এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি শাসকদলের। বিধানসভা ভোটে বড় ব্যবধানে বিরোধীরা পরাজিত হয়েছে তৃণমূলের কাছে। এ হেন পুরুলিয়ার কাশীপুরের এক সমবায় সমিতির নির্বাচনে জোটের কাছে সমস্ত আসনে হারল তৃণমূল।
এমন উলটপুরাণ ঘটেছে কাশীপুর ব্লকের সোনাথলী পঞ্চায়েতের কাশীপুর বৃহদায়তন ক্রেডিট সমবায় সমিতিতে। জেলার তাঁতশিল্পীদের অন্যতম বড় এই সমবায়ের পরিচালন সমিতির নির্বাচন হয় শনিবার। ফল বেরনোর পরে দেখা যায়, সমবায়ের ছ’টি আসনের সব ক’টিতেই পর্যুদস্ত হয়েছে শাসকদল। সিপিএম ও কংগ্রেস এখানেও সমঝোতার ভিত্তিতে লড়েছিল। বিরোধী প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের অর্ধেকের সামান্য বেশি ভোট পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। প্রতিটি আসনেই বড় ব্যবধানে হেরেছেন তাঁরা। সমবায়ের ভোটে কেন এই হাল হয়েছে, খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন তৃণমূলের ব্লক নেতৃত্ব।
সোনাথলী পঞ্চায়েত এলাকার এই সমবায়টি অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই সিপিএমের দখলে। সমবায়ের সদস্য সংখ্যা ৮৫৮। শনিবার ভোট দিয়েছেন ৬৯৪ জন সদস্য। কেন শোচনীয় হার হল শাসকদলের?
সমবায়ের অনেক দিনের সদস্য, এবারেও জয়ী সিপিএমের প্রার্থী নিত্যানন্দ মণ্ডলের দাবি, তাঁরা সমবায় সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করে এসেছেন। তৃণমূলকে জিতিয়ে সমবায় পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হোক, চাননি সদস্যেরা। তাই জোটের পক্ষেই মত দিয়েছেন বেশির ভাগ ভোটার। তিনি বলেন, ‘‘সমবায়ের বর্তমানে মূলধন ১০ কোটির টাকার বেশি। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় আমরা এই মূলধন তৈরি করতে পেরেছি। যার মাধ্যমে সদস্যদের স্বনির্ভর করতে ধারাবাহিক ভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয়। স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়া হয়। আমাদের কাজকর্মের প্রতি আস্থা রেখেছেন সদস্যেরা।” এরই পাশাপাশি এ বার কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে ‘প্রগতিশীল জোট’ নাম দিয়ে ভোটে লড়ার ফায়দাও পেয়েছে সিপিএম। তৃণমূল বিরোধী ভোট যাতে ভাগাভাগি না হয়, সেটা নিশ্চিত করতেই কংগ্রেসের হাত ধরেছিল সিপিএম। একটি আসন কংগ্রেসকে ছেড়েছিল তারা। সমঝোতার কৌশল যে কাজে দিয়েছে, ভোটের ফলেই তা পরিষ্কার।
এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একাংশ অবশ্য বলছেন, সমবায়ে তাঁদের দলের হারের পিছনে কিছুটা হলেও স্থানীয় সোনাথলী পঞ্চায়েত পরিচালনায় দলের বিরুদ্ধে এলাকারবাসীর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বিজয়ী প্রার্থীরাও মনে করছেন, তৃণমূলের দখলে থাকা পঞ্চায়েত নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। তার প্রভাব সমবায়ের নির্বাচনে পড়েছে। এ কথা আড়ালে মেনেছেন তৃণমূল নেতৃক্বের একাংশও। ওই এলাকায় সাংগঠনিক রদবদলেরও ইঙ্গিত মিলেছে।
তবে প্রকাশ্যে সিপিএমের দখলে থাকা সমবায়ে ফের তাদের জেতার ঘটনাকে বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতারা। তাঁদের যুক্তি, সোনাথলী পঞ্চায়েতের যে এলাকার বাসিন্দারা সমবায়ের ভোটার, সেখানে এখনও সিপিএমের প্রভাব রয়েছে। পঞ্চায়েত, লোকসভা এমনকী বিধানসভাতেও ওই বুথে সিপিএম তৃণমূলের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘সোনাথলীর সমবায়ে এই প্রথম নির্বাচন হল। আগে সিপিএম ওখানে ভোটই করত না। সোনাথলীতে আমাদের শক্তিবৃদ্ধি হওয়ায় ভোটে যেতে বাধ্য হয়েছে পরিচালন সমিতি। আমাদের প্রাপ্ত ভোটেই পরিষ্কার, ওই এলাকায় আমাদের ভোট বেড়েছে।”