ফাইল চিত্র।
তখনও করোনা আতঙ্ক এ ভাবে গ্রাস করেনি গোটা দেশে। বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে ১৪ দিনের জন্য তাঁদেরও আলাদা করে রাখার নির্দেশিকা জারি হয়নি। তবে করোনাভাইরাস সংক্রামিত চিন থেকে মাসখানেকেরও বেশি আগে দেশে ফিরে আসার পর বাড়িতে মেডিক্যাল টিম আসাই নয়, ক্রমাগত ২৮ দিন ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থার নিয়মিত খোঁজ খবর নিয়েছে রাজ্য ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এ কথা বলছেন ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ চিন থেকে দুবরাজপুরের খণ্ডগ্রামের বাড়িতে ফেরা মইনউদ্দিন মণ্ডল।
চিনের শিন জিয়াং মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএসের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র মইনউদ্দিন। করোনাভাইরাসের প্রকোপ তখন চিনে ব্যাপক আকার নিচ্ছে। বাবা-মায়ের কথা শুনে পত্রপাঠ দেশে ফিরেছিলেন তিনি। মইনউদ্দিন বলছেন, ‘‘এখন পর্যবেক্ষণে থাকার সময়সীমা শেষ হয়েছে। কিন্তু ওই সময়ে দিনে পাঁচবার করে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও একবার করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর আমার ও পরিবারের সদস্যদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিচ্ছিল। সাতদিন নিয়ম করে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্যকর্মীও বাড়িতে এসে খবর নিয়ে গিয়েছেন।’’
প্রায় একই অভিজ্ঞতা বোলপুরে ভুবনডাঙার আরও একটি পরিবারের। বৃদ্ধ দম্পতি জীবানন্দ মুখোপাধ্যায় ও আরতি মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অরুণানন্দ মুখোপাধ্যায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি বোলপুরে ফিরেছিলেন। চিনের সাংহাই প্রদেশের চাংসু-র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক তিনি। শুধু তিনি নন, ওখানেই থাকেন তাঁর স্ত্রী ও ছেলে। ওই দম্পতি জানিয়েছেন, চিনে তখন প্রবল ভাবে করোনার প্রকোপ বাড়ছিল। তাই ছেলে যেখানে থাকে সেখানে সে ভাবে ভাইরাসের প্রকোপ না ছড়ালেও দুশ্চিন্তায় ছিলেন তাঁরা। অরুণানন্দ তখন জার্কার্তায় একটি কর্মশালায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ভারতে আসেন তিনি। ওই দম্পতির কথায়, ‘‘একমাস বাড়িতে ছিল ছেলে। সে বাড়ি ফেরার পর থেকে ২৮ দিন নিয়মিত যোগাযোগ রেখে ছিল স্বাস্থ্য দফতর। ৬ মার্চ ফের থাইল্যান্ড হয়ে চিনে ফেরত গিয়েছে ছেলে। দেশে করোনার প্রকোপ ছড়ানোয় আমাদের বরং সাবধানে থাকতে বলেছে।’’
বীরভূম ও রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার কর্তারাও বলছেন মইনউদ্দিন, অরুণানন্দের মতো আরও অনেকেই করোনা সংক্রামিত দেশ থেকে জেলায় ফিরেছেন। তবে বেশিরভাগটাই চিন থেকে। তার মধ্যে বোলপুর ইলামবাজার, দুবরাজপুর, সিউড়ি-সহ জেলার নানা প্রান্তের লোকজন আছেন। তাঁদের সংখ্যা ২৪ জন। তারমধ্যে বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় ২১জন রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় ৩ জন। বীরভূমে স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি জানিয়েছেন, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা মেনে প্রত্যেককেই নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে ৮ জনের পর্যবেক্ষণের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে। তারপরও তাঁদের কাছে পরিস্থিতি জানতে ফোন যাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে। তবে এই মুহূর্তে জেলায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় নি কাউকেই। তবে আইসোলেশনে ভর্তি হয়েছেন একজন। তিনি রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি।