মাস তিনেক আগে ইলামবাজারের জয়দেব থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল লোকশিল্পীদের ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরি হবে।
শুধুমাত্র সরকারি অনুষ্ঠান নয়, ডেটাব্যাঙ্ক তৈরি হলে নথিবদ্ধ শিল্পীরা যাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত ডাক পান এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে ওঠেন— সেটাই উদ্দেশ্য ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর জানিয়েছে, কাজ সম্পূর্ণ না হলেও সেই কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। এ বার সেই একই ব্লকের জনা পঞ্চাশেক বাউল ও লোকশিল্পীদের নিয়ে সমবায় গঠন করে মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনার সহায়ক পদক্ষেপ নিল জেলা সমবায় দফতর। লোক শিল্পীদের মধ্যে যাতে স্বল্প সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠে এবং অসময়ে সেই সঞ্চিত অর্থ নিজেদের কাজে লাগে সেই উদ্দেশ্যই সমবায় গঠন, বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দফতর।
জেলা সমবায় দফতর সূত্রে খবর, সোমবারই কবি জয়দেব বাউল ও লোকশিল্পী উন্নয়ন সমবায় সমিতি নামে শিল্পী সমবায়টির রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া সমবায় মেলায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও যোগদান করেছিল সমবায়ের আটজন শিল্পীর একটি দল। কেন শিল্পীদের জন্য সমবায়?
দফতর জানাচ্ছে, লোকশিল্পীদের অনেকেই অত্যন্ত গরীব। নথিবদ্ধ শিল্পীরা সরকারি অনুষ্ঠান, মাসে হাজার টাকা ভাতা পেলেও এমন অনেকে আছেন যাঁরা নিয়মিত অনুষ্ঠানে ডাক পান না। অধিকাংশ শিল্পীরই ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করার অভ্যাস নেই। সমবায় গড়ার পিছনে মূল উদ্দেশ্য হল সেটাই। এই সমবায় গঠিত হয়েছে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের নথিবদ্ধ শিল্পীদের দিয়েই। শিল্পীরা প্রতিমাসে যে যতটুকু পারবেন জমা করবেন। সেই টাকা ব্যাঙ্কে জমা হলে সময়মতো তুলে যেমন নিজেদের কাজে লাগাতে পারবেন তেমনই অন্যশিল্পী অসুবিধায় পড়লে সকলের সঞ্চিত অর্থের ফান্ড থেকে তুলনায় স্বল্পসুদে ঋণ পেতে পারেন। এমনকী কারও প্রয়োজনে ব্যাঙ্ক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করবে সমিতি। যেভাবে স্বনির্ভর দলগুলি চলে।
জেলা সমবায় সমিতির উপনিয়ামক কৃষ্ণকান্ত সরকার বলেন, ‘‘এখানেই থেমে থাকা নয়, দ্রুত ওই লোকশিল্পীদের সমবায়ে নথিবদ্ধ সদস্যদের প্রত্যেকের প্রোফাইল দিয়ে একটা ওয়েবসাইট বানানোর কাজেও হাত দেওয়া হচ্ছে। সাইটে ঢুকে যে কেউ শিল্পীদের জন্য অনুষ্ঠানের বরাত দিতে পারবেন।’’
কী বলছেন শিল্পীরা?
মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর সমবায় মেলায় অনুষ্ঠানে করে আসা শিল্পীদের মধ্যে রণজিৎকুমার হাজরা, মনোতোষ আঁকুড়ে, সঞ্জয় ঘোষেরা বলছেন খুব ভাল উদ্যোগ। শেখ নাজিমউদ্দিন যিনি লোকশিল্পী হওয়ার পাশাপাশি ইলামবাজারের একটি সমবায়ের ম্যানেজারও। বলছেন, ‘‘সমবায় নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে এলেও গরিব শিল্পীদের আর্থিক স্থিরতা দিতে এর জুড়ি নেই। বর্তমানে মাত্র ৫০জন সদস্য, পরে সংখ্যাটা বাড়বে। প্রত্যেকে টাকা জামালে একদিন বিশাল অঙ্কের একটা ফাণ্ড তৈরি হবে উপকৃত হবেন সকলেই।’’
জয়দেবের প্রতিষ্ঠিত বাউল লক্ষণদাস বাউল তারক দাস বাউলরাও সমবায়ের সদস্য হয়েছেন। দফতরের উদ্যোগের প্রশংসা করছেন তাঁরাও। বলছেন, সঞ্চয় হলে আমাদেরই ভাল। আমরা অনুষ্ঠান পাই। যাঁরা তুলনায় কম পান তাঁরাও উপকৃত হবেন। প্রসঙ্গত বড় অঙ্কের খেলাফি ঋণের অনাদায় থাকায় রিজার্ভব্যাঙ্কের ছাড়পত্র হারিয়ে বছর দেড়েক বন্ধ ছিল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। এখন ফের ছাড়পত্র পেলেও জেলায় সমবায় আন্দোলন বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। সেই সময়কাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থ কোনও গ্রাহক তুলতে এবং ঋণ নিতে পারেননি। এখানে কী তেমন কোনও শংসয় রয়েছে? দফতরের কর্তারা বলছেন, ‘‘এখন তো সব স্বাভবিক। তবে সবাবায় ব্যাঙ্কেই টাকা রাখতে হবে বাধ্যবাধকতা নেই। কোনও রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্কে শিল্পীদের কো-অপারেটিভ সোসাইটি তাদের গচ্ছিত টাকা জমা রাখেতে পারবেন।’’