক’ পরার সতর্কতা অনেকেই মানছেন না বলে অভিযোগ। অথচ, প্রকাশ্যে বেরোলেই ‘মাস্ক’ পরা বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্য সরকার।
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কেউ ‘মাস্ক’ পরছেন, কেউ পরছেন না। মাস্ক থাকলেও কেউ গলায় ঝুলিয়ে ঘুরছেন। কেউ আবার পকেটের ভিতরে মাস্ক রেখে দিব্যি সাইকেলে বা মোটরবাইকে বাজার সারছেন।
শুক্রবার সকালে অফিসে আসার সময়ে জেলাশাসকের চোখে পড়ে লোকজন দিব্যি যাতায়াত করছেন অথচ মুখে ‘মাস্ক’ নেই। হাসপাতাল মোড়ে আচমকা গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়েন তিনি। পথচলতি এক জনকে জিজ্ঞাসা করেন— ‘মাস্ক’ পরেননি কেন? প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তির গলায় রুমাল ঝোলানো ছিল। তিনি জানান, ‘মাস্ক’ নেই, তাই রুমাল নিয়েছেন। জেলাশাসক প্রশ্ন করেন, সেটা গলায় ঝুলছে কেন। অস্বস্তিতে পড়ে দ্রুত নাকে-মুখে কষে রুমাল বেঁধে সরে পড়েন ওই ব্যক্তি।
এর পরে জেলাশাসক ঢুকে পড়েন একটি ওষুধের দোকানে। দোকানের মালিক গলায় রুমাল ঝুলিয়ে বসে খদ্দেরদের ওষুধ দিচ্ছিলেন। জেলাশাসকের প্রশ্নের মুখে পড়ে দোকানের মালিককে বলতে শোনা যায়, ‘‘ভুল হয়ে গিয়েছে। এমনটা আর করব না।’’ দোকানের কর্মী-সহ খদ্দেরদেরও কেউ কেউ ততক্ষণে পকেটে থাকা মাস্ক বা রুমালে নাক-মুখ ঢাকতে শুরু করেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ওষুধের দোকান চালাচ্ছেন, আর আপনাদের এ সব শেখাতে হবে?’’
পাশেই একটি চশমার দোকানেও ব্যবসায়ী যথারীতি ‘মাস্ক’ ছাড়াই বসেছিলেন। জেলাশাসক তাঁর কাছে ‘মাস্ক’ কোথায় জানতে চান। তিনি একটি বাক্স থেকে তা বের করতেই জেলাশাসক ধমকের সুরে বলেন, ‘‘এটা কি গয়না, না সানগ্লাস?’’ অস্বস্তিতে পড়ে মাস্ক পরেন দোকানদার। তিনি বলেন, ‘‘সারাক্ষণ মুখে ‘মাস্ক’ পরে থাকতে অস্বস্তি হয়।’’
হাসপাতাল মোড় ও সংলগ্ন এলাকার দোকানগুলিতে এ দিন এ ভাবে আচমকা হানা দিয়ে লোকজনকে মুখে ‘মাস্ক’, গামছা কিংবা রুমাল বাঁধতে বাধ্য করেন জেলাশাসক। পরে তিনি বলেন, ‘‘বাইরে বেরোলে ‘মাস্ক’ পরা বা নাক-মুখ ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। অথচ অনেকেই তা মানছেন না। মানুষ যাতে এই সতর্কতা মেনে চলেন সেটাই বলা হয়েছে।’’
‘লকডাউন’ বিধির মধ্যেই শুক্রবার হঠাৎ বাজারে, রাস্তাঘাটে লোকজনের ভিড় বেড়ে গিয়েছে শুনে পথে নামতে হয় কাশীপুরের ওসি শ্রীকান্ত মুলাকেও। পুলিশের কাছে খবর আসে দোকানে বা বাজারে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। মোটরবাইকেও দিব্যি লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পথে নেমে দেখা যায়, কলেজমোড়ের একটি মুদিখানা দোকানের বাইরে গাদাগাদি ভিড়। মোটরবাইকে বিনা ‘মাস্ক’-এ দুই সওয়ারিকে দেখে ওসি জানতে চান, কেন তাঁরা বেরিয়েছেন। তাঁরা জানান, ওষুধ কিনতে বেরিয়েছেন। যাঁর কাছে প্রেসক্রিপশন ছিল, শুধু তাঁকেই যেতে দেওয়া হয়। অন্য জনকে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে দেয় পুলিশ। পরে পুলিশের তরফে মাইকে ঘোষণা করা হয়— কোনও ভাবেই ‘লকডাউন’ বিধি ভাঙা যাবে না। ভাঙলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।