হুকিংয়ের তারে শিশুর মৃত্যু, ক্ষোভ

মাটিতে পড়ে থাকা হুকিং-এর তারে পা পড়তেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক শিশুর। মৃতের নাম সূর্য সিংহ (৩)। শুক্রবার সকালে বাঁকুড়ার রাইপুর থানার গোলোর গ্রামের ঘটনা। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে। সূর্য রাইপুরে তার মামারবাড়িতে এসেছিল। মা সবিতা সিংহ গোলোর গ্রামের বাসিন্দা অন্ধ ওরফে মিশির সিংহের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাইপুর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৪৯
Share:

মাটিতে পড়ে থাকা হুকিং-এর তারে পা পড়তেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক শিশুর। মৃতের নাম সূর্য সিংহ (৩)। শুক্রবার সকালে বাঁকুড়ার রাইপুর থানার গোলোর গ্রামের ঘটনা। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে। সূর্য রাইপুরে তার মামারবাড়িতে এসেছিল। মা সবিতা সিংহ গোলোর গ্রামের বাসিন্দা অন্ধ ওরফে মিশির সিংহের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

Advertisement

ঘটনার পরেই বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির রাইপুর সরবরাহ কেন্দ্রের স্টেশন ম্যানেজার-সহ অন্য আধিকারিকেরা ওই গ্রামে যান। অন্ধ ওরফে মিশির সিংহের রাইপুর থানায় বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরের তরফে। চেষ্টা করেও অভিযুক্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর পরিবারের লোকেরাও বাড়িতে ছিলেন না। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন খাতড়ার এসডিপিও কল্যাণ সিংহরায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় সিংহের দু’জন ছেলে। সূর্য বড়। কয়েকদিন আগে দুই শিশুকে নিয়ে সঞ্জয়বাবুর স্ত্রী সবিতাদেবী গোলোর গ্রামে বাপেরবাড়িতে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ সূর্য মামারবাড়ি থেকে দু’টি বাড়ির পাশে তার দাদু ভৈরব সেনের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে চা বিস্কুট খেয়ে ফেরার পথে অন্ধ সিংহের বাড়ির সামনে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে পা পড়ে সূর্যর। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে রাইপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দেন। ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সবিতাদেবী। কাঁদতে কাঁদতেই তিনি বললেন, “সাত সকালে পাশেই আমার মামাবাড়িতে গিয়েছিল সূর্য। ফেরার সময় অন্ধ সিংহের বাড়িতে টানা হুকিং-এর তারে পা জড়িয়ে পড়ে যায়। ওকে পড়ে থাকতে দেখে আমরা সবাই ছুটে যায়। হুকিং-এর তার খুলে ছেলেকে উদ্ধার করা হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, পাশের বিদ্যুতের খুঁটি থেকে হুকিং করে কাজকর্ম করছিলেন অন্ধ। বাড়িতে যাতে কেউ ঢুকতে না পারে তার জন্য অন্ধ দরজার সামনে বিদ্যুতের তার ফেলে রেখেছিলেন।

প্রসঙ্গত, অন্ধের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে গ্রামেরই নয়ন বেরাকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে পুলিশের খাতায়। ইতিপূর্বে পুলিশ একাধিকবার তাঁকে গ্রেফতারও করেছিল। বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির রাইপুর সরবরাহ কেন্দ্রের স্টেশন ম্যানেজার গৌতম কালা বলেন, “এ দিন সকালে হুকিং তারে এক শিশুর মৃত্যুর পরেই গ্রামে গিয়ে সরজমিনে তদন্ত করা হয়েছে। মিশির ওরফে অন্ধ সিংহের বাড়িতে কোনও বৈধ বিদ্যুত সংযোগ নেই। তা সত্ত্বেও তিনি বাড়ির সামনের বিদ্যুতের খুঁটি থেকে সংযোগ নিয়ে দিব্যি ব্যবহার করছেন। প্রাথমিকভাবে প্রমান মেলার পরে অন্ধ সিংহের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।”

Advertisement

এই মৃত্যুর ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে ‘হুকিং’-এর রমরমা প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িতেই বেআইনিভাবে বিদ্যুত ব্যবহার করা হচ্ছে। রীতি মতো প্রকাশ্যে খুঁটি থেকে তার টেনে বাড়িতে নেওয়া যাওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের উদাসীনতায় রমরমিয়ে চলছে এই বিদ্যুৎ চুরি। প্রশাসনের এক আধিকারিক অবশ্য এই চুরির কথা মেনে নিয়ে বলেছেন, “স্থানীয় রাজনৈতিক মদতপুষ্ট হয়েই কিছু মানুষ বেআইনিভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। রাজনৈতিক চাপেই হুকিং-এর বিরুদ্ধে বড ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।” স্টেশন ম্যানেজার অবশ্য দাবি করেন, “খবর পেলেই হুকিং-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। বিদ্যুৎ চুরির সময় হাতেনাতে ধরে বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে। শীঘ্রই ফের অভিযান চালানো হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement