BJP Worker Death

বিজেপি করায় খুন? শুভেন্দুর দাবিতে তরজা

বাঁকুড়ার জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, “উত্তমের নাম অভিযোগপত্রে রয়েছে। তার খোঁজ চালানো হচ্ছে। নিহতের দেহের ময়না তদন্তের রিপোর্ট আমরা পেয়েছি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খাতড়া শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ০৭:১৪
Share:

খাতড়ায় মিছিলে শুভেন্দু অধিকারী, সুভাষ সরকার। ছবি: শুভেন্দু তন্তুবায়।

এক দিন আগেই বাঁকুড়া জেলা পুলিশ দাবি করেছিল, গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে ঝামেলার জেরে খাতড়ার বৃদ্ধ খুন হন। তার পরের দিন শুক্রবার খাতড়ায় নিহত বৃদ্ধ বঙ্কুবিহারী মাহাতোর (৬৯) বাড়িতে গিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ওই খুনের জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করলেন। খাতড়ায় মিছিল করে পথসভা থেকে স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা খাতড়া ২ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান উত্তম মাহাতোকে এই খুনের অভিযোগে গ্রেফতারের দাবি করেন শুভেন্দু। বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীকে ইঙ্গিত করে এই ঘটনায় তাঁর যোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন।

Advertisement

বাঁকুড়ার জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, “উত্তমের নাম অভিযোগপত্রে রয়েছে। তার খোঁজ চালানো হচ্ছে। নিহতের দেহের ময়না তদন্তের রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। সেখানে উঠে এসেছে মৃতের ফুসফুসে সমস্যা ছিল। বয়সজনিত কারণে শরীরও দুর্বল ছিল। তবে দেহে বড় কোনও চোট বা ক্ষত মেলেনি।”

এ দিকে বঙ্কুকে নিজেদের দলের কর্মী বলে এ দিন দাবি করে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছেন বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ ও রানিবাঁধের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্য প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি। শুভেন্দুর পাল্টা দাবি, বঙ্কুবিহারী মাহাতো ২০১৮ সাল থেকে বিজেপি করেন। মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে।

Advertisement

মঙ্গলবার গ্রাম থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বঙ্কুবিহারীর দেহ পড়েছিল। প্রথমে নিহতের বড়ছেলে জনার্দন মাহাতো দাবি করেছিলেন, একটি গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে পড়শিদের সঙ্গে বিবাদের জেরেই তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয়। যদিও নিহতের ছোট ছেলে সনাতন ওই রাতে থানায় অভিযোগ করেন, তাঁরা বিজেপি করেন বলে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হুমকি দিচ্ছিল। তারাই বাড়ি থেকে বঙ্কুবিহারীকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তিনি স্থানীয় তৃণমূল নেতা উত্তম মাহাতো-সহ সাত জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলও উত্তম এখনও অধরা।

বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশের তরফে এক্স হ্যান্ডেলে দাবি করা হয়, খাতড়ার ওই খুনের ঘটনায় ভুল খবর ছড়ানো হচ্ছে। পড়শির সঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদ ও একটি গাছ কাটা নিয়ে মারামারিতে জখম হয়ে মৃত্যু হয় বঙ্কুবিহারীর। বৃহস্পতিবার নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, বাঁকুড়ার প্রাক্তন সাংসদ সুভাষ সরকার।

এ দিন বিকেলে দেদুয়ার বঙ্কুবিহারীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছবিতে মালা দেন শুভেন্দু। নিহতের স্ত্রী ও দুই ছেলের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। তৃণমূল নেতৃত্ব ভয় দেখাচ্ছেন কি না জানতে চান শুভেন্দু। পরিবারের লোকজন অবশ্য বিশেষ কোনও সমস্যার কথা জানাননি। শুভেন্দু অবশ্য বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডলকে নিহতের বাড়িতে ঢোকার মুখে ও পথে নজরদারি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশ দেন। পাশাপাশি স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব যাতে নিয়মিত নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, সে নির্দেশ দেন শুভেন্দু। নিহতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করা হয়।

এরপরে খাতড়া পাম্পমোড় থেকে ধিক্কার মিছিলে হাঁটেন শুভেন্দু। সেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বাঁকুড়া পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন তিনি। মিছিল শেষে খাতড়া দাসেরমোড়ে পথসভায় শুভেন্দু বলেন, “রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চার্জশিট দাখিলের আগেই ফয়সালা শুনিয়ে দাবি করছেন পারিবারিক বিরোধের কারণে এই খুন হয়েছে। বিজেপি নাকি রাজনীতি করছে। তাঁর ৪৮ ঘণ্টাও অপেক্ষা করার ধৈর্য নেই। এ জন্যই রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার এই অবস্থা। নিহতের ছেলে ও পরিবার প্রকাশ্যেই বলছেন বিজেপি করার জন্য খুন হতে হয়েছে।’’

শুভেন্দুর দাবি, লোকসভা নির্বাচনে দেদুয়া বুথে বিজেপি জিতেছে। সেই আক্রোশেই বঙ্কুবিহারীকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত উত্তম মাহাতোকে সাত দিনের মধ্যে গ্রেফতার না করা হলে এর তদন্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে করানোর দাবি তুলবেন বলে জানান। এখানকার তৃণমূল সাংসদের সঙ্গে উত্তমের ফোনালাপ খুঁটিয়ে তদন্ত করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন শুভেন্দু।

ঘটনার পর থেকেই এলাকায় উত্তমকে দেখা যাচ্ছে না। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ। তৃণমূল সাংসদ অরূপ বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির ভরাডুবির ধাক্কায় উনি মানসিক অসুস্থ হয়ে যা খুশি মন্তব্য করছএন। তাঁর মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন।’’

অরূপ দাবি করেন, “বঙ্কুবিহারী তৃণমূল কর্মী ছিলেন। এখন কেউ মারা গেলেই তাঁকে বিজেপি কর্মী সাজিয়ে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।” রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্নাও বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটে বঙ্কুবিহারীর তৃণমূলে কাজ করার প্রমাণ রয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে আমরাও দুঃখিত।’’ তবে নিহতের ছোট ছেলে সনাতন এ দিনও দাবি করেছেন, “আমাদের পরিবারের সবাই বিজেপি করি। সেই ‘অপরাধেই’ বাবাকে খুন করা হল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement