অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া ওষুধ দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল এলাকায়। মঙ্গলবার সকালে রঘুনাথপুর শহরের আট নম্বর ওয়ার্ডের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘটনা। অভিযোগ, ওই কেন্দ্রে আড়াই বছরের শিশুকে মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া ভিটামিন সিরাপ দিয়েছিলেন চিকিৎসক সৌগত দাস।
স্কুল হেল্থ প্রোগ্রামের রঘুনাথপুর ১ ব্লকের মেডিক্যাল অফিসার সৌগতবাবু। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকের ১৮১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং ১৯০টি স্কুলের দায়িত্ব রয়েছে সৌগতবাবুর উপরে। বছরভর সেই অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র এবং স্কুলগুলিতে গিয়ে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন তিনি। কোনও শিশু অপুষ্টিতে ভুগলে, কারও কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেন তিনি।
মঙ্গলবার সৌগতবাবু শহরের ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটিতে গিয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মজুমদার জানান, মেয়ের জ্বর হওয়ায় তাকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফেরার পরে তাঁরা দেখেন সেটির মেয়াদ চার মাস আগেই পেরিয়ে গিয়েছে। তৎক্ষণাৎ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যান স্বপনবাবু। ততক্ষণে চিকিৎসক সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা বিষয়টি ফোনে সৌগতবাবুকে জানান। তিনি তৎক্ষণাৎ ওষুধ না খাওয়ানোর নির্দেশ দেন। বিষয়টি ব্লকের সিডিপিও অর্চনা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানানো হয়।
কিন্তু ওষুধটি দেওয়া হয়েছিল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে থেকেই। সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের রঘুনাথপুর ১ ব্লক কার্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিটামিন সিরাপ, জ্বর, সর্দি, কাশি, কাটাছেঁড়ায় লাগানোর ওষুধ-সহ প্রায় সতেরোটি ওষুধের একটি কিট প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে দেওয়া হয়। সেগুলি ব্যবহারের বিধি প্রশিক্ষণ দিয়ে কেন্দ্রের কর্মীদের শেখানো হয়। স্কুল হেলথ প্রোগ্রামের মেডিক্যাল অফিসার শিবিরে এলে প্রয়োজনে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের থেকে ওষুধ চেয়ে অসুস্থ শিশুদের দেন।
তবে মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া ওষুধ দেওয়া একান্তই তাঁরই ভুল বলে দাবি করেছেন সৌগতবাবু। এ দিন তিনি ফোনে বলেন, ‘‘অসাবধানে মেয়াদ পেরোনো ওষুধ দিয়ে ফেলেছি। ওই শিশুটিকে জ্বর আর কাশির ওষুধ দিয়েছিলাম। সেগুলির মেয়াদ ঠিক ছিল। তা দেখে ভিটামিন সিরাপের বোতল ভাল ভাবে পরীক্ষা করিনি। অনিচ্ছাকৃত হলেও অস্বীকার করা যাচ্ছে না, এটা আমারই ভুল।’’
এ দিন সাম্প্রতিক কালে আসা কিটের বদলে পুরনো কিটের থেকে ভুল বশত ওষুধ দেওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে অনেকে মনে করছেন। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের সিডিপিও অর্চনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অসুস্থ থাকায় এ দিন অফিসে যেতে পারিনি। তবে ঘটনাটি শোনার পরেই কিটের সমস্ত ওষুধের মেয়াদ পরীক্ষা করে দেখার জন্য সুপারভাইজার ও কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি।”
পাশাপাশি এই ঘটনায় ওই কেন্দ্রের কর্মীদের কোনও গাফিলতি ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে অর্চনাদেবী জানান।