পাড়ুইয়ের সভায় সুজন চক্রবর্তী। আছেন মিল্টন রশিদও। নিজস্ব চিত্র
বীরভূমের জেলাশাসক হলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আর জেলার পুলিশ সুপার হলেন তৃণমূলের জেলার কার্যকারী সভাপতি। কারণ, জেলার নেতাদের ভরসা করেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার কংগ্রেস ও সিপিএমের যৌথ উদ্যোগে পাড়ুইয়ে আয়োজিত কর্মসূচিতে এমনই মন্তব্য করলেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মিল্টন রশিদ। হাজির ছিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, সিপিএমের জেলা সম্পাদ গৌতম ঘোষ, জেলা সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য বকুল ঘড়ুই-সহ অন্য নেতা ও কর্মীরা।
শান্তিপূর্ণ, অবাধ পঞ্চায়েত নির্বাচন ও পুলিশ প্রশাসনে নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণের দাবিতে এ দিন পাড়ুইয়ে সভা ও পাড়ুই থানায় গণ স্মারকলিপি কর্মসূচি ছিল জোটের। সেই মঞ্চ থেকে মিল্টনের অভিযোগ, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানকার সাংসদদের গুরুত্ব না দিয়ে ডিএম এবং এসপিদের গুরুত্ব দেন। তাঁর কারণ, তৃণমূলের নেতাদের উপরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভরসা করেন না। তাঁর ভরসা হল ডিএম এবং এসপি।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘ডিএম হলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আর এসপি হলেন তৃণমূলের জেলার কার্যকারী সভাপতি। এ ভাবেই বীরভূম জেলা চলছে।’’
একই মঞ্চ থেকে পুলিশকে নিশানা করেন সুজনও। তিনি বলেন, “সরকারের দেওয়া উর্দিকে সম্মান করতে হবে। না হলে মানুষ এই উর্দি খুলে তৃণমূলের জামাটা গায়ে পরিয়ে দেবে। আমরা চাই না সে দিন হোক।” পাশাপাশি, সুজনের হুঁশিয়ারি, ‘‘যিনি মনে করবেন তিনি প্রার্থী হবেন, এটা গ্যারান্টি করার দায়িত্ব পুলিশের। যদি তা না পারে থানা থেকে কাউকে বের হতে দেব না।’’
পাশাপাশি, অনুব্রতকেও নিশান করেন সুজন। তিনি বলেন, “যে উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। সে উন্নয়ন এখন খাঁচার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। চড়াম চড়াম ঢাক বাজানোর কথা বলত যারা, যারা পুলিশকে বোম মারার কথা বলত, যারা পুলিশকে সময় বেঁধে দিত, তাদের শেষমেষ ঠাঁই হয়েছে তিহাড় জেলে। তিহাড় জেলে তাদের শেষ জীবন পর্যন্ত থাকতে হবে, পচতে হবে। শুধু অপেক্ষায় থাকুন।” নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সপরিবার, সবান্ধবে মানুষ ভাল কাজে যায়। আর পশ্চিমবাংলায় এখন দেখা যাচ্ছে সবান্ধবে, সপরিবার পার্থ, মানিক, অনুব্রতেরা জেলে যায়।”
যদিও জেলা তৃণমূল সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের উপরে ভরসা করি। প্রশাসনিক যে কাজ, সেটা আমরা মনে করি প্রশাসনকে দিয়েই করানো উচিত। তাই সেই কাজ ওদের পছন্দ হচ্ছে না। আমরা দলকে আর প্রশাসনকে কখনই একসঙ্গে মেলাতে চাই না। দল দলের মতো কাজ করে। আর প্রশাসন প্রশাসনের মতো।’’ সিপিএম ও কংগ্রেসের জনভিত্তি কেমন তা গত বিধানসভা ভোটেই বোঝা গিয়েছে বলে পাল্টা কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।
পাশাপাশি, এ দিন একটি জোটের মহামিছিল ও পথসভা হয়ে গেল রাজনগরে। এ দিন বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ সিপিআইএমের রাজনগর দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে এলাকা পরিক্রমা করে এবং রাজনগর চৌরাস্তা মোড়ে থামে। উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবলীনা হেমব্রম ও বীরভূম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ, রাজনগরের ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি বুদ্ধদেব দাস প্রমুখ। সেখানে তৃণমূল ও বিজেপিকে এক সুরে আক্রমণ করে দেবলীনা বলেন, ‘‘তৃণমূল না থাকলে বিজেপি থাকবে না। বিজেপি না থাকলে তৃণমূল থাকবে না।’’ ‘বড় চোর’ বলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও কটাক্ষ করেন দেবলীনা।