প্রতীকী চিত্র।
জয়পুরের পরে রঘুনাথপুর ১। ব্লক সভাপতি বাছাই নিয়ে আবার নেতাদের চিঠি গেল পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গুরুপদ টুডুর কাছে। সূত্রের খবর, বুধবার রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি এবং পাঁচ কর্মাধ্যক্ষ ওই চিঠি দিয়েছেন। তাতে সই রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির এক জন ও একটি পঞ্চায়েতের দু’জন তৃণমূল সদস্যেরও। তাঁদের দাবি, প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ মাজিকেই আবার পদটি দেওয়া হোক।
ব্লক কমিটিগুলি নতুন করে গড়ার কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল। তবে ব্লক সভাপতি কারা হবেন, তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিভিন্ন ব্লকে দলের অন্দরে বেশ কিছু নাম হাওয়ায় ভাসছে। নতুন দলে আসা কাউকে সভাপতি করা যাবে না বলে সম্প্রতি জয়পুরের কিছু নেতা জেলা সভাধিপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন। তার পরে আবার রঘুনাথপুর ১ ব্লক থেকে এই চিঠি প্রকাশ্যে এল। এ বার চিঠি যাঁরা দিয়েছেন, তাঁদের সাত জন গত ভোটে বিজেপির প্রতীকে পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রদীপবাবুকে ব্লক সভাপতি না করা হলে তৃণমূলে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেবেন।
রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে ২১টি আসন। গত ভোটে তৃণমূল পেয়েছিল তিনটি। বিজেপি ১৭টি। একটিতে জিতেছিলেন নির্দল সদস্য। চিঠিতে সই করা সহ-সভাপতি, পাঁচ কর্মাধ্যক্ষ ও এক সদস্য জিতেছিলেন বিজেপির প্রতীকেই। তাঁরা দলবদল করায় নির্দল সদস্যের সমর্থন নিয়ে ওই সমিতিতে বোর্ড গড়তে পেরেছিল তৃণমূল। সাত জন ছেড়ে গেলে ওই সমিতিতে আবার সংখ্যালঘু হয়ে পড়তে পারে তৃণমূল। চিঠি পাওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি গুরুপদবাবু। তিনি বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর ১ ব্লকে কে সভাপতি হবেন, সেটা এখনও স্থির হয়নি। এই অবস্থায় রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষদের দাবি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজ্যই নেবে।”
রঘুনাথপুর ১ ব্লকে দীর্ঘ দিন ধরেই তৃণমূলের সভাপতি নেই। কাজকর্ম দেখেন রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি। দল সূত্রের খবর, সম্প্রতি বাবুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা এক পুরনো নেতা ব্লক সভাপতি হতে পারেন বলে জল্পনা শুরু হয়। তার পরেই, বুধবার গুরুপদবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁদের দাবি জানিয়ে আসেন পঞ্চায়েত সমিতির ওই সাত নেতা-নেত্রী। তাঁরা হলেন, সমিতির সহ-সভাপতি মমতা মণ্ডল, শিক্ষা, বন ও ভূমি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ নির্মল মাজি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ বিকাশ কর্মাধ্যক্ষ প্রাশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কর্মধ্যক্ষ সনাতন চট্টোপাধ্যায়, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ বিজয় বাউড়ি, নারী ও শিশু কল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ ঝর্না বাউড়ি এবং সমিতির সদস্য বাবলি বাউড়ি। বস্তুত, চিঠিতে সই রয়েছে সমিতির সভাপতি ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বাদ দিয়ে সমস্ত পদাধিকারীর। নির্মলবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থা মোটেই ভাল জায়গায় নেই এই ব্লকে। এই অবস্থায় দলকে ঘুরে দাঁড় করাতে প্রদীপবাবু ছাড়া কোনও বিকল্প নেই।” মমতাদেবী বলেন, ‘‘প্রদীপবাবুর কথা মতোই আমরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। তিনি সভাপতি না হলে আমরা দল ছাড়ার কথা ভাবব। সে কথা শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছি।” দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, তিনি তা-ই মেনে নেবেন বলে জানিয়ে প্রদীপবাবু বলছেন, ‘‘ব্লকে তৃণমূল কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সভাপতি নির্বাচনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দলের উচিত, নেতা কর্মী ও পুরনো কর্মীদের সঙ্গে কথা বলা। তাঁরা কাকে নেতৃত্বে চাইছেন, সেটা জানা। না হলে ব্লকে সংগঠনের অবস্থা খারাপ হবে।”