বান্দোয়ানের বন দফতরের অফিসের কাছে বুধবার। নিজস্ব চিত্র
নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে তিন সপ্তাহ ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে সরকার। তার পরেই, বুধবার সকাল থেকে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার নানা জায়গায় দেখা গেল, কোথাও চড়েছে আনাজের দাম। কোথাও চাল-ডাল-আটা-আলু মজুত করার হিড়িক। জেলা পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, কালোবাজারি রুখতে তারা তৎপর। পরিস্থিতির উপরে নজর রয়েছে।
পুরুলিয়ার রেলশহর আদ্রার এক দোকানদার জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী ‘লকডাউন’ ঘোষণা করার পরেই মাত্র এক ঘণ্টায় তিনি পাঁচ কেজির আটার বস্তা অন্তত তিরিশটি বিক্রি করেছেন। এখনই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মজুত না করলে পরে না-ও মিলতে পারে বলে আশঙ্কা অনেক গৃহস্থের। তাই মজুত করে রাখতে চাইছেন তাঁরা। বুধবার সকালে লম্বা ফর্দ নিয়ে বাজারে এসেছিলেন ঝালদার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আগামী দিনে পরিস্থিতি কী হবে বোঝা যাচ্ছে না। তাই স্ত্রীর কথামতো একটু বেশি করেই জিনিসপত্র কিনে রাখছি।”
আদ্রা, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া, ঝালদার মতো শহরগুলির বিক্রেতাদের কথায়, ‘‘যে পরিবারগুলির হয়তো এক মাসে দশ কেজি আটা লাগত, তাঁরাই দ্বিগুণের বেশি কিনেছেন।” শহরগুলির মুদির দোকানদের একাংশ জানাচ্ছেন, চাল, ডাল, আটা দোকানে পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। কিন্তু লাগামছাড়া ভাবে কিছু গৃহস্থ যদি বাড়িতে জমাতে শুরু করে দেন, তা হলে টানাটানি শুরু হবে। বুধবার জেলা দুর্নীতি দমন শাখা পুরুলিয়া শহরে অভিযান চালায়। তাদের দাবি, পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক আছে। দাম চড়েনি।
তবে আদ্রার বাজারে বুধবার আলুর দাম ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। ডিমের দাম বুধবার থেকে হঠাৎ পঞ্চাশ পয়সা করে বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা। সোমবারেও টোম্যাটো বিক্রি হয়েছে দশ টাকা প্রতি কেজিতে। বুধবার সেটা কেজিতে পাঁচ টাকা করে বেড়েছে।
জোগানের অভাবে ঝালদায় বুধবার আলু পাওয়াই যায়নি বলে দাবি করছেন ক্রেতারা। আড়তদারদের দাবি, ট্রাকে করে আলুর বস্তা আসার সময়ে রাস্তায় আটকে পড়েছে। জোগানে ঘাটতি থাকায় আলু বাজারে আসার পরে দাম চড়তে পারে বলে ক্রেতাদের শুনিয়ে রেখেছেন কিছু বিক্রেতা। তবে বুধবার ঝালদা, পুরুলিয়া শহর, রঘুনাথপুরে কাঁচা আনাজের দাম খুব বাড়েনি বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা।
বাঁকুড়ার বাজারে অবশ্য আনাজের দর চড়েছে এ দিন। কিছু দিন আগেও বাঁকুড়া শহরের বাজারগুলিতে টোম্যাটো বিক্রি হচ্ছিল কেজি প্রতি দশ টাকায়। সেটাই এখন কোথাও চল্লিশ টাকা তো কোথাও ষাট টাকা। একই ভাবে এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে পটল, ঢ্যাড়শ, ঝিঙে, উচ্ছের দর। সজনে ডাঁটা কিছু দিন আগেও কেজি প্রতি ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এখন সেটাই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে।
বাঁকুড়ার কিসান মান্ডির একটি আনাজের দোকানে বাজার করতে গিয়ে দর শুনে শহরের বাসিন্দা দেবব্রত নন্দী বলছিলেন, ‘‘করোনার ভয়ে সিঁটিয়ে আছি, তার উপরে কালোবাজারি। অল্প করে দু’-তিন রকমের আনাজ নিলাম। তাতেই আড়াইশো টাকা খরচ হয়ে গেল।’’ ব্যবসায়ীদের একাংশ দাবি করেছেন, জোগান কম। তাই দাম চড়ছে। ক্রেতাদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, সকালে ভিড়ের সময়ে বাজারে আনাজের এক দর থাকছে। একটু বেলা গড়াতেই ভিড় ফাঁকা হওয়ার পরে আবার অন্য দর।
বিষ্ণুপুর শহরের বিভিন্ন বাজারেও আনাজের দর ছিল চড়া। আলু ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি। কুমড়ো ১৬ থেকে ১৮ টাকা। করলা ৭০ টাকা কেজি। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “বাজারদরের উপরে আমাদের নজর রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।”
এ দিন বাঁকুড়া শহরের মুদি দোকানগুলিতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল। সকাল থেকেই মানুষজন জিনিসপত্র কেনার ভিড় করেছিলেন। বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়-এর সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা বলেন, “মুদি দোকানে জোগান কমছে ক্রমশ। এই সমস্যার কী ভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছি। তবে জিনিস কম থাকলেও বাজারদরের থেকে বেশি দাম নেওয়া যাবে না বলে সমস্ত ব্যবসায়ীদের সচেতন করা হয়েছে। কোথাও কালোবাজারি হচ্ছে, এমন অভিযোগও বাঁকুড়ায় ওঠেনি।”