বিকিকিনি: সোমবার বিষ্ণুপুর মেলায়। ছবি: শুভ্র মিত্র
বড়দিনের বিষ্ণুপুরে মেলায় উপচে পড়ল ভিড়। শহরে নামল পর্যটকের ঢল।
রবিবারের শহরে যে যানজট হয়েছে, সে কথা মাথায় রেখে সোমবার সকাল থেকে পুলিশকর্তারা বিশাল বাহিনী নিয়ে নেমে পড়েছিলেন রাস্তায়। তাতে কাজও হয়েছে। উধাও যানজট। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস জানান, রবিবার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত ২২ জন তরুণকে আটক করা হয়েছে বেপরোয়া মোটরবাইক চালানো এবং বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মেলা কমিটির সিসি ক্যামেরা তো আছেই, খোদ এসডিপিও এবং বিষ্ণুপুর থানার আইসি রাস্তায় নেমে নজরদারি চালাচ্ছেন।
এ দিকে বেশ কিছু দিন আগে থেকেই শহরের হোটেলগুলিতে তিল ঠাঁই আর নেই। শহরের হোটেল মালিক সংগঠনের সম্পাদক অসিত চন্দ বলেন, ‘‘শহর আর কী, আশপাশের হোটেলও খালি নেই।’’
এ বার প্রচুর পর্যটক এসেছেন মেলার বিষ্ণুপুরে। অনেকেই ছোট গাড়িতে এসেছেন। রাস্তাঘাট চেনা নয়। এ দিকে প্রশাসন বা পুরসভা— কেউই মন্দিরে যাওয়ার পথ নির্দেশ রাখেনি রাস্তায়। ফলে ব্যস্ত রাস্তায় চরকিপাক ঘুরতে হয়েছে অনেককে। উত্তরপাড়া থেকে সপরিবার এসেছেন কুন্তল দাস। জোড়বাংলা মন্দিরে পৌঁছেছেন দু’পা অন্তর দোকানে দোকানে জিজ্ঞাসা করে। বললেন, ‘‘শহরের রাস্তা তো বেশ ভাল। কিন্তু একটা রুট ম্যাপ, দিক্নির্দেশ— কিচ্ছু নেই। মুরলীমোহন মন্দির খুঁজে বের করতে যা ঝক্কিটা হল।’’
তবে মুশকিল আসান রয়েছে। গাইড। শেখ নজরুল শহরে অটো চালান। বললেন, ‘‘স্থানীয় ছেলে তো। বাইরে থেকে আসা লোকজনকে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছি। খাওয়ারও সময় পাচ্ছি না।’’ সরকারি হিসেবেই বড়দিনে রাসমঞ্চ দেখতে এসেছিলেন প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটক। ট্যুরিস্ট গাইড অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক অঞ্জন লাহা বলেন, ‘‘সকাল থেকেই মন্দিরগুলোয় পা ফেলার জায়গা নেই। এ দিকে বিকেল ৩টের পরে মেলার জন্য অনেকগুলো রাস্তা নো এন্ট্রি হয়ে যায়। একটু অসুবিধা হচ্ছে। তবে পর্যটকেরা মেলা দেখে বেজায় খুশি।’’
পর্যটকেরা খুশি আর রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে টেরাকোটার গয়না, পোড়ামাটির হাতি ঘোড়া। জোড়বাংলা মন্দিরের সামনে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন কাঞ্চন পাত্র , শোভন লায়েকরা। বললেন, ‘‘দু’দিন ভালই লাভ হয়েছে।’’ একগাল হেসে ডায়মন্ড হারবার থেকে তালপাতায় তৈরি ফুল নিয়ে আসা ভরত ভৌমিক জানালেন, তাঁরও বিক্রিবাটা হয়েছে ভালই।
মেলা কমিটি বেশ কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছে। সোমবার সকালে ছিল বসে আঁকো প্রতিযোগিতা। কচিকাঁচাদের উৎসাহ দিতে এসেছিলেন বিষ্ণুপুর মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নীলাঞ্জন তরফদার এবং জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস। এ ছাড়া এ দিন মেলায় অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, গায়ক মনোময় ভট্টাচার্য, নীপবীথি ঘোষ, অভিনেতা অঙ্কুশ ও সায়ন্তিকা।