অবাধে: বান্দোয়ানের ধবনি থেকে ঝাড়খণ্ডের কাটিন সীমানায় শনিবার। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
জেলার তিন দিকে, ৩৮০ কিলোমিটার জুড়ে ঝাড়খণ্ড সীমানা। নোভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে কেউ সেখান দিয়ে পুরুলিয়া ঢুকছেন কি না— সেই সংক্রান্ত কোনও নজরদারি চোখে পড়ল না শনিবার। তবে পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানিয়েছেন, ১৪টি সীমানা-এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব সেখানে নজরদারি শুরু হবে। এ দিকে, দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজে চালু হয়েছে ১০০টি শয্যার আইসোলেশন ইউনিট। তবে, শনিবার পর্যন্ত কাউকে সেখানে ভর্তি করানো হয়নি।
নোভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়ানোয় তটস্থ হয়ে রয়েছে পুরো দেশ। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় সে জন্য নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করছে সরকার। পুরুলিয়া জেলার কাছাকাছি বিমানবন্দর ঝাড়খণ্ডের রাঁচীতে। সেখানে বিমান থেকে নেমে অনেকেই সড়কপথে এই জেলায় আসেন। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানান, ঝাড়খণ্ড থেকে পুরুলিয়ায় ঢোকার রাস্তায় ১৪টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। নজরদারি চলবে সেখানে। পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘ওই ১৪টি এলাকার মধ্যে অনেকগুলিই সুনসান। সেখানে নজরদারি চালানোর জন্য অন্তত বসার একটা জায়গা দরকার। সেই ব্যবস্থাই করা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, পুরো পরিকাঠামো তৈরি করতে দু’-তিন দিন সময় লাগতে পারে।
শনিবারই জেলার সমস্ত ব্লকে প্রশাসনের নির্দেশ চলে গিয়েছে। সূত্রের খবর, ওই ১৪টি জায়গায় বিডিও, ওসি এবং স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা নজরদারি চালাবেন। দেখা হবে, করোনার উপসর্গ নিয়ে কেউ ঢুকছেন কি না। তেমন কিছু চোখে পড়লে টানা নজরে রাখা হবে। গাড়ি থামিয়ে জানা হবে, উপদ্রুত কোনও এলাকা থেকে বিমানে কেউ এসেছেন কি না। সীমানা থেকেই জেলায় আসা মানুষজনকে এই সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতন করবে প্রশাসন। এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতর ইতিমধ্যেই একাধিক বৈঠক করেছে বলে সূত্রের খবর। একটি বৈঠক হয়েছে জেলাশাসকের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের। একটি বৈঠক হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন ব্লকের আধিকারিকদের নিয়ে। জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা প্রতিটি ব্লকে গিয়ে নিচুতলায় কাজ করা কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত জানিয়েছেন, দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজের একটি বাড়িতে আইসোলেশন ইউনিট গড়া হয়েছে। পুরুলিয়া শহর ছাড়িয়ে হাতিয়াড়া এলাকায় ওই মেডিক্যাল কলেজের ক্যাম্পাস তৈরি হয়েছে। সেখানে ১০০ শয্যার ইউনিটটি চালু হয়েছে। তবে শনিবার পর্যন্ত কেউ ভর্তি হননি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ৫০টি শয্যা পুরুষদের ও ৫০টি মহিলাদের জন্য রাখার কথা ভাবা হয়েছে। তবে জেলার কোনও মহকুমা হাসপাতাল বা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নোভেল করোনার জন্য আলাদা করে আইসোলেশন ইউনিট গড়া হয়নি।
সম্প্রতি পুরুলিয়া জেলার দু’জন সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিরেছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে এক জন দেশে ফেরার পরে কলকাতাতেই রয়েছেন। দেখা করার জন্য ওই ব্যক্তির বাবা কলকাতায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও জেলায় ফেরেননি। কাজের সূত্রে দক্ষিণ ভারতে চলে গিয়েছেন।
অন্য জন জেলায় ফিরে এসেছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর উপরে টানা নজর রাখা হচ্ছে। তবে শনিবার পর্যন্ত তাঁর কোনও ধরনের উপসর্গ চোখে পড়েনি বলেই খবর।