কাজলের অনুগামীদের মারধর করার অভিযোগ। — ফাইল চিত্র।
তৃণমূল নেতা কাজল শেখের অনুগামীদের মারধরের অভিযোগ উঠল দলেরই অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে দলের ওই গোষ্ঠী। তবে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ঘটনায় ফের দলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল বলে মনে করা হচ্ছে। এ নিয়ে তৃণমূলের জেলা নেতাদের কেউ মন্তব্য করতে চাননি। তবে, কাজলের দাবি, দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সদ্য তৃণমূলের কোর কমিটিতে জায়গা পাওয়া কাজল শেখের নির্দেশে মঙ্গলবার রাতে তৃণমূলের কয়েক জন কর্মী নিজেদের মধ্যে রূপপুর অঞ্চলে একটি বৈঠক করেন। অন্য গোষ্ঠীকে না জানিয়ে কেন তাঁরা এই বৈঠক করলেন, সেই আক্রোশে কাজল-অনুগামী শেখ সেন্টু ও শেখ আলমকে বৈঠক শেষে রাস্তায় পেয়ে তৃণমূলের রূপপুর অঞ্চল সভাপতি অশোক প্রধানের নেতৃত্বে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এই অশোক রূপপুরের তৃণমূল নেতা শ্যামাপ্রসাদ ওরফে বাবু দাসের অনুগামী বলে পরিচিত। লাঠি, রড বাঁশ দিয়ে কাজলের অনুগামীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এক জনের মাথা ফাটে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শেখ রাকেশ নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রূপপুরে তাঁর ইট বালি পাথরের ব্যবসা রয়েছে।
প্রসঙ্গত মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশে কাজল সদ্য জেলা কোর কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। এর পর থেকেই দলের নেতা-কর্মীদের একাংশেদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন এই নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলের অন্দরে বলে সূত্রের খবর। এই আবহে কাজলের অনুগামীদের মারধরের ঘটনার পরে এলাকা আরও অশান্ত হবে কি না, তা নিয়ে চর্চা হচ্ছে।
শেখ সেন্টু,শেখ আলম বলেন, “কাজলদা কোর কমিটিতে জায়গার পাওয়ার পরে আমাদের গ্রাম বৈঠক করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মতো বৈঠক সেরে আমরা বাড়ি ফিরছিলাম। তখনই স্থানীয় অঞ্চল সভাপতির নেতৃত্বে আমাদের মারধর করা হয়, পরে আমাদের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। কাজলদার পাশে থেকে দল করার জন্যই আমাদের মারধর করা হয়েছে।” যদিও অঞ্চল সভাপতি অশোক প্রধান বলেন, “ওরা সবটাই মিথ্যা অভিযোগ করছে। ওরা যদি দল করে, আমাদের সঙ্গে করুক। অনেকবার তাদের বলেছি, কিন্তু শোনেনি।’’ তাঁর দাবি, পারিবারিক বিবাদকে সেন্টু। আলমেরা রাজনৈতিক বিবাদে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁরা বলছেন কাজল অনুগামীদের মারধর করা হয়েছে। এটাও ঠিক নয়। অশোকের কথায়, ‘‘কারণ কাজল আমাদেরই জেলা নেতৃত্বের এক জন।”
এ প্রসঙ্গে এ দিন কীর্ণাহারে কাজল বলেন, ‘‘আমাদের কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। সব সংবাদমাধ্যমের সৃষ্টি।’’ পাশাপাশি তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনার জন্য পূর্ণাঙ্গ ব্লক এবং পঞ্চায়েত কমিটি গড়া হবে। বেচাল দেখলে ছেড়ে কথা বলব না।’’
এ দিন কীর্ণাহারের দাসকলগ্রাম- কড়েয়া ২ পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দিদির দূত কর্মসূচি ছিল। সেখানে কাজলের সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক বিধানচন্দ্র মাঝি , পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মধুসূদন পাল, নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য, অঞ্চল সভাপতি বরকতুল্লা শেখ। ওই কর্মসূচিতে বালিয়াড়া শিবমন্দির প্রাঙ্গণের কর্মিসভায় কাজল ফের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘কেউ দুর্নীতি করলে সে যেই হোক না কেন, তাকে সরিয়ে দেব। এটা আমার কথা নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা।’’
বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বোলপুর) সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের কটাক্ষ, ‘‘সংবাদমাধ্যমে প্রচার পাওয়ার জন্য ওই সব কথা বলা হচ্ছে। ক’জন দুর্নীতিগ্রস্তকে তাড়ানো হয়েছে সেই হিসাবটা (কাজল) দিক আগে।’’