অন্য কেউ জিতলে জল নয়, প্রচারপত্রে অস্বস্তিতে তৃণমূল

তৃণমূল ছাড়া অন্য দলের প্রার্থী জয়ী হলে ভোটারদের ‘অপদার্থতার’ জন্য গোটা ওয়ার্ডের বাসিন্দারাই জল পাবেন না—এই মর্মে লিফলেট বা প্রচারপত্র ছাপিয়ে প্রবল বিতর্কে জড়িয়েছেন পুরুলিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সমীরকুমার দত্ত। এখানেই শেষ নয়, অন্য একটি প্রচারপত্রে এলাকার বিশেষ দু’টি সম্প্রদায়ের যুবকদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৩
Share:

এই লিফলেট ঘিরেই বিতর্ক পুরুলিয়া শহরে।—নিজস্ব চিত্র

তৃণমূল ছাড়া অন্য দলের প্রার্থী জয়ী হলে ভোটারদের ‘অপদার্থতার’ জন্য গোটা ওয়ার্ডের বাসিন্দারাই জল পাবেন না—এই মর্মে লিফলেট বা প্রচারপত্র ছাপিয়ে প্রবল বিতর্কে জড়িয়েছেন পুরুলিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সমীরকুমার দত্ত। এখানেই শেষ নয়, অন্য একটি প্রচারপত্রে এলাকার বিশেষ দু’টি সম্প্রদায়ের যুবকদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।

Advertisement

দলীয় প্রার্থীর এই কাণ্ডে পুরভোটের মুখে ঘোর অস্বস্তিতে শাসকদলও। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন, এই প্রার্থীর দুটি প্রচারপত্রের ওই অংশ দল অনুমোদন করছে না।

কী রয়েছে প্রচারপত্রে?

Advertisement

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সংবলিত একটি প্রচারপত্রে তৃণমূল প্রার্থী দাবি করেছেন, শহরবাসীর জন্য ৫৬ কোটি টাকার জল প্রকল্প শেষের মুখে. শহরের উপকন্ঠে চাকদায় ২ বর্গ কিমি জায়গা জুড়ে যে জলাধারে জল ধরা আছে, তাতে ১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এই জল দিয়ে ৩০ হাজার জলের সংযোগ দেওয়া যাবে। কিন্তু, তৃণমূল ছাড়া অন্য কাউন্সিলর জয়ী হলে জন্য বাসিন্দারা জলের সংযোগ পাবেন না।

সোমবার এই প্রচারপত্র প্রকাশ্যে আসতেই বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ছড়াতে শুরু করে। পুরসভার বিদায়ী বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের বিভাস দাস জেলাশাসকের কাছে ওই প্রচারপত্র নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানান। তিনি বলেন, ‘‘আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন ওই তৃণমূল প্রার্থী। এই মর্মে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে জেলাশাসককে অনুরোধ করেছি।’’ ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী মিতা চৌধুরী বলেন, ‘‘কী করে শাসকদলের এক প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ জয়ী হলে এই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জলের সংযোগ পাবেন না? এটা অবশ্যই বিধি বহির্ভূত। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করেছি।’’

মঙ্গলবার নতুন বিতর্ক দানা বাঁধে ওই তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে আর একটি প্রচারপত্র এলাকায় প্রচারিত হওয়ায়। নীল-সাদা মুদ্রণে ওই প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, বিশেষ দুই পদবিভুক্ত ছেলেদের মোটর গাড়ি পরিষ্কার করার ওয়ার্কশপ করে দেওয়া হবে। এই নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকালে তৃণমূলের প্রার্থী ও তাঁর কিছু সঙ্গী এই প্রচারপত্র বিলি করছিলেন। প্রচারপত্রে উল্লেখিতি ওই দুই পদবিভুক্ত কিছু মানুষ প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের বাড়ির ছেলেরা কি শুধু গাড়ি পরিষ্কারই করবে? তাঁদের কি অন্য কাজ করার যোগ্যতা নেই?

এলাকায় তৃণমূলের একটি নিবার্চনী কাযার্লয়ে ভাঙচুরও চালানো হয়। এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা পুরুলিয়ার মহকুমাশাসকের (সদর) কাছে গিয়েও প্রচারপত্র নিয়ে তাঁদের আপত্তির কথা জানিয়ে তদন্ত দাবি করেন। এলাকার বাসিন্দা বাপি সহিস বলেন, ‘‘প্রচারপত্রে এই ধরনের কথা উল্লেখ করা আপত্তিকর। তা ছাড়া জল নিয়েও এরকম ভাবে আপত্তিকর প্রচারপত্র ছড়ানো হয়েছে।’’

১ ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সমীরবাবু অবশ্য ওই দু’টি প্রচারপত্র তিনি প্রকাশ করেননি বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম কোনও প্রচারপত্র আমি প্রকাশ করিনি। এতে কোনও প্রকাশকের নাম নেই।’’ এই প্রচারপত্রের দায় তিনি সিপিএম প্রার্থীর উপরই চাপিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মিতা চৌধুরী নিজের পায়ের তলায় জমি হারিয়েছেন। এখন জেতার জন্য এ সব করছেন। তিনি-ই লোকজন নিয়ে এসে আমাদের নিবার্চনী কার্যালয় আক্রমণ করেছেন।’’ জেলা তৃণমূল নেতা নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘এ ধরনের বক্তব্য দল অনুমোদন করে না। আমরা খোঁজ নিয়েছি ওই প্রার্থীর কাছে। তিনি জানিয়েছেন, তিনি এ ধরনের প্রচারপত্র প্রকাশ করেননি। সিপিএম তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতেই প্রচারপত্র বিলি করেছে।’’

ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর মিতাদেবী অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কে এই প্রচারপত্র বিলি করেছেন, এলাকার সকলেই জানেন।’’ জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রথমে আমরা প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলব. যদি দেখা যায় সত্যতা রয়েছে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement