রবিবার সুলতানপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির সামনে মোতায়েন পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
সব রকম প্রস্তুতি ছিল। পুলিশও মোতায়েন ছিল। কিন্তু, রবিবার সেই নির্বাচনই হল না নলহাটি ১ ব্লকের সুলতানপুর কৃষি উন্নয়ন সমিতির সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটির।
দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার শনিবার বেশি রাতে নির্বাচন স্থগিত রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি করায় পিছিয়ে যায় নির্বাচন। এর ফলে প্রশাসন এবং রাজ্য শাসক দলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা। ভোট কবে হবে এবং সেই ভোটে তারা আদৌ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে কিনা, সংশয় থেকে গেল বিরোধী শিবিরের মধ্যে। তাদের অভিযোগ, ভোটের ফল ঘিরে সংশয় থাকার জন্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে শাসকদল নির্বাচন স্থগিত করিয়েছে। অভিযোগ মানতে চায়নি তৃণমূল।
জেলা সমবায় সমিতিগুলির সহকারী নিবন্ধক তথা সমবায় সমিতির নির্বাচনের রির্টানিং অফিসার কৃষ্ণকান্ত সরকারের দাবি, নির্বাচন ঘিরে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে— এই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই শনিবার রাতে ভোট স্থগিত রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচন স্থগিত রাখার বিষয়টি রাজ্য সমবায় নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে পরবর্তী নির্দেশ মতো কাজ হবে । আইন-শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘স্থানীয় থানা থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরেই নির্বাচন স্থগিত রাখার ব্যাপারে প্রশাসনকে জানানো হয়। এর বেশি কিছু পুলিশ সুপার হিসাবে আমার বলার নাই।’’
বিরোধীদের যদিও অভিযোগ, পঞ্চায়েতে ইচ্ছে থাকলেও শাসক দলের দাপটে তাঁরা প্রার্থী দিতে পারেননি। প্রতিবাদ করেও সুরাহা হয়নি। সেই অভিজ্ঞতা অনেক সমবায় সমিতির ভোটেও হয়। অনেক সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটির নির্বাচন কবে, শাসক দল তাদের জানতেই দেয় না বলেও বিরোধীদের দাবি। এমন পরিস্থতিতেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে যা হয়নি, নলহাটির ওই কৃষিউন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে তা হচ্ছিল। এক কথায়, ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। পরিচালন সমিতির ৬টি আসনে মোট ১৫ জন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থী ৬ জন। বাম গণতান্ত্রিক জোট সমর্থিত প্রার্থীর সংখ্যা ৫। আর বিজেপি সমর্থিত প্রার্থী ৪ জন।
নলহাটি ১ ব্লকের সমবায় পরিদর্শক সুকান্ত লাহা জানান, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচনের সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। রাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্বাচন স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। সুলতানপুর সমবায় সমিতির ম্যানেজার অসীম কুমার সেন জানান, রবিবার বেলা ১১টা থেকেআড়াইটে পর্যন্ত নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার রাতে রিটার্নিং অফিসারের বিজ্ঞপ্তি পেয়ে নির্দেশ অনুসারে নির্বাচন ক্ষেত্রের নির্বাচকদের মধ্যে রবিবার সকালে মাইকিং করে ভোট স্থগিত থাকার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নলহাটি ১ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন বাণীওড় পঞ্চায়েতের সুলতানপুর সমবায় সমিতিটি সুলতানপুর, সঙ্কেতপুর, বারশোড় ও সনাতনপুর গ্রাম নিয়ে গঠিত। অসীমবাবু জানান, সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬৬৮। পরিচালন সমিতির ৬টি আসনের মধ্যে ২টি মহিলা সংরক্ষিত, একটি তফসিলি জাতি সংরক্ষিত, বাকি তিনটি সাধারণ। মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া দিন ছিল ১২-১৪ নভেম্বর। ১৬ নভেম্বর ছিল মনোনয়ন পরীক্ষা করার দিন। ১৭ নভেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা টাঙানো হয়। তৃণমূল সব ক’টি আসনে প্রার্থী দিতে পারলেও বিরোধী বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল জোট এবং বিজেপি মোট ৬টি আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। তা সত্ত্বেও নির্বাচন স্থগিত হওয়ার জন্য শাসকদলকেই দুষছে বিজেপি এবং বামেরা।
নলহাটির বিজেপি নেতা অনিল সিংহের অভিযোগ, ‘‘হার নিশ্চিত বুঝে তৃণমূল পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচন স্থগিত করিয়েছে।’’ সিপিএম সমর্থিত বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী সৌভাগ্য মাল এবং সিপিএমের নলহাটি এরিয়া কমিটির সদস্য চন্দ্রকান্ত মালের বক্তব্য, পঞ্চায়েতে এলাকার মানুষ তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। তাই সমবায়ে এলাকার মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য একজোট হয়েছিলেন। কিন্তু শাসক দল হারবে বুঝে রাতারাতি বিজ্ঞপ্তি জারি করে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।
অভিযোগ অস্বীকার করে নলহাটি ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অশোক ঘোষের দাবি, ‘‘যা হয়েছে, পুলিশ প্রশাসনের সিদ্ধান্তে হয়েছে। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। ভোট হলে ৬-০ ফলে জিততামও।’’