সাঙ্গ: খোলা হচ্ছে বসন্তোৎসবের মঞ্চ। নিজস্ব চিত্র
বসন্তোৎসবের আগের দিনের শান্তিনিকেতনের একটা ছবি মোটামুটি স্থানীয় সবার মনেই ধরা আছে। সেই ছবির সাথে রবিবারের শান্তিনিকেতনকে মেলাতেই পারলেন না তাঁরা। চেনা ভিড় নেই, ফাঁকা রাস্তাঘাট। যে সামান্য লোকজন এসেছেন, তাঁরা খোয়াইমুখী।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বাতিল হয়ে গিয়েছে বসন্তোৎসব। তাই যে সব রাস্তা উৎসবের আগের দিন থেকেই ভরে যায় পর্যটকদের ভিড়ে, সেই রাস্তা এ দিন ছিল সুনসান। সাধারণ জনজীবনে একটাই আলোচনা চলল, দোলের আগে কোনওদিন এমন দেখেননি তারা। যে প্রবল ভিড় বসন্তোৎসব উপলক্ষে প্রতি বছর আছড়ে পরে শান্তিনিকেতনের বুকে, এ বার তার ছিঁটেফোঁটাও নেই।
যেটুকু যা লোকজন, তা এ দিন দেখা গিয়েছে খোয়াইয়ের হাটে। এমনিতেই, প্রায় প্রত্যেক ছুটির দিনেই বেশ ভাল সংখ্যার লোকের জমায়েত হয় এখানে। এই রবিবারের ভিড় তার থেকে খানিকটা বেশিই ছিল। তবে সেখানেও মন ভাল নেই কারও। ব্যবসায়ী থেকে পর্যটক, সবার মধ্যেই কেমন একটা গা ছাড়া ভাব।
মালদহ থেকে আসা শ্রাবণী ঝা বলেন, “অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসব দেখার। এ বার একরকম জেদ করেই হোটেল বুক করেছিলাম। শনিবার সকালে ট্রেনে চড়ার আগেই শুনলাম বসন্তোৎসব হচ্ছে না। আমি তো কেঁদেই ফেলেছিলাম। তার পর মনে হল শান্তিনিকেতনটাই ঘুরে আসি। কিন্তু এখানে এসে একেবারেই ভাল লাগছে না। চারিদিকে একটা বিদায়ের গন্ধ ছড়িয়ে রয়েছে।’’
সাধারণ ছুটির দিনের থেকে বেশি লোকজন পেয়ে খোয়াই হাটের হস্তশিল্প ও ব্যবসায়ীরা একটু খুশি। শান্তিনিকেতনের মূল ভিড়টা এখন পুরোটাই খোয়াইমুখী। তবে, পর্যটকদের সূত্র থেকে জানা গেল, খোয়াই এবং বল্লভপুরের হোটেল বা রিসর্টগুলি এই সুযোগে এক নতুন ব্যবসা চালু করেছে। রিসর্টের নিজস্ব যায়গায় বসন্তোৎসব উদযাপন করার জন্য কোথাও কোথাও টিকিট বিক্রির খবর মিলেছে। তবে যে জমায়েতকে বন্ধ করার জন্য বসন্তোৎসব বাতিল করা হল, সেই জমায়েতেরই আয়োজন করায় প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে কোনও রিসর্টের তরফ থেকেই কিছুই জানানো হয়নি।
বসন্তোৎসব বাতিল হলেও প্রশাসন কিন্তু সতর্ক। রবিবার সকাল থেকেই শান্তিনিকেতনে প্রবেশের মূল রাস্তা গুলিতে অনেক সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কালীসায়ের, জামবুনি, খোয়াই, বোলপুর স্টেশন-সহ প্রধান প্রধান জায়গাগুলিতে যানজট এড়াতে অস্থায়ী ব্যারিকেডও লাগানো হয়েছে। বসন্তোৎসব না হলেও, যে বহু সংখ্যক মানুষ শান্তিনিকেতনে আসবেন বা এসেছেন, তাঁর জেরে যেন কোনওভাবেই বোলপুর ও শান্তিনিকেতনের স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত না হয়, সেদিকে প্রশাসনের তরফ থেকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।